জাতীয় পার্টিতে দিনে দিনে বাড়ছে অস্বস্তি

বর্তমান জাতীয় সংসদে বহুরুপী ভুমিকা পালন করছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে (জাপা। তারা একদিকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীসভায় রয়েছে অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দলের ভুমিকা পালন করছে। সরকার-বিরোধী দুই অবস্থানে থেকে দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ করতে চলে। দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ এখনোও হাফ বছরের বেশী সময় রয়েছে। এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে (জাপা) অস্বস্তি তত বাড়ছে। জাপা নানা সময়ে স্ববিরোধী কথাবার্তা বলে পার্টিকে ‘হাস্যকর’ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অস্বস্তি বিরাজ করছে দলের সব পর্যায়ে।

জাতীয় পার্টির বক্তব্য এখন আর কেউ আমলে নিতে চায় না। সংসদে নিজেদের দ্বৈত অবস্থান এবং দলীয় নেতাদের বিভিন্ন সময়ে স্ববিরোধী বক্তব্যের কারণে নিজেরাই নিজেদের গুরুত্ব হারিয়েছেন। এসব করে গণমাধ্যমসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায়ই রসাত্মক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।

অনেকে বলছেন, সরকারি দলের কোনো সমালোচনা করার সময় দলটির নেতাকর্মীদের ‘সেলফ সেন্সরশিপে’র মুখোমুখি হতে হয়। কখনো কখনো সংসদে থাকা দলটির নেতাদের বক্তব্যের ভাষা শুনে মনে হয়, সরকারি দলের করুণায় আজ তারা সংসদে বসতে পেরেছেন। কারণ, মন্ত্রী থাকার কারণে সরকারের কড়া সমালোচনা করাও সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে।

জাতীয় সংসদের দুটি আসনে আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপনির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করছে জাতীয় পার্টি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে এ ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি। গাইবান্ধা-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের দুই সংসদ সদস্য মারা যাওয়ায় এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গতকাল রোববার জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুনেছি, সুন্দরগঞ্জের বাইরের লোক নির্বাচনী এলাকায় ঢুকেছে। তারা কেন্দ্র দখল করবে। এর আগের নির্বাচনগুলোতেও তারা এভাবে কেন্দ্র দখল করে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। এ নির্বাচনেও তারা সেটা করতে পারে। সিইসিকে আমরা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছি। এ দুটি নির্বাচনের ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বক্তব্যে কারা কেন্দ্র দখল করবে তা স্পষ্ট না করলেও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় তিনি কাদের ইঙ্গিত করে কথা বলেছেন। চার বছর ধরে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও সরকারি দলকে বাঁচিয়ে কথা বলতে হচ্ছে জাপা নেতাদের। এভাবেই একটা চাপা অস্বস্তি বয়ে বেড়াচ্ছেন দলটির ঊর্ধ্বতন নেতারা। সেই অস্বস্তি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ কর্মীদের মধ্যেও।

সর্বশেষ বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন, সরকার থেকে তার দলের মন্ত্রীদের বাদ দিতে, নইলে সবাইকে সরকারে নিয়ে নিতে।

তিনি বলেন, এভাবে তাদের নিয়ে টানাটানি তার ভালো লাগছে না। হয় সরকারি, নয় বিরোধী দল হওয়া দরকার ছিল তাদের। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, আমরা সরকারি, না বিরোধী দল? বিদেশে গেলে বলতে পারি না আমরা কী।

সে সময় প্রধানমন্ত্রীর করুণা ভিক্ষা চেয়ে রওশন বলেছেন, আপনি যদি বলতে পারতেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। আমরা বলতে পারি না। এটা আপনি করলে জাতীয় পার্টি বেঁচে যেত। সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারত। আমরা সম্মানের সঙ্গে নেই। এক বছর আছে আরও, বিষয়টা দেখেন।

বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টির এমপি রয়েছেন ৪০ জন। তাদের মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তিনজন। দলের চেয়ারম্যান আছেন মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।