বল ট্যাম্পারিং কি, কেন করে, কিভাবে করে?

ক্রিকেট বিশ্ব তোলপাড় বল টেম্পারিং কাণ্ডে। ক্রিকেটের সফলতম দলটির এমন কাজে স্তম্ভিত সবাই। নিউল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে বল টেম্পারিং করে ধরা পড়ে যান অজি ক্রিকেটার ক্যামেরন বেনক্রাফট। এর ঘটনায় অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ এবং সহকারী অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের যোগসাজশের বিষয়টিও সামনে চলে আসে। কলঙ্ক মাথায় নিয়ে কেবল সমালোচনায় নয়, স্মিথ এবং ওয়ার্নারদের ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যেতে পারে এখানেই।

তাহলে এতো ঝুঁকি কেন নিলেন তারা?

তারআগে একটু জেনে নেয়া যাক বল টেম্পারিংটা আসলে কি?

ক্রিকেটের ৪২.৩ আইনে বলা আছে, বলের সিম এবং উপরিভাগে কৃত্রিম কোন বস্তু ব্যবহার করে কোন পরিবর্তন আনা যাবে না অথবা অসাধু সুবিধা পাওয়ার জন্য এমন কোন কৃত্রিম বস্তু ব্যবহার করা যাবে না যাতে বলের স্বাভাবিক চরিত্র নষ্ট হয়।

তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে ছাড় আছে ফিল্ডিং দলের জন্য। কোনো দল চাইলে বল চকচকে করতে পারবে কিন্তু সে জন্য কোনো কৃত্রিম বস্তু ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে খেলোয়াড়রা বল চকচকে করতে নিজেদের থুথুও ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অন্য কিছু ব্যবহার করতে পারবেন না।

বল ভিজে গেলে সেটা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে মুছেও নিতে পারবেন। বলে কাদা লেগে গেলে সেটা আম্পায়ারের গ্যাতসারে পরিস্কার করতে পারবেন। এছাড়া অন্য উপায়ে বলের অবস্থা পরিবর্তন করার যেকোনো চেষ্টাই বেআইনি এবং সেটিই বল টেম্পারিং হিসেবে বিবেচিত হবে। যেমন কোন খেলোয়াড় যদি বলটিকে মাঠের ঘাস অথবা মাটির সঙ্গে ঘসাসঘি করেন সেটাও টেম্পারিংয়ের পর্যায়ে পড়বে।

কিন্তু বল টেম্পারিং কিভাবে করে, আর কেনই বা করে?

ব্যানক্রাফট একটি সিরিশ কাগজ দিয়ে বলের উপরিভাগে ঘষেছেন। হলুদ রঙের ওই কাগজটি পরে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টাও করেছে তবে ক্যামেরার চোখ এড়াতে পারেননি তিনি।

২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু প্লেসি তার ট্রাউজারের জিপারে বল ঘষেছিলেন। আর ১৯৯৪ সালে মাইকেল অ্যাথারটন পকেটে বালু রেখে বল পরিচর্যা করে ধরা খেয়েছিলেন। এছাড়া দাঁত দিয়ে বল কামড়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি। বল চকচকে করতে থুথু ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও থুথুর কার্যকারিতা আরও বাড়াতে কৃত্রিম কিছু ব্যবহার করলে সেটি টেম্পারিংয়ের পর্যায়ে পড়ে। কিছুদিন আগে মুখে মিন্ট চুইংগাম চিবিয়ে বল চকচকে করায় শাস্তি পেয়েছিলেন ডু প্লেসি। এর আগে জহির খানের বিরুদ্ধে জেলি বিন ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিলো।

এসবই করা হয় বলের এক দিক রুক্ষ করার জন্য। বল পেলেই ফিল্ডাররা তাদের কাপড়ে (সাধারণ ট্রাউজারে) ঘষা শুরু করেন। আর এর কারণ ওই একটাই, বলের একদিক মসৃণ করে ফেলা।

থুতু ব্যবহার করে বলের এক দিক মসৃণ করার জন্য অনেক সময় দলগুলো বিশেষ কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তাঁদের দায়িত্বই থাকে বল পেলেই হাতের স্লিভ, ট্রাউজারের কোনা আর থুতু ব্যবহার করে ক্রমাগত বলের শুধু এক দিক চকচকে রাখা। এসব বৈধ কাজ।

অনেক সময় বলের সিম নখ দিয়ে খুঁটে একটু উঁচু করা হয়। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এটা করা হয় পেস বোলারদের বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য।

বল পুরোনো হয়ে গেলে সুইং পাওয়ার উপায় একটাই। সেটি হলো- বলের দুই দিকের পৃষ্ঠের মধ্যে পার্থক্য ব্যবহার করা। অর্থাৎ এক দিক যদি মসৃণ থাকে এবং অন্য দিক রুক্ষ থাকে, সেক্ষেত্রে দুই পৃষ্ঠের মধ্যে একটা চাপের পার্থক্য সৃষ্টি হয়। বল যখন বাতাস কেটে যায়, তখন মসৃণ অংশে বাতাস প্রায় নির্বিঘ্নে চলে যায়। কিন্তু রুক্ষ অংশের পৃষ্ঠে বাতাসের চাপটা অনেক বেশি হয়। এই দুই পৃষ্ঠের চাপের পার্থক্য যত বেশি থাকে, ততই সুইং বেশি পান বোলাররা।

সাধারণ সুইং পেতে চাইলে চকচকে অংশটা সামনে রেখে বল করেন পেসাররা। আর রিভার্স সুইং পেতে হলে রুক্ষ অংশটা রাখে সমনের দিকে। বল যত বেশি মসৃণ কিংবা রুক্ষ হবে, ততই সুবিধা ফিল্ডিং দলের জন্য। এ কারণেই বল চকচকে করা বা রুক্ষ করার জন্য বল টেম্পারিংয়ের মতো ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলে দলগুলো।

আর নখ দিয়ে খুঁটিয়ে সিম উঁচু করে তোলার উদ্দেশ্য হলো- বলের মূল সিম কিংবা পাশের সিম একটু উঁচু করতে পারলে বলে বাড়তি সুইং পাওয়া যায়। মূল সিমে কাজটা করলে স্বাভাবিক সুইংটা ভালো হয় আর পাশের সিমে একটু কারুকাজ করতে পারলে রিভার্স সুইংটা খেলে ভালো।