‘খালেদা জিয়ার আপন বোনের কাজ করেছেন শেখ হাসিনা’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপন বোনের কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার আপন বোনের কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ গ্রেপ্তারের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ও তার দলের জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে এখন বিএনপির কর্মসূচিতে লোকজনের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এখন তাদের সভা-সমাবেশ করতে খালেদা জিয়াকে লাগে না।

বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং স্বৈরতন্ত্রে অবতরণ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অনুমতিও পাচ্ছে না।

বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে বিএনপির কিছু কিছু নেতা ভালো কথা বলেন। সরকারকে তারা বলেছেন, যতই উস্কানি দেন, আমরা কিন্তু সে উস্কানিতে পা দেব না। এ সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচন কমিশনের দুটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের বাধার কারণে ক্ষমতায় থেকেও তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেননি।

তিনি বলেন, আমরা আগে কখনও দেখিনি, উচ্চ আদালত জামিন বাতিল করে দেয়। সরকার এখানে এমন বলতে চাইছে যে, আমরা তো মামলা করিনি- মামলা করেছে দুদদ, সাজা দিয়েছেন আদালত আমরা কী করেছি। এ রকম মতলববাজ সরকার আর দেখিনি। রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারও সঙ্গে না গিয়ে আমরাই গণতন্ত্র ও নির্বাচনের একটি মোর্চা গড়ে তুলতে পারি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন দেশ দুর্দশায় পড়ে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানের ‘বিপুলা পৃথিবী’ গ্রন্থটি একবার পড়ে দেখার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সাফল্য দেশের সাধারণ মানুষের, সরকারের নয়। এ উত্তরণ রাতারাতি অর্জন নয়, একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া মাত্র। তিনি বলেন, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্যের হর্তাকর্তাদের নিয়ে উদযাপন করেছে সরকার।

সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেটা বাইরে থেকে দেখতে সুদৃশ্য ঘরের মতো কিন্তু ঘরটির ভেতরে কোনো পিলার নেই, যে কোনো সময় বিপদ হতে পারে। যেখানে মাথাপিছু আয়ের সূচক হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। তাই নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে, গণতান্ত্রিকভাবে শক্তিশালী না হয়ে কেবল সার্টিফিকেট দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের যে পরিস্থিতিতে আগামীদিনে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সঞ্চয়ের অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন। আগামীদিনে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশ এমন এক সংকটে পড়বে, যেখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম সবুজ বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি অর্জন ও সরকারের উদযাপন আসলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের একটি কার্ড। তবে এ কার্ড খেলে ভোটে খুব একটা লাভ হবে না। বরং এলডিসি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুনামীর পূর্বলক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, যাদের সাফল্য এ এলডিসিতে উত্তরণ প্রতিদিন সে সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করছে সরকার।

এলডিসিতে যুক্ত হয়ে সে লক্ষ্য ও স্বীকৃতি অর্জনের আগেই তা উদযাপন রীতিমতো হাস্যকর। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহি থাকে না আর উন্নয়ন বা সূচকের মান তৈরি হয় না। এ সময় তিনি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, নইলে বাংলাদেশে দ্রুতই একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটতে পারে। এর আগে ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং স্বৈরতন্ত্রে অবতরণ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করা হয়। সূত্র: মানবজমিন।