৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, দুয়ারে দুয়ারে বিচার চেয়ে ঘুরছে বাবা

ছয় বছরের এক শিশুর ওপর ঘটে যাওয়া ধর্ষণের বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শিশুটির পরিবার৷ পরিবার বলছে,পুলিশের পক্ষ থেকে মিলছে না তেমন কোনো সহযোগিতা৷ তবে পুলিশ বলছে, তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত আছে৷ অর্থের বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার ক্ষমতাবানরা চাপ প্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ করছে পরিবারটি৷

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ইদবারদী এলাকায় এই শিশুধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷

পরিবারের অভিযোগ, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাদের সন্তানকে মজা কিনে দেওয়ার কথা বলে ইদবারদী এলাকাসংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র পাড়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে একই এলাকার দেলোয়ার ওরফে দেলু(৪০)৷ আড়াইহাজার থানায় বিষয়টি জানিয়ে মামলা করতে গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে ‘আমরা দেখছি’ বলা হয়েছে এবং সাহায্যের চেয়ে ভোগান্তিই মিলেছে বেশি৷

শিশুটির পরিবার জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটা থেকে তাদের শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়৷ মেয়েকে কাঁদতে দেখে কারণ জানতে চাইলে সে শিশুসুলভ ভঙ্গীতেই তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মা-বাবাকে জানায়৷

পরদিন(২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় আড়াইহাজার থানায় গিয়ে তারা বিষয়টি জানায় এবং মামলা করতে চায়৷ তখন পরিবারকে সাথে নিয়েই দুইজন পুলিশ সদস্য ধর্ষক দেলোয়ারের বাড়িতে যায়৷ দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পুলিশ দেলোয়ারের দেখা পায়নি৷ এমনকি একপর্যায়ে দেলোয়ারের বাড়ির লোকেরা পুলিশকে ১০,৬০০ টাকা দেয়৷ শেষে পরিবারটিকে থানায় নিয়ে গিয়ে মামলা নেওয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে কাগজে সই নেন৷ এরপর পরিবারটি বাড়ি ফিরে যায়৷

এর পরের দিন(২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটায় তারা আবার থানায় গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) এম.এ. হক তাদের কাছে দশ হাজার টাকা চান৷ শিশুটির বাবা টাকা দিতে অক্ষমতার কথা বলেন৷ তবে তাদের সামর্থ্যে যতদূর সম্ভব দেবেন বললে পুলিশ সদস্যদের সাথে তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে পাঠান এবং অন্য কাউকে ঘটনার বিষয়ে কিছু না জানানোর নির্দেশ দেন৷ কোর্টে তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পুরো ঘটনা শোনার পর ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের এক কর্মকর্তা কাগজে সই করতে বলেন৷ পরে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশ পরিবারটিকে গাড়িতে ওঠায়৷ মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে থাকা পুলিশ বাহিনীর এক মহিলা সদস্যের কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায় আরেক পুলিশ সদস্য রফিউদ্দৌলা৷

এই রফিউদ্দৌলা আরিফার বাবাকে বলেন, বাড়িঘর ছাইড়া যাইস, যোগাযোগ রাখিস৷

রফিউদ্দৌলা তাদের এ বিষয়ে অন্য কারো সাথে পরামর্শ করতে নিষেধ করেন৷ সেদিনের মতো তারা বাড়ি ফেরেন৷ তার পরের দিন(২২ ফেব্রুয়ারি) এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ডের মেম্বার দিয়ে আপোসের চেষ্টা চালায় ধর্ষকপক্ষ৷ তরুণ বয়সের পাঁচ-ছয়জন লোক পাঠিয়ে পরিবারটিকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে৷ স্থানীয় মেম্বার শিশুটির বাবাকে তার বাড়ি যেতে বলেন৷ কিন্তু পুলিশ সদস্য রফিউদ্দৌলার কথা মনে করে সে যায়নি৷

পরের দিন(২৩ ফেব্রুয়ারি) ওই মেম্বার শিশুটির বাবাকে লোক পাঠিয়ে শাসায় ও হুমকি-ধমকি দেয়৷ তাকে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বলে৷ এর পরের দিন(২৩ ফেব্রুয়ারি) তলপেটে ব্যথাসহ শারীরিক যন্ত্রণার কারণে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবার৷ মুগদা হাসপাতালের নার্সদের পরামর্শে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(ঢামেক) নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারটি৷ পথে বঙ্গবাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের দেখা হয়৷ তাদের সহায়তায় তারা মেয়েকে ঢামেকে ভর্তি করেন৷

সোমবার(২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পুলিশ সদস্য রফিউদ্দৌলা ঢামেকে শিশুটিকে দেখতে আসেন৷ মেডিকেলে তিনদিন ভর্তি থাকার পর ফরেনসিক টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে ডাক্তার শিশুটিকে ছুটি দেয়৷ রিপোর্টটি থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে৷

অর্থ দাবি ও পুলিশের তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে৷ তাদের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে৷ মেয়েটির জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে,শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ তারা কোনো অর্থ দাবি করেননি৷ এটা ভুল তথ্য৷

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রফিউদ্দৌলা বলেন, আমরা আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি৷ আসামিকে ধরার চেষ্টা চলছে৷ পরিবারটিকেও আমরা সাহায্য করছি৷

পূর্ব পশ্চিম