ফাইনাল ম্যাচে নিজেদের নিরাপত্তা চাইল বাংলাদেশি দুই সমর্থক

ক্রিকেট মাঠে দু’দলের মধ্যেকার লড়াই বরাবরই কাঙ্ক্ষিত। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ক্রিকেটকে সব সময়ই করে তুলেছে চিত্তাকর্ষক। কিন্তু, মাঠের সেই লড়াই যদি ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে সমর্থকদের মধ্যে, তবে সেটা নিঃসন্দেহে ক্রিকেটের জন্য খারাপ নিদর্শন।

অবাঞ্ছিত হলেও নিদাহাস ট্রফিতে এমন ঘটনারই সাক্ষী কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়াম। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। আর তখনই লংকান দর্শকদের কাছে হেনস্তা ও মারধরের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশি দুই সমর্থক শোয়েব আলী ও বুলু ঘোষ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফাইনাল ম্যাচে পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন শোয়েব আলী ও বুলু ঘোষ। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে এই আবেদন করেছেন ওই দুই টাইগার সমর্থক।

শ্রীলংকার ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বপ্ন ছিল তারাই ভারতের সঙ্গে আজকের ফাইনাল খেলবে। কিন্তু শুক্রবারের ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এই হারের ক্ষত মুছতে শ্রীলঙ্কানদের যে কয়দিন লাগবে, সেটি ক্রিকেট বিধাতাই জানেন!

শুক্রবার নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের আগের শেষ ম্যাচটি জটিল হিসেবনিকেশের কারণে পায় ফাইনাল নির্ধারণী ম্যাচের মর্যাদা। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ঐ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।

এই পরাজয় যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আসরের আয়োজক দ্বীপ দেশটি। দৃষ্টিকটুভাবেই দেশটির গণমাধ্যম থেকে ক্রিকেট বোর্ড- সব ক্ষেত্র এবার উঠেপড়ে লেগেছে টাইগারদের পেছনে।

ভারত শ্রীলঙ্কা ফাইনালে খেলবে- এটাই ছিল শ্রীলঙ্কানদের হিসেব। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। সেই তারা শ্রীলঙ্কাকে হটিয়ে ফাইনালে খেলবে, বিশ্বাসই করতে পারছে না শ্রীলঙ্কানরা। ভারত- শ্রীলঙ্কা ফাইনাল- এটা ধরে নিয়ে অনেকেই টিকিট কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই টিকিট এখন মূল্যহীন।

এই ম্যাচ নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট প্রেমীদের। টিকিট কিনলেও তাদের অনেকেই মাঠে যাবেন বলে মনে হচ্ছে না। আর যারা মাঠে যাবেন, তারাও আজ গলা ফাটাবেন ভারতের জন্য! পরিস্থিতি এমন যে, ফাইনালে বাংলাদেশ হারলে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। তাই বদলে গেছে শ্রীলংকান ক্রিকেটার ও সমর্থকদের আচরণ।

আগে টিম হোটেলের সামনে বাংলাদেশি মিডিয়া দেখলেও কিছু বলা হয়নি। শনিবার সেখানেই ছিল উল্টোচিত্র- বাংলাদেশি মিডিয়াকে হটাতে পুলিশ ডাকার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

ক্রিকেটার-সমর্থকদের পাশাপাশি লংকান বোর্ডও রাতারাতি যেন বদলে গেছে। সেদিন রাতেই ম্যাচ রেফারির কাছে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ফাইনালে সাসপেন্ড করার জন্য আবেদনও জানিয়েছে তারা।

এরপর থেকেই লংকানদের মনে তৈরি হওয়া বিদ্বেষটা কীভাবে মোকাবেলা করা যায়- এ প্রশ্ন বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ‘আসলে ওরা এবার আমাদের এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারতের সঙ্গে ফাইনাল ম্যাচটা খেলার আশা থেকে। ওরা ভাবতেও পারেনি যে, এভাবে ওদেরই হারিয়ে দেব আমরা। ব্যাপারটি ঠিক মেনে নিতে পারছে না ওদের কেউ। আমরা একই হোটেলে ছিলাম, এতদিন দেখা হলে হাই-হ্যালো করত। কিন্তু হারের পর ওরা আর কথাই বলছে না।’ জাতীয় দলের যে ক্রিকেটার কথাগুলো বলেছেন তার অনুরোধে নামটি লেখা হলো না।

আসলে ম্যাচ হারার চেয়েও এখানকার লোকের মুখে মুখে বেশি চলছে ওই ম্যাচে সাকিবের প্রতিবাদমুখর অবস্থান। সে সঙ্গে বাংলাদেশিদের ‘নাগিনী ড্যান্স’। তারা যেন ভাবতেই পারছে না এভাবে টাইগাররা মুখের খাবার কেড়ে নিতে পারে।