খালেদা জিয়া জামিন পেলেই বলবে জনতার জয়ঃ ওবায়দুল কাদের

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেলেই দলটির নেতারা বলবেন, এটা জনতার রায়। আদালত রায় দিয়েছে এটা তো বলবে না।

আজ রোববার কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি আজ কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন প্রকল্পের গোমতী সেতুর সুপারস্ট্রাকচার কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তিনি সুইচ টিপে গোমতী সেতুর সুপারস্ট্রাকচার কাজের উদ্বোধন করেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হবে। এতে জনদুর্ভোগ কমবে। সময় সাশ্রয় হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না এটা তাদের সিদ্ধান্ত। তারা নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, এটা বিএনপির দল হিসেবে তাদের সিদ্ধান্ত। এই নির্বাচনে আসা না আসা- এ বিষয়ে সরকারের তো কোনো দায় নেই। তারা কি মনে করে যে এটা একটা সুযোগ? যে সুযোগ সরকার তাদের কাছে বিতরণ করবে? এটা তো কোনো সুযোগ নয়। এটা তাদের অধিকার। একটা রাজনৈতিক দল, নিবন্ধিত দল, নির্বাচনে অংশ নেওয়া, এটা তাদের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার। (আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন) আসবে কি? গতবার তারা আসেনি। এবারও তারা ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি ঘটাবে এটা তাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে সরকারের কোনো দায় নেই। তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না সেটা বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বেসামাল কথা তারাই বলে যাদের পায়ের তলায় মাটির জোর কম। যাদের ফাউন্ডেশন শক্ত তাদের বেসামাল কথা বলার প্রয়োজন নেই। বেগম জিয়ার গ্রেপ্তারের পরও তাদের আন্দোলনে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে না দেশের জনগণ। সেই সত্যটি উচ্চারণ করা বেসামাল বা বেপরোয়া উচ্চারণ নয়। আর এখানে গণতন্ত্রকে তারা রক্ষা করার আন্দোলন করছে, গণতন্ত্রের কোনো অসুবিধা নেই। গণতন্ত্র আছে এবং গণতন্ত্র চলছে। গণতন্ত্রের পাট হচ্ছে নির্বাচন। সেই নির্বাচনের কাজও যথারীতি এগিয়ে চলছে।’

খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রায়টা আদালতের বিষয়। আমি কিভাবে বলব রায় কী হবে? রায় কি সরকার দিচ্ছে? সরকার দিলে তো ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়টা এভাবে আসত না। সেই রায় কি আমাদের পক্ষে গেছে? এখানে বেগম জিয়া মুক্তি পেলে তখন জনগণের আন্দোলনের মুক্তি- তারা তো এটাই বলবে। জামিন পেলেই বলবে জনতার জয়। আদালত রায় দিয়েছে এটা তো বলবে না। এখন আদালতের রায়, জামিন হোক অথবা জামিন রিজেক্টেড হোক এটা আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার এ ব্যাপারে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এর পরেই গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন। সেইসঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড।

২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। তারা ১৫ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠাতে বলেন। ওই নথি পৌঁছানোর পরই জামিন নিয়ে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

জামিনের আদেশের জন্য আজ রোববার সকালে দিন ধার্য থাকলেও সে সময় পর্যন্ত নথি না আসায় আদেশ দেননি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আগামীকাল সোমবার দুপুর ২টায় রায় দেওয়া হবে বলে জানান তাঁরা। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ওই মামলার নথিটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হয়।

এনটিভি