‘৩টি উদ্দেশ্য নিয়ে খালেদার বিরুদ্ধে অপপ্রচার’

‘কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি উদ্দেশ্যে সরকারের একটি মহল বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রথম উদ্দেশ্য- খালেদা জিয়া যাতে করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হতে না পারেন; দ্বিতীয় উদ্দেশ্য- আইনজীবীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সম্পর্কে মানুষের যাতে একটি বিষাদগার সৃষ্টি হয়।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এমনটাই বললেন ।

আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতির কক্ষে বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনারা জানেন নিয়মিতভাবে এবং নিয়ম অনুযায়ী রায়ের কপি পাওয়ার আবেদন করেছিলাম। সরকার প্রাথমিক অবস্থায় সে মোতাবেক কপি দিতে বিলম্ব করেছে। পাঁচ দিনের মধ্যে কপি দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ১২ থেকে ১৪ দিন লাগিয়েছে। তারপরও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের আইনজীবীরা আপিল দায়ের করেন। আপিল দায়ের করে আমরা হাইকোর্টে যে রুলস আছে, সে মোতাবেক আদালতে প্রাথমিকভাবে শুনানির জন্য আবেদন করেছি। আমাদের আবেদন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার তালিকায় ছিল এবং সেই মোতাবেক আমরা শুনানি করেছি। পরে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামিনের শুনানি রোববার ঠিক করা হয়।

জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এরপর রবিবার আবেদনটি জামিন শুনানির জন্য আসে। জামিন শুনানিতে দুদক এবং সরকার পক্ষের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাসহ কিছু রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেছেন, যেটা আমরা আশা করিনি। আমরা আশা করেছিলাম অ্যাটর্নি জেনারেল কিছু আইনের কথা বলবেন। কিন্তু সেখানে এমন সব কথা বলেছেন, যেটা সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কাছ থেকে দেশের মানুষ আশা করেনি। তারপরও আমরা আইনের শাসনে থাকতে এবং দেশের কথা চিন্তা করে, খালেদা জিয়ার জামিনের কথা চিন্তা করে—সেখানে অনেক সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনও রকম কথা বলিনি, যাতে আদালতের ভেতরে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। সেটাও আমরা মেনে নিয়েছি। এরপরে শুরু হয়েছে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে আইনজীবীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। আপনারা জানেন, সেখানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা ছিলেন। তার মধ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীকে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারিত রাখা হয়। তিনি শুধু সিনিয়রই নন, তিনি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল।’

তিনি বলেন, ‘এজন্য আমরা মনে করেছি, তিনি এ মামলায় শুনানি করবেন। সেখানে মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সিনিয়র আইনজীবীরা ছিলেন। বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক ছিলেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফও ছিলেন। তারপরও আমরা সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের কোনও প্রতিবাদ করেনি। কেন করিনি তার দুটি উদ্দেশ্য—এ মামলা নিয়ে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এবং আদালতকে তারা যাতে বিভ্রান্ত না করতে পারে। এ কারণে আমরা নীরব ছিলাম। এ নীরবতার মানে এই নয় যে আমাদের আইনজীবীরা আইন সম্পর্কে সচেতন নয় বা আইন সম্পর্কে তারা জ্ঞাত নয়। তাই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন করার মূল উদ্দেশ্য হলো আইনমন্ত্রীর বক্তব্য।’

জয়নুল বলেন, আমরা আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলতে চাই, এজে মোহাম্মদ আলী একজন সিনিয়র আইনজীবী, উনার (আইনমন্ত্রী) চাইতেও সিনিয়র আইনজীবী। আরও সিনিয়র আছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ আইনজীবীরা ট্রায়াল কোর্ট থেকেই এ মামলার সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই আইনমন্ত্রীর থেকেও সিনিয়র। এই সরকার খালেদা জিয়াকে সহসাই মুক্তি হতে দেবে না, এটা সরকারের দূরভিসন্ধি। তার কারণ, দেশের মানুষ মনে করে, খালেদা জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয়, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার তিনিই একমাত্র নেত্রী।