মাত্র এক হাজার টাকায় নগ্নদেহ প্রদর্শন তরুণীদের!

রাত দেড়টা। রুমে আলো-আঁধারি পরিবেশ। গানের তালে শরীর প্রদর্শন করছেন স্বল্পবসনা তরুণী। মুখে কড়া মেকআপ। একটু পরপর ঘোষণা আসছে তার কণ্ঠে। বিকাশে হাজার টাকা দিলেই নগ্নদেহ দেখতে পাবে।দর্শকদের আহ্বান জানাচ্ছে, দ্রুত বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর জন্য। ঘোষণার মধ্যেই একটু পরপর পর্দার আড়ালে চলে যায় তরুণী। বিদেশে এমন ঘটনা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। তবে তা শুধুই ভার্চুয়াল জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিগো লাইভ নামে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেহ প্রদর্শন করছে বাংলাদেশের তরুণীরা। যার মাধ্যমে ফোন সেক্সে যুবকদের আকৃষ্ট করছে তারা। টাকার বিনিময়ে ইমো, হোয়াটস অ্যাপ কিংবা ভাইবারে হচ্ছে এই ফোন সেক্স। বিগো লাইভের মাধ্যমে এই যৌন ব্যবসার মূল টার্গেট প্রবাসীরা। টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে সাময়িক যৌন চাহিদা মেটাচ্ছে তারা। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি যুবকদের কাছে এই অ্যাপটি দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে।

ইন্টারনেট সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইন্টারনেট কোম্পানি বিগো টেকনোলজি ২০১৬ সালে বিগো লাইভ চালু করে থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডে বর্তমানে ‘অ্যাপল স্টোর’ ও ‘গুগল প্লে স্টোরে’ এই অ্যাপসটি র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে। থাইল্যান্ডে ভার্চুয়ালি যৌনতার বিস্তারে এই অ্যাপটি ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ইন্টারনেট সূত্রে জানা গেছে।

থাইল্যান্ডের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিগো লাইভ। বর্তমানে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী এই অ্যাপে সময় কাটাচ্ছে। যদিও অ্যাপটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের পর্নোগ্রাফী ও নগ্নতা বিগো লাইভে নিষিদ্ধ। এসব কর্মকাণ্ড ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট আইডি ব্যান হতে পারে। তাই এই অ্যাপে সরাসরি যৌন কার্যক্রম চলে না। এটি ব্যবহার করে মূলত যৌনতার ফাঁদ তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, বিগো লাইভ যৌন ব্যবসার একটি প্লাটফরম হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত বিগো লাইভের বেশির ভাগ আইডি ফলো করে দেখা গেছে, রাত বাড়লেই অশ্লীল কার্যকলাপে মেতে উঠছেন এসব ব্যবহারকারী। তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শত শত তরুণ-তরুণী।

জেসমিন পুনম, বেবি, ফারিহা, সুন্দরী রুমী, মেঘ বালিকা, অর্পিতা, ফ্রি কুইন, নীল সায়লা, অর্থি খান, শ্যামা চৌধুরী, কুমকুম, নিঝুম রাতের সুমি, রুপা, পুষ্প, জিনিয়া খান মিম, সোনালি কারিনা, হট গার্ল, মৌসুমি চৌধুরী এমন নামে বেনামে আইডি খুলে বিগো লাইভের মাধ্যমে অশ্লীল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি আইডিতে নারী বেশে প্রবাসীদের মনোরঞ্জন করছেন বাংলাদেশের হিজড়ারা। যাদের মূল টার্গেট প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি যুবকরা। বিগো লাইভে যারা নিজেকে প্রদর্শন করে তাদের বলা হয় ব্রডকাস্টার। লাইভ রুমে যারা দর্শক থাকে তাদের গেস্ট বলে। গ্রুপ করেও অনেক সময় একাধিক ব্যবহারকারী ব্রডকাস্ট করে থাকে। ব্রডাকাস্টাররা ইচ্ছেমতো গেস্টদের লাইভে সংযুক্ত করতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে বিগো লাইভে ব্রডকাস্টার ছিল সুন্দরী রুমি নামে এক হিজড়া। ওই সময় তার দর্শক ছিল ৮৯৩ জন। হিন্দি গানের তালে তালে শরীর দোলাতে থাকে রুমি। দর্শকরা একের পর এক অনুরোধ করতে থাকে তার কাপড় খুলতে। কিন্তু সুমি সেই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে তার ইনবক্সে ইমো নাম্বার দিতে আহ্বান জানায়। একপর্যায়ে যুবায়ের নামে এক যুবক নগ্ন হওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা অফার করে। কিন্তু সুমি জানায় বিগোতে নগ্ন হলে আইডি ব্যান হতে পারে। তাই ওই যুবককে ইনবক্সে যেতে বলে। একই সময়ে বিগো লাইভে ব্রডকাস্টার ছিল অর্পিতা। তার চেহারা না দেখা গেলেও কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল। লাইভ শেয়ার দাও, ইনবক্সে ইমো নম্বর দাও- বলে চিৎকার করছিল সে। চেহারা আড়াল করে ব্রডকাস্টে পাওয়া যায় রুপা নামে এক ব্রডকাস্টারকে।

লাইভে সে জানায় তার বয়স ২১, বাসা ঢাকায়। তার সঙ্গে যারা ফোন সেক্স করতে আগ্রহী তাদেরকে ইমো নম্বর ইনবক্স করতে বলে সে। এজন্য নিজের ফোন নম্বর লাইভে ব্রডকাস্ট করে সে। রুপা লাইভে জানায়, যারা ভালো মানুষ তারা যেন বিগোতে না আসে। তার বক্তব্য, ভালো হওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। এখন সমস্যায় পড়লে কেউ কাউকে সাহায্য করে না। এমনিতেই টাকা দিয়ে কেউ সাহায্য করবে না। তাই সে এই পথে টাকা উপার্জন করছে। রুপা আরো জানায়, তার পরিচয় সে একজন পতিতা। এটাই তার পেশা। এ সময় আলম খান নামে একজন কুয়েত প্রবাসী লাইভে যুক্ত হয়। সে রুপাকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করতে চায়। কিন্তু রুপা এই সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি আলম খান তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে জানায়, কোনোদিন সে বিয়ে করবে না।

এভাবে দেহ ব্যবসার মাধ্যমে নিজের উপার্জন করা অর্থে সংসার চালাতে চায় সে। পুষ্প নামে আরেক ব্রডকাস্টার নিজের মোবাইল নম্বর ব্রডকাস্ট করছিল। তার দাবি, বিগো লাইভে অনেক পুরুষ মেয়ে সেজে ব্যবসা করছে। তারা প্রতারক। নিজেকে আসল দাবি করে পুষ্প আরো বলে, যারা প্রতারণা করে তারা বিগো লাইভে নিয়মিত থাকে না। তাই সবাই যেন সতর্কতার সঙ্গে ফোন সেক্সের জন্য টাকা পাঠায়। হট গার্ল আইডি নিয়ে ব্রডকাস্টে ছিল এক হিজড়া। সে জানায়, তার বাসা ঢাকার লালবাগে। এক হাজার টাকা কেউ বিকাশ করলে লাইভ ছেড়ে সে তার সঙ্গে ফোন সেক্স করবে। বিগো লাইভে সবাই টাকা উপার্জন করে না। টাকা ছাড়াই অন্যদের মনোরঞ্জন করে সাভারের রাজাসনের জেসমিন পুনম।

পুনম জানায়, সে পেশায় একজন নর্তকি। বিভিন্ন পার্টি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সে নাচে। বিগো লাইভে তরুণদের বিনোদন দিচ্ছিল বেবি নামে আরেক তরুণী। সে জানায় তার বাসা মিরপুরে। লাইভে সে তরুণদের যুক্ত করে নানান রসালো আলাপ করছিল। তার সঙ্গে লাইভে আসার জন্য একের পর তরুণ লাইনে ছিল। তেমনি একজন গাজীপুরের টঙ্গি এলাকার ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি রঞ্জু। রঞ্জুকে লাইভে যুক্ত করে নানান রকম অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করছিল বেবি। বিগো লাইভে শুধু অশ্লীল কর্মকাণ্ড হয় তা নয়। অনেকে নিজের জীবনে গল্প শোনান। কেউ গান করে। আবার কেউ ধর্মীয় আলোচনা করে বা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে। আবার কেউ নীরব দর্শক হিসেবে ভিন্ন এক জগতে ডুব দেয়। সূত্র- মানবজমিন।