এমন চাপ নিয়ে আগে কি কখনো বল করেছিলেন সৌম্য?

বলে ৫ রান দরকার ভারতের। বাংলাদেশের দরকার ৪-এর নিচে যে কোনো কিছু! এমন চাপ নিয়ে কখনো কি বল করেছেন সৌম্য? বাংলাদেশের কোনো বোলার? আগে থেকে কি আরেকটু পরিকল্পনা করা যেতন না। এমন অনেক প্রশ্ন এখন ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশীদের মনে।

অবশ্য এটা ঠিক একটা ফাইনাল ম্যাচের যতটুকু উত্তেজনা দরকার ছিল পুরোটাই পেয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সহ পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। কেবল চোখের পানিটা বাংলাদেশের গ্যালাটিতে। ১৬৭ রানের লক্ষ্য, ফাইনালের মতো চাপের ম্যাচের যেন আদর্শ। ১৮০ কিংবা ২০০ হলে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকত, আবার ২০ রান কম হলে ভারত। উত্তেজনা জিইয়ে রাখতেই যেন বাংলাদেশ ঠিক মাপে মাপেই রানটা করেছিল!

ভারতের রান তাড়ার প্রতিটি পদক্ষেপও যেন ঠিক সেই মাপেই হলো। ঝোড়ো শুরুতে মাত্র ১৫ বলেই ৩২ রান ভারতের। বাংলাদেশের কাঁধগুলো মাত্র ঝুলতে শুরু করেছিল, এমন অবস্থায় আউট ধাওয়ান! রানটা নড়ার আগেই সুরেশ রায়না আউট। ৩২ রানে ২ উইকেট হারাল ভারত। বাংলাদেশই তো এগিয়ে গেল, তাই না?

ভুল, রোহিত শর্মা যে উইকেটে ছিলেন। চার-ছক্কা মারতে লাগলেন নিজের ইচ্ছা মতো, অন্য প্রান্তে তাঁকে অনুসরণ করলেন লোকেশ রাহুল। ১০ম ওভারেই তাই লক্ষ্যের অর্ধেক তুলে ফেলল ভারত। ২ উইকেটে ৮৩ রান, পরিষ্কার এগিয়ে ভারত। এমন অবস্থায় ওভারের তৃতীয় বলে রুবেলের বাউন্সার। হুক করতে গিয়ে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়লেন রাহুল। জমে উঠল ম্যাচটা।

ম্যাচটা তবু জমছিল না। ওই যে রোহিত যে আউটই হচ্ছিলেন না। ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি পেয়ে গেছেন, ইনিংসের ১০ ওভারও পেরিয়ে গেছে। ইনিংসের দ্বিতীয় ভাগেই যে বেশি ভয়ংকর এই ওপেনার। ১৪তম ওভারে তাই ম্যাচটা জমালেন নাজমুল ইসলাম। তাঁর সৃষ্ট নাগিন নাচটা বিখ্যাত হয়ে গেলেও পুরো টুর্নামেন্টে নাজমুলের উদ্‌যাপন দেখা যাচ্ছিল না। আগের চার ম্যাচে যে একটা উইকেটও পাননি! ফাইনালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা তাঁর ভাগ্যে ছিল বলেই হয়তো। লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহর কাছে ধরা পড়লেন রোহিত। ভারত তখন জয় থেকে ৬৯ রান দূরে, হাতে ৪০ বল।

এভাবেই চলল ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত। এক মুহূর্তে মনে হচ্ছে ভারতই জিতবে, পরের মুহূর্তেই বাংলাদেশ! সেটা বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন মোস্তাফিজ। ৩ ওভারে ৩৫ রান দরকার ছিল ভারতের। মোস্তাফিজ এলেন, প্রথম ৪ বলই ডট! পরের বলে ১ রান। শেষ বলে আউট মনিষ পান্ডে। ম্যাচ তো বাংলাদেশের!

কিন্তু রুবেলের ৩ বলেই আবারও ভারত ফেবারিট! প্রথম বলেই ছক্কা, পরের বলে চার, আবার ছক্কা! ১২ বলে ৩৪ রান থেকে ৯ বলে ১৮ রানের দূরত্বে ভারত। রুবেলের ওভারে এল ২২ রান। শেষ ওভারে মাত্র ১২ রান লাগবে ভারতের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ঠিক ১২ রানই দরকার ছিল। সমস্যা একটাই, বাংলাদেশের মূল বোলারদের আর কারও ওভার বাকি নেই!

সৌমের প্রথম বলটা ওয়াইড। ৬ বলে ১১ রান। ডট, ১। ৪ বলে ১০ রান! আবারও ১, ৩ বলে ৯ রান। চতুর্থ বলে দুর্ভাগ্যক্রমে ৪, ২ বলে ৫ রান। পরের বল, উড়িয়ে মারলেন শংকর। দুই ফিল্ডার ধাক্কা খেলেন, তবে বল হাতছাড়া হলো না। আউট! শেষ পর্যন্ত কার্তিকের এক ছক্কায় সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল!