জেনে নিন স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটের অতীত ইতিহাস

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বল টেম্পারিংয়ের দায়ে অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। একই অপরাধে ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন দেশটির ওপেনিং ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফট।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের এ নিষেধাজ্ঞায় তারা এ সময়ের মধ্যে কোন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারবেন না। অন্যদিকে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারি ঘটনায় ইতোমধ্যে ভারতের আইপিএল থেকেও স্মিথ ও ওয়ার্নারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে জানানো হয়েছে।

২০১০ সালে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটে সদ্য নেতৃত্ব হারানো স্টিভ স্মিথের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১১ সালে টেস্ট অভিষেক হয় ডেভিড ওয়ার্নারের। এছাড়া গত বছর নভেম্বরে নিজ মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটে ওপেনার ক্যামেরন ব্যানক্রফটের।

স্টিভ স্মিথ : জন্ম : ২ জুন, ১৯৮৯, সিডনি অস্ট্রেলিয়া। ২০১০ সালে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটে স্টিভ স্মিথের। অভিষেক ম্যাচে এক এবং ১২ রানের পাশাপাশি তিন উইকেট শিকার করেন তিনি। ডান হাতি স্পিনার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পেলেও পর্যায়ক্রমে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানে পরিণত হন স্মিথ। টেস্ট ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ৬৪ ম্যাচে ৬১ প্লাস গড়ে ২৩ সেঞ্চুরি এবং ২৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ মোট ৬,১৯৯ রান করেছেন তিনি। ইনজুরিতে পড়া মাইকেল ক্লার্কের জায়গায় ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার ৪৫তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

এক নাগারে সেঞ্চুরি হাকিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে রেকর্ড গড়েন তিনি। নিজ মাঠে ভারতের বিপক্ষে পর পর চার টেস্টে সেঞ্চুরি হাকিয়ে কিংবদন্তী ডন ব্র্যাডম্যান (ছয়টি), নেইল হার্ভে (৪), জ্যাক ফিংলেটন (৪) এবং ম্যাথু হেইডেন (৪) পাশে পাশে নিজের নাম তোলেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পর পর চার অথবা ততোধিক টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন এ পাঁচ খেলোয়াড়।২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-২ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ হারের পর ক্লার্ক অবসর নিলে স্মিথকে স্থায়ী অধিনায়ক নির্বাচন করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পর পর পাঁচ ম্যাচে পঞ্চাশের অধিক রান করে অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম শিরোপা লাভে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন স্মিথ।২০১৫ অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দলের সর্বোচ্চ ৫০৮ রান করেন তিনি। তবে ৩-১ ব্যাবধানে সিরিজ জয় করে ইংল্যান্ড।গত চার বর্ষপঞ্জীতে প্রতি বছরই টেস্ট ক্রিকেটে তিনি এক হাজারের বেশি রান করেছেন।২০১৭-১৮ অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ ৬৮৭ রানও করেন তিনি।২০১৫ এবং ২০১৭ সালে আইসিসির বর্ষ সেরা টেস্ট খেলোয়াড় নির্বাচিত হন স্মিথ।বর্তমানে আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে আছেন তিনি।

ডেভিড ওয়ার্নার : জন্ম : ২৭ অক্টোবর, ১৯৮৬, পেডিংটন, অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১১ সালে টেস্ট অভিষেক, ব্রিজবেন ম্যাচে দুই ইনিংসে তার রান যথাক্রমে ৩ ও ১২। প্রথম শ্রেণির কোন ম্যাচ না খেলেই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ১৩২ বছরের ইতিহাসেই তিনিই প্রথম খেলোয়াড়। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে।

আক্রমাণাত্মক ওপেনিং ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার এ পর্যন্ত ৭৪ টেস্টে ২১ সেঞ্চুরি ও ২৯ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৮.২০ গড়ে তিনি মোট ৬৩৬৩ রান করেছেন। হোবার্টে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজিত হওয়া ম্যাচে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন তিনি। ওয়াকা (ডব্লুএসিএ) মাঠে ২০১২ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এ ইনিংসের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে কম বল খেলে সেঞ্চুরি করার ক্ষেত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ন চন্দপলের সঙ্গে যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে বসেন তিনি।

ইংল্যান্ড সফরে ২০১৩ সালের জুন মাসে স্বাগতিক খেলোয়াড় জো রুটকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাকে বরখাস্ত ও ৮,৮৮২ ডলার আর্থিক জরিমানা করে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে টেস্ট ও ওয়ানডে ফর্মেটে অস্ট্রেরিয়ার সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন তিনি। আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ে তিনি বর্তমানে পঞ্চম স্থানে আছেন।

ক্যামেরন ব্যানক্রফট : জন্ম : ১৯ নভেম্বর, ১৯৯২, পার্থ অস্ট্রেলিয়া। গত বছর নভেম্বরে নিজ মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটে এ ওপেনারের। ব্রিজবেনে সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিনি যথাক্রমে ৫ এবং অপরাজিত ৮২ রান করেন। অস্ট্রেলিযা হয়ে এ পর্যন্ত ৮ টেস্টে প্রায় ৩১ গড়ে তিনি মোট ৪০২ রান করেছেন। তিনটি হাফ সেঞ্চুরি আছে তার। একটি মাত্র আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন তিনি, ২০১৬ সালে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে।

অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া শেফিল্ড শিল্ড টুর্নামেন্টে ২০১৪-১৫ মৌসুমে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার এ ব্যাটসম্যান। ৪৭ গড়ে তার মোট রান ছিল ৮৯৬। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরের জন্য টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৫-১৬ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডে ৪৫.৭৫ গড়ে তিনি মোট রান করেছেন ৭৩২।
ইংলিশ কাউন্টিতে ২০১৬ মৌসুমের প্রথম দিকে বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে তিনি গ্লস্টারশায়ারের হয়ে পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এ ওপেনিং ব্যাটসম্যান।