নেইমারকে ছাড়াই ব্রাজিল শক্তিশালী

টিভিতে যখন পিএসজির ম্যাচে নেইমারকে ব্যথা নিয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে দেখেন তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে যান ব্রাজিল কোচ টিটে। সাথে সাথেই তিনি বোর্ড কর্তাদের সাথে আলোচনা করে রাশিয়া ও জার্মানীর বিপক্ষে ম্যাচের জন্য দল ঘোষনার সময় পিছিয়ে দেন। এর এই স্কোয়াডটিই হয়তো হতে পারত রাশিয়া যাওয়ার আগে পূর্নাঙ্গ স্কোয়াডের একটা রুপ।

এদিকে ইনজুড়িতে পরার পর কোন ধরনের ভুল করেনি নেইমার। মারাত্মক এই ইনজুড়িতে পড়ে এখন অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই প্রসংগে নেইমারের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা লাসমার বলেন, নেইমার বিশ্বকাপ শুরুর কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পূর্বে ফিরতে পারবে মাঠে। সে প্রথম ম্যাচের জন্য পূর্ন ফিটই থাকবে। আর অপারেশনই সবচেয়ে সহজ উপায় এই ধরনের ইনজুড়ি থেকে তারাতারি সুস্থ হওয়ার।

এটা ব্রাজিলের জন্য সাপে বরও হতে পারে।এর আগে নেইমার যদি ম্যাচে না থাকত তাহলে ব্রাজিলকে স্বরুপে পাওয়া যেত না। ২০১৪ বিশ্বকাপের কথাই মনে করুন। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আঘাত পেয়ে দর্শক হয়ে যাওয়ার পর দলটির অবস্থাও হয়েছিল করুণ। জার্মানীর কাছে তো ৭-১ গোলে বিধ্বস্তই হয়েছিল তারা।

বর্তমানে ব্রাজিল দলটির অবস্থা তেমন নয়। নেইমার এখনো ব্রাজিলের সেরা তারকা । কিন্তু নেইমার ছাড়াও এই ব্রাজিল অনেক শক্তিশালী। এর একটা কারন হল, এর আগে নেইমার ইনজুড়ির পর ফ্রেড, হাল্ক, বার্নার্ডদের কাধে দায়িত্ব এসেছিল ব্রাজিলকে এগিয়ে নেয়ার। কিন্তু তারা পাড়েনি। আর তার পর এখন সেই দায়িত্ব কৌতিনহো, ফিরমিনো, জেসুসদের কাধে যারা এক একজন নিজ নিজ পজিশনে দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছে।

হ্যা, নেইমার ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকা কিন্তু এই দলটি তাকে ছাড়াও অনেক শক্তিশালী। ২০১৬ সালে টিটে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই শিক্ষা নিয়েছিলেন ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকে। সেই বিশ্বকাপে যা হয়েছিল তার যেন পুনরায় না ঘটে সেটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছেন তিনি সবার আগেই। যেখানে তিনি অনেকটাই সফল।

নেইমার বিহীন ব্রাজিল হয়তো ৪-২-৩-১ ফরম্যাটে খেলতে পারে। কিংবা ৪-১-৪-১ পজিশনে। অবধারিত ভাবেই নেইমারের পজিশনে আসবে কৌতিনহো। এর আগে টিটে বলেছিলেন, ব্রাজিল দলে শুধু ৮টি পজিশন খালি আছে। সেটা অবশ্য নেইমারের ইনজুড়ির আগে। তাই এই সময়ে তিনি হয়তো জুভেন্টাসের ডগলাস কস্তা কিংবা সাখতাররের তাইসনকে পরখ করে দেখতে পারেন।

এমন কোন প্লেয়ারের নাম কেউ বলতে পারবেনা যে নেইমারের অভাব পূরন করতে পারে। কৌশল কিংবা যেকোন কিছুতেই তার গুরুত্ব অপরিসীম। নেইমারকে নিয়ে ব্রাজিল ১৩ টি ম্যাচ খেলেছে টিটের অধিনে যেখানে একটি ম্যাচেও হারতে হয়নি তাদের। ১০টি ম্যাচে জিতেছে সেখানে ব্রাজিল। তাকে ছাড়া তিনটি জিতেছে ব্রাজিল এবং হেরেছে একটি ম্যাচে। কোয়ালিফাই ম্যাচে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা জেসুস। করেছে ৭টি গোল। কিন্তু নেইমার ৬টি গোলের সাথে সাথে ৭টি করেছে অ্যাসিস্ট।

একটি সেরা দল সব সময় তার সেরা খেলোয়ারের উপর নির্ভর করে। কথাটি বলেছিলেন পাউলো ভিনিসিয়া কোহেলো যিনি ব্রাজিলের অন্যতম সেরা স্পোর্টস বিশেষজ্ঞ। কিন্তু এই মুহুর্তে পরিস্থিতি ভিন্ন। এর উদাহরন হতে পারে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। আবার ২০১৪ বিশ্বকাপে উদাহরন হতে পারে জার্মানী তারা দলীয় ভাবেই শিরোপা জিতেছিল কোন সুপারস্টার ছাড়াই।

কৌশলগত ভাবে নেইমারের অনুপুস্থিতি ব্রাজিলের জন্যই ভালো হল। তারা বুঝতে শিখবে নেইমারকে ছাড়া তারা কতটুকু নিজেদের কাজ করতে পারবে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে নেইমারের অপারেশন ও তার পরের প্রকৃয়া নেইমার ও ব্রাজিলের জন্যই ভালো হতে পারে। কারন, এই সময়ে নেইমার পূর্ন বিশ্রামে থাকবে।

উদাহরন হতে পারে, বিশ্বকাপের আগে সে আরো হয়তো ৩০টি ম্যাচ খেলতে পারত পিএসজির হয়ে। এবং শেষ মুহুর্তে হতে পারত ইনজুড়ি। আর সেই ইনজুড়ি তাকে ট্রুনামেন্ট থেকে ছিটকে দিতে পারত। তখন তাকে ছাড়াই ব্রাজিলের রাশিয়া মিশন শুরু হতে পারত। কিন্তু এখন সে থাকবে বিশ্রামে এবং সব কিছু ঠিক থাকলে বিশ্বকাপের আগেই ফিরে আসতে পারবে।

এটা অনেকটাই রোনালদোর মত যা হয়েছিল ২০০২ সালে। সেবার বিশ্বকাপের আগে রোনালদো এমন ইনজুড়িতে পড়েছিল। সেবার মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলতে পেরেছিল রোনালদো পুরো মৌসুমে। কিন্তু তারপর তো সবাই জানে কি করেছিল সেই রোনালদো।