‘‘ইনশাআল্লাহ খালেদা জিয়া জনসমক্ষে বের হয়ে আসবেন’’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের বিষয়ে বলেছেন, ‘আমাদের বক্তব্য না শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশে আমরা ব্যথিত। এই আদালতের আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব? আমরা বর্ণনা করতে পারছি না।’

বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের আদেশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিতের আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি কমিশনকে (দুদক) লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন আদালত।

গতকাল মঙ্গলবার এক আবেদনের শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেননি চেম্বার আদালত; বরং এ বিষয়ে শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন চেম্বার আদালত।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আশা করি, রোববার দিন আদালত উভয় পক্ষকে শুনবেন। অতীতের নজিরগুলো লক্ষ রেখেই আজকে যে আদেশটি দিলেন, তা ভ্যাকেট করবেন। ইনশাআল্লাহ খালেদা জিয়া জনসমক্ষে বের হয়ে আসবেন।’

‘আমরা ধারণা করেছিলাম, চিরাচরিতভাবে আপিল বিভাগ যেটা করেন, উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনেন, তারপর আদেশ দেন। আজকের বিষয়টি হলো, আপিলটি দুদকের আইনজীবী উপস্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে বললেন যে, আগামী রোববার সিপি ফাইল করেন, জামিন আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।’

আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের কোনো বক্তব্য তিনি শুনলেন না। কোনোরকম আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবিলা করার জন্য ন্যূনতম সুযোগ আমাদের দিলেন না। না দিয়ে স্টে অর্ডার পাস করলেন।’

জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছি যে, মাননীয় আদালত আমাদের কথা না শুনে কোনো অর্ডার পাস এর আগে আমরা কখনো দেখি নাই। এতে করে পাবলিক পারসেপশন খারাপ প্রভাব ফেলবে। তিনি আমাদের কথা শুনলেন না। না শুনে বললেন, আগামী রোববার পর্যন্ত স্টে থাকবে। আগামী রোববার সিপি ফাইল করা হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমরা এই আদেশে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি, মানুষ ব্যথিত, মর্মাহত। আজকে কাজটি হলে বিচার বিভাগে। বিচার বিভাগ এর আগে এভাবে কখনো ছিল না। আজকের বিচার বিভাগের কাছ থেকে এটা আশা করি নাই। তার কারণ, আপনারা জানেন, এই ধরনের শর্ট সেন্টেন্সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কখনো ইন্টারফেয়ার করেন নাই। চেম্বারে স্টে না থাকার পরেও সেই মামলায় স্টে দিলেন।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি একটি কথা বলতে চেয়েছিলাম আদালতকে, আপনি যদি স্টে নাও দেন, তাহলেও খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। সরকার তাঁকে বের হতে দেবেন না। এরই মধ্যে তারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করে রেখেছে। এই অবস্থার মধ্যে যদি আপনারা স্টে দেন, তাহলে পাবলিক পারসেপশনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তারপরও আদালত আমাদের কথা শুনলেন না।’

‘আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, বিচার বিভাগ আমাদের বক্তব্য না শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই ধরনের আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশে আমরা ব্যথিত, এই আদালতের আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব। আমরা বর্ণনা করতে পারছি না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের একজন আইনজীবী গিয়াস উদ্দীন সাহেব, উনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, উনি দাঁড়িয়েছিলেন। তখন আদালত বলেছেন, আপনারা দাঁড়িয়ে থাকেন কেন? তিনিও বলেছেন, তার ব্যথা লেগেছে। এত বছর তিনি কখনো দেখেননি। তিনি বলেন, মাননীয় আদালত এটা অত্যন্ত নজিরবিহীন।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।