ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
আর কোনোদিন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে উঠব না: ওয়ার্নার বাংলাদেশ–লাগোয়া ধুবড়িতে ‘দুষ্কৃতকারীদের’ দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস ইসরায়েলি হামলায় ইরানের আরও দুই জেনারেল নিহত ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে: দুদু ইরানের পর এবার ইসরায়েলে রকেট হামলা চালালো আরেক মুসলিম দেশ! ইরানের পাশে দাঁড়াল ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য কফিনে শেষ পেরেক: প্রেসসচিব ইসরাইলি ‘আগ্রাসন’ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান এরদোয়ানের উত্তরায় র‍্যাব পরিচয়ে নগদ এজেন্টের টাকা ছিনতাই

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চেয়েও খারাপ ছিল দেশের অর্থনীতি”— জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১০:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
  • ৩০৯ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ১৬ বছরের লাগামহীন লুটপাট দেশের অর্থনীতিকে এমন ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে গেছে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবস্থাকেও হার মানায়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এই কঠোর মন্তব্য করেন।

অর্থনৈতিক ধ্বংস ও পুনর্গঠনের চিত্র তুলে ধরেন ড. ইউনূস

তিনি বলেন, “ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পর যখন আমরা দায়িত্ব নিই, তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভয়ংকর। ভয়ংকরভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিও এতটা খারাপ থাকে না, যতটা খারাপ করে দিয়েছে ১৬ বছরের লাগামহীন লুটপাটতন্ত্র।

তবে একই সঙ্গে তিনি আশার আলো দেখিয়ে বলেন, “শুধু ব্যাংক নয়, দেশের প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জনগণের আমানত এখন নিরাপদ। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।”

বিদেশি বিনিয়োগ ও রিজার্ভ পরিস্থিতি

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পতিত সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আয় নিজ দেশে নিতে দিচ্ছিল না, রিজার্ভ শূন্য হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আমরা সেই জট খুলে দিয়েছি। বর্তমানে রিজার্ভ ইতিবাচক অবস্থানে ফিরে এসেছে।”

বাজেট: প্রবৃদ্ধি নয়, মানুষের কল্যাণে জোর

এবারের বাজেট নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি বাজেট আগের বছরের চেয়ে ছোট হয়েছে। প্রথাগত অবকাঠামোকেন্দ্রিক চিন্তা বাদ দিয়ে আমরা মানবিক ও জনকল্যাণমুখী বাজেট দিয়েছি।”

তিনি জানান, “এই বাজেটে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, শুধু ইট-বালুর উন্নয়ন নয়।

রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা

ড. ইউনূস বলেন, “নজরদারি বাড়ানোর ফলে রপ্তানি আয় বেড়েছে। প্রবাসী ভাইবোনেরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছেন। রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি জাতির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

দুর্নীতি দমন ও রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অর্থ পাচার রোধে আমরা কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানি দায় পরিশোধের ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমেছে।”

সবচেয়ে বড় কাঠামোগত সংস্কার হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন— ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’।

এই সিদ্ধান্তের ফলে:

  • বিশাল আকারের দুর্নীতি কমবে
  • রাজস্ব ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে
  • স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস পাবে
  • রাজস্ব আহরণের আওতা বাড়বে

সমাপ্তিতে জাতিকে আশ্বস্ত করেন ড. ইউনূস

তিনি বলেন, “যে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, আমরা তা পুনর্গঠনের পথে অনেকদূর এগিয়েছি। আমাদের এই পথচলা অব্যাহত থাকবে জনকল্যাণ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।”

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও মানবিক উন্নয়নকে সরকার পরিচালনার মূল দর্শন হিসেবে তুলে ধরেন।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আর কোনোদিন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে উঠব না: ওয়ার্নার

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চেয়েও খারাপ ছিল দেশের অর্থনীতি”— জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

আপডেট সময় ১০:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ১৬ বছরের লাগামহীন লুটপাট দেশের অর্থনীতিকে এমন ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে গেছে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবস্থাকেও হার মানায়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এই কঠোর মন্তব্য করেন।

অর্থনৈতিক ধ্বংস ও পুনর্গঠনের চিত্র তুলে ধরেন ড. ইউনূস

তিনি বলেন, “ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পর যখন আমরা দায়িত্ব নিই, তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভয়ংকর। ভয়ংকরভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিও এতটা খারাপ থাকে না, যতটা খারাপ করে দিয়েছে ১৬ বছরের লাগামহীন লুটপাটতন্ত্র।

তবে একই সঙ্গে তিনি আশার আলো দেখিয়ে বলেন, “শুধু ব্যাংক নয়, দেশের প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জনগণের আমানত এখন নিরাপদ। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।”

বিদেশি বিনিয়োগ ও রিজার্ভ পরিস্থিতি

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পতিত সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আয় নিজ দেশে নিতে দিচ্ছিল না, রিজার্ভ শূন্য হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আমরা সেই জট খুলে দিয়েছি। বর্তমানে রিজার্ভ ইতিবাচক অবস্থানে ফিরে এসেছে।”

বাজেট: প্রবৃদ্ধি নয়, মানুষের কল্যাণে জোর

এবারের বাজেট নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি বাজেট আগের বছরের চেয়ে ছোট হয়েছে। প্রথাগত অবকাঠামোকেন্দ্রিক চিন্তা বাদ দিয়ে আমরা মানবিক ও জনকল্যাণমুখী বাজেট দিয়েছি।”

তিনি জানান, “এই বাজেটে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, শুধু ইট-বালুর উন্নয়ন নয়।

রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারা

ড. ইউনূস বলেন, “নজরদারি বাড়ানোর ফলে রপ্তানি আয় বেড়েছে। প্রবাসী ভাইবোনেরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছেন। রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি জাতির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

দুর্নীতি দমন ও রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অর্থ পাচার রোধে আমরা কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানি দায় পরিশোধের ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমেছে।”

সবচেয়ে বড় কাঠামোগত সংস্কার হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন— ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’।

এই সিদ্ধান্তের ফলে:

  • বিশাল আকারের দুর্নীতি কমবে
  • রাজস্ব ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে
  • স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস পাবে
  • রাজস্ব আহরণের আওতা বাড়বে

সমাপ্তিতে জাতিকে আশ্বস্ত করেন ড. ইউনূস

তিনি বলেন, “যে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, আমরা তা পুনর্গঠনের পথে অনেকদূর এগিয়েছি। আমাদের এই পথচলা অব্যাহত থাকবে জনকল্যাণ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।”

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও মানবিক উন্নয়নকে সরকার পরিচালনার মূল দর্শন হিসেবে তুলে ধরেন।