রবি’র ফোরজি সেবায় অভিনব প্রতারণা!

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার রাত ৮টার দিকে দেশে ফোরজি সেবা প্রথমবারের মত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু করেছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। তবে ফোরজি সেবা চালু করলেও তা এখনো বাংলাদেশের মানুষ উপাভোগ করতে পারছেনা পুরোপুরি।

দেশব্যাপী এ অধিকতর ইন্টারনেট স্পিড ও নিরবচ্ছিন্ন কাভারেজের লক্ষ্যে সম্প্রতি চতুর্থ প্রজন্মের টেলিকম সেবার (ফোর-জি) লাইসেন্স কেনার অন্যতম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড। তারা ফোর-জি উদ্বোধনের পরদিনই আকর্ষণীয় অফারের নামে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশের সব জেলায় থ্রি-জি’র দামেই ফোর-জি সেবা চালু করে।

কম খরচে ‘আকর্ষণীয়’ এই সেবা পেতে এরই মধ্যে গ্রাহকরা ফোর-জির দিকে ঝুঁকছেন। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও সেবার মান থ্রি-জির মধ্যেই আটকে আছে। এমন অভিযোগ তুলে অনেক গ্রাহক ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।

শুধু তাই নয় গ্রাহকদের অভিযোগ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর-জি লাইসেন্স নেওয়ার পর থেকে রবি বিজ্ঞাপনে প্রচার করছে ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি।

রবি মোবাইল ফোন অপারেটরটির দাবি, তাদের এই প্রযুক্তি অন্যান্যদের থেকে কিছুটা আপডেট। কিন্তু এ বিষয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে মোটেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং কেউ কেউ ‘বাফারিং’ যুক্ত নিউজফিডের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দিয়ে তীর্যক মন্তব্য করছেন।

বিটিআরসি জানিয়েছে ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি’র নামে রবি আসলে কি ধরনের সেবা দিচ্ছে তা পর্যালোচনা করা হবে।

রবির ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রাহক রাজধানীর বনানীর বাসিন্দা রাশেদ খান বলছেন, ‘ভেবেছিলাম গতি বাড়বে। তবে আসলে গতি বলতে কিছুই নেই।’ আর সেটারই প্রকাশ ঘটেছে গত ২ মার্চ ফেসবুকে দেওয়া তার এক স্ট্যাটাসে।

তিনি তার নিজের ফেসবুক ওয়ালের স্ক্রিনশট পোস্ট করে লিখেছেন- ‘রবি ৪. ৫ জি!’ আর ওই স্ক্রিনশর্টেই বাফারিংয়ের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।

ধানমন্ডির বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘১০০ টাকা খরচ করে ধানমন্ডির রবি সেন্টার থেকে সিম পাল্টে নিয়েছি। কিন্তু কোথাও ফোর-জি পাচ্ছি না। বরং অনেক জায়গায় টু-জি শো করছে।’

আরেক গ্রাহক আব্দুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘একটা পোস্ট করতে গিয়ে তিনবার রিট্রাই করে চতুর্থবারে পোস্ট হয়েছে। এর মধ্যে তিন থেকে চারবার রবি ৪.৫ জি’র বিজ্ঞাপন….’

রবির দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে ৬৪ জেলায় তাদের ফোর-জি সেবা চালু রয়েছে। সারাদেশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রবির ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি বিটিএসএর সংখ্যা ২৫০০। আর তাদের মতে, ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি ফোর-জি’র চেয়েও উন্নত প্রযুক্তি।

এবিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা যে প্রযুক্তির যাত্রা শুরু করেছি তা একটু অগ্রসরমান, যাকে বলা হয় ফোর-জি অ্যাডভান্স। আর ৪.৯ জি’কে বলা হয় এলটি এ্যাডভান্স। থ্রি-জিতেও আমাদের থ্রি পয়েন্ট ফাইভ-জি ছিল। আর ফোর-জিতেও আমরা ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি ব্রান্ডিং করছি।’

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স) ইকরাম কবির বলেন, ‘গ্রাহকের ডিজিটাল লাইফ স্টাইলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে রবি সবার আগে ৬৪ জেলায় ফোর-জি সেবা চালু করেছে। ফোর-জি সেবার জন্য গ্রাহকের ফোর-জি ব্যবহার উপযোগী হ্যান্ডসেট, সিম এবং কভারেজ থাকার প্রয়োজন। ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় থাকলে বাফারিংয়ের সম্ভাবনা নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবির এক কর্মকর্তা গ্রাহকেরা প্রতারণার অভিযোগ বিষয়ে বলেন, ‘তাদের অভিযোগ থাকলে তারা বিটিআরসিকে জানাতে পারে। রবি গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করছে না- বরং অন্য অপারেটগুলোর চেয়ে আধুনিক ও উন্নত সেবা দিচ্ছে।’

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘পূর্বেও রবি একই কাজ করেছে। সরকার যখন থ্রি-জি’র লাইসেন্স দিয়েছে, তখন তারা থ্রি পয়েন্ট ফাইভ জি বলে প্রচারণা চালিয়েছে। এখনও একই কাজ করছে। যেহেতু সরকার তাদের ফোর-জি’র লাইসেন্স দিয়েছে, হয়তো তাদের প্রযুক্তি একটু আপডেট হতে পারে- তবে তাদের এ ধরনের সেবা শুধু জনগণের সঙ্গেই নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গেও প্রতারণা।’

তবে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের মতে, রবি’র ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি সেবা দেওয়া যুক্তিযুক্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা ফোর জি’র লাইসেন্স দিয়েছি। আর ৪.৯৯ পর্যন্ত চতুর্থ প্রজন্মের সেবার মধ্যেই পড়ে। তাই তারা ৪.৫ জি সেবা দিতে পারে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সেবার মান খারাপ হওয়ার সঙ্গে নতুন প্রযুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের ভালো সেবা দিতে না পারার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, তা আমরা দূর করার চেষ্টা করছি। তবে সেবা ভালো না হওয়ার দায় কিন্তু অপারেটরদেরই।’

অন্যদিকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘রবির ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি’কে প্রথমত আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে ফোর-পয়েন্ট ফাইভ-জিতে তারা আসলে কী ধরনের সেবা দিচ্ছে, এটি আসলে আমি ঠিক জানি না। আমরা যে ফোর-জি’র লাইসেন্স দিয়েছি- তারা যে সেবা দিচ্ছে এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটছে কি-না, তা আমরা পর্যালোচনা করবো।