জর্মানকে উড়িয়ে দিয়ে শক্তির নমুনা দেখাল ব্রাজিল

গত বিশ্বকাপে জার্মানীর কাছে ৭-১ গোলে হারের পর যেন আরেকবার জার্মানীর বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়ার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। তারপর অলিম্পিক ও যুব বিশ্বকাপে জার্মানীকে হারালেও মুল দলের সাথে হারের সেই ক্ষতে যেন প্রলেপ পড়ছিলনা ব্রাজিলের।

অবশেষে সুযোগ এল ক্ষতে প্রলেপ দেয়ার। এবারো সেই বিশ্বকাপের মতই নেইমারকে ছাড়াই মাঠে নামল ব্রাজিল। সেই সাথে মাঠে নামল জার্মানীর মাটিতেই। আর ঘরের মাঠে জার্মানীকে নিয়ে এবার ছেলে খেলা করল ব্রাজিল। ম্যাচের ফলাফল হয়তো বলছেনা যে ম্যাচটা কতটা একতরফা ছিল। তবে ম্যাচে রীতিমত ব্রাজিলের সাম্বার ছন্দের কাছে পদে পদে পর্যদুস্ত হয়েছে জার্মান দুর্গ।

শুরুর দিকে অবশ্য কিছুটা এগিয়ে ছিল জার্মানী। ম্যাচের প্রথম আক্রমন করে জার্মানী। ১৭ মিনিটে ড্রাক্সেলারের পাস থেকে ডি বক্সের ভেতরে পোস্টের সামনেই বল পেয়েছিলেন জার্মান তারকা গুন্ডোগান। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে সুযোগ হারান তিনি।

ম্যাচের ২০ মিনিটে আরেকবার সুযোগ পায় জার্মানী। তবে এবার অফসাইডের ফাঁদে পড়েন গোমেজ। যদিও তার নেয়া দুর্বল শট থামাতে সমস্যাই হয়নি অ্যালিশনের।

পাল্টা আক্রমন থেকে পরের মিনিটে আবার আক্রমনে যায় ব্রাজিল। তবে এবার গ্যাব্রিয়েল জেসুস অফসাইডের ফাঁদে পড়েন। ২৫ মিনিটের মাথায আবারো আক্রমনে উঠে ব্রাজিল। তবে এবারো আক্রমনে পায়নি পূর্নতা।

ম্যাচের ২৮ মিনিটে সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পায় জার্মানী। এবার ৬গজ দূর থেকে লেগে থাকা থিয়াগো সিলভাকে ফাকি দিয়ে শট নিতে পারলেও সেটা বারের উ্পর দিয়ে উড়িয়ে মারেন গোমেজ।

ম্যাচের ৩৬ মিনিটে এবার দুর্দান্ত ভাবে বল নিয়ে দৌড়ে জার্মান ডি বক্সে চলে যান জেসুস। সেখানে গিয়ে দুইজনকে ছিটকে ফেলে পুরো একা হয়ে যান তিনি। তবুও কিভাবে যেন ডান পায়ের নেয়া শট গেল বারপোস্টের অনেক উচু দিয়ে। হতাশায় মুখ ধরে বসে পড়েন জেসুস। তবে হতাশা কাটাতেও সময় লাগেনি তার। পরের মিনিটেই গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন তিনি।

কৌতিনহো ও উইলিয়ানের পাস চালাচালির পর উইলিয়ান ক্রস করেন। সেই ক্রসে হেড করেন জেসুস। তার হেড থামিয়ে দিয়েছিল জার্মান গোলরক্শক ট্রাপ। কিন্তু হাত ফসকে বল চলে যায় গোললাইন অতিক্রম করে। তবে মাটির উপরে থাকা অবস্থায়ই বলকে আবারো ঠেলে আনার চেষ্টা করেন ট্রাপ। সেসময় আবার ব্রাজিলেরই এক তারকার হাতে লাগে। কিন্তু আগেই বল গোললাইন অতিক্রম করায় সেটিকে গোলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি এবং সেই সাথে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। প্রথমার্ধে এই এক গোলেই এগিয়ে ছিল ব্রাজিল।

দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানীর উপর প্রভাব বিস্তার করে খেলতে থাকে ব্রাজিল। এই অর্ধে জার্মানীকে কোন রকমের সুযোগই দেয়নি ব্রাজিলিয়ানরা। জার্মানীর মাটিতে জার্মানদের সাথেই যেন ছেলে খেলা করে কৌতিনহো উইলিয়ানরা।

ম্যাচের ৫৪ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর খুব কাছেই গিয়েছিল তারা। প্রথমে উইলিয়ান এবং পরে পাউলিনহোর জোড়া শট ঝাপিয়ে পড়ে রক্ষা করে জার্মানদের এ যাত্রায় বাঁচান গোলরক্ষক ট্রাপ।

২ মিনিট পরই আবারো কৌতিনহোর বিখ্যাত দুরপাল্লার শট বার পোস্টের সামান্য উপর দিয়ে বেড়িয়ে গেলে বেঁচে যায় জার্মানী। ম্যাচের ৬২ মিনিটে আক্রমনে যায় জার্মানী। তবে এবার ড্রাক্সেলারের শট পরাস্থ করতে পারেনি অ্যালিশনকে।

ম্যাচের ৭৮ মিনিটে আরেকবার জার্মান দুর্গে হানা দেয় কৌতিনহোর বদলি হয়ে নামা ডগলাস কস্তা। তবে এবার ডিবক্সের ভেতরে তাকে ফেলে দিয়ে জার্মানীকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন জার্মানীর এক তারকা। ৮৩ মিনিটে আরো একবার পাউলিনহোর শট জার্মান গোলরক্ষকের সরাসরি হাতে গেলে ব্যবধান বাড়ানো হয়নি ব্রাজিলের।

ম্যাচের ৮৪ ও ৮৬ মিনিটে পর পর দুটি আক্রমন করেছিল জার্মানী। তবে সেই আক্রমন থেকে হতাশাই হতে হয়েছে তাদের। ম্যাচের বাকিটা সময় আর কোন দল গোল করতে না পারলে ব্রাজিল ম্যাচটিতে জয় লাভ করে ১-০ গোলেই।

আর এই জয়ে অনেক দিনের জমানো ক্ষোভ যেন কিছুটা লাগব করার সুযোগ পেল সাম্বার দেশটি।

আর এই হারে অপরাজিত থাকার দীর্ঘ যাত্রার ইতি ঘটল জর্মানীর।