বিয়ের ছয়দিনের মাথায় প্রেমিকের সাথে নববধূর বিয়ে দিলেন স্বামী

সুখ থেকে স্বস্তি ভাল। তাই বিয়ের ছয় দিনের মাথায় স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমিকের বিয়ে দিলেন স্বামী।

প্রেমিকের হাত ধরে সংসার করতে গেলেন বাসুদেবের ছ’দিনের স্ত্রী। বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উড়িশ্যা রাজ্যের রৌরকেলার সুন্দরগড় জেলার বরগাঁও ব্লকের পামারা গ্রামে।

নববিবাহিতা স্ত্রী ও প্রেমিকের গাঁটছড়া বেঁধে দিয়ে ইতিমধ্যেই হিরো বনে গিয়েছেন বাসুদেব টাপ্পো(২৮)। পামারা গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে বাসুদেব। চলতি মাসের চার তারিখেই সম্বন্ধ করে তাঁর বিয়ের আয়োজন হয়। কোনওরকম আইনি উপায় ছাড়া নির্বিঘ্নেই মিটেছিল বিয়ে। পার্শ্ববর্তী ঝারসুগুডার দেবদিহি গ্রামে নতুন শ্বশুরবাড়ি বাসুদেবের।

দিন কয়েক আগে তিন যুবক আসে বাসুদেবের বাড়িতে। তিনজনই জানান, তাঁরা নতুন বউমার দাদা। সানন্দে কুটুমদের বরণ করে নেয় টাপ্পো পরিবার। তিন অতিথির দুজন গ্রাম দেখতে বেরিয়ে গেলেও একজন বাড়িতেই থেকে যান। সেই সময় নববিবাহিতা যুবতী ছাড়া বাড়িতে কেউ ছিলেন না। এমতাবস্থায় অতিথি যুবকের সঙ্গে নতুন বউকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন প্রতিবেশী। সঙ্গে সঙ্গেই খবরটি চাউর হয়ে যায়। নতুন বউয়ের কীর্তি শুনে পাড়ার লোক চলে আসে টাপ্পোদের বাড়িতে। নতুন বউয়ের সম্মানহানি করায়, অতিথি যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়।

এদিকে প্রেমিকের হেনস্তা সহ্য করতে পারেননি ওই গৃহবধূ। ঘরের বাইরে এসে নিজেই জানিয়ে দেন আসল ঘটনা। বলেন, দুজনে বিয়ে করতে চাইলেও তাঁর বাড়ির লোকের সায় ছিল না। বাবা-মা নেই, দাদাদের কথার অবাধ্য হতে পারেননি তিনি। ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বাসুদেববাবুর সঙ্গে বিয়েটা হয়ে যায়।

এই খবর শুনে পরিকল্পনা ছকে নেন বাসুদেব। মনস্থ করেন স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমিকের বিয়ে দিয়ে দেবেন নিজেই। সেইমতো স্ত্রীর দাদাদেরও প্রেমিক যুবকের বাবা মাকে ডেকে পাঠান। গোটা ঘটনা খুলে বলেন। দুজনের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানান। এই বিয়ে হলে তিনটে জীবন বাকি দিনগুলো শান্তিতে থাকবে। তা জানাতে ভোলেননি। বাসুদেবের কথা ফেলতে পারেনি দুই পরিবার। দু’তরফই বিয়ের সিদ্ধান্তে সায় দেয়।

শনিবার নিয়ম মেনে নববিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমিকের গাঁটছড়া বেঁধে দেন বাসুদেব। প্রায় ১০০ অতিথি বিভ্রান্তের মতো ভোজ খেয়ে যায়। বিয়ে হলেও আইনি পদ্ধতির কোনও ব্যবস্থা ছিল না। একই সঙ্গে বড়দের তরফে কোনও আশীর্বাদই পায়নি নবদম্পতি। তবে স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রেমিকের বিয়ে দিতে পেরে নিশ্চিন্ত হয়েছেন বাসুদেব।

বাসুদেব জানান, ‘আমি যদি এই কাজ না করতাম, তাহলে তিনটি জীবন একসঙ্গে নষ্ট হয়ে যেত। এটাই একমাত্র সমাধানের রাস্তা ছিল। এখন আমাদের সবারই নিজের মতো করে সুখী হওয়ার রাস্তা তৈরি হয়ে গেল।’

ছেলের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন মা শনিবারি টাপ্পো। তাঁর দাবি, ‘এই সমাধানে পৌঁছানো না গেলে আমাদের জীবন অনেক বেশি জটিল হয়ে পড়ত।’

বাসুদেবের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রাম সরপঞ্চ গজেন্দ্র বাঘ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পারি, তখনই বুঝেছিলাম এই পরিস্থিতিতে ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাসুদেববাবু। তাই তিনি নিজের স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের আয়োজনে গ্রামবাসীর তরফেও সহযোগিতা পেয়েছেন।’

বাসুদেবের এরকম আচরণে মুগ্ধ তাঁর সাবেক স্ত্রী। প্রেমিক স্বামীকে সঙ্গে নিয়েই জানিয়ে গেলেন, এই অবদান কখনওই ভুলবেন না।