বঙ্গবন্ধু ও জিয়া পরিবারে শিক্ষার জোর কার বেশী ?

বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক পরিবার জাতরি জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পরিবার। সংক্ষেপে শেখ পরিবার এবং জিয়া পরিবার নামেই পরিচিত। রাজনৈতিক ও সামগ্রিক কারণে প্রায়ই এই দুটো পরিবারের তুলনা করা হয়। এবারে তুলনা করা যাক এই দুটো পরিবারের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে। একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন যে মানুষটা তার এবং তার পরিবারের শিক্ষাগত যোগ্যতা বহুলাংশেই তার ওপর প্রভাব ফেলবে, যা ধারাবাহিকতায় দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতির উপরও প্রভাব ফেলবে।

প্রথমে আসা যাক এই দুই রাজনৈতিক পরিবারের অভিভাবক শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়া রহমান এর শিক্ষাগত যোগ্যতায়। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তিনি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৭ সনে অর্থাৎ দেশবিভাগের বছর মুজিব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জিত। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতিকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে জিয়াউর রহমান শৈশবে কিছুকাল বগুড়ার গ্রামে ও কিছুকাল কলকাতা শহরে অতিবাহিত হয়। ভারতবর্ষ বিভাগের পর তার পিতা পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি শহরে চলে যান। তখন জিয়া কলকাতার হেয়ার স্কুল ত্যাগ করেন এবং করাচি একাডেমী স্কুলে ভর্তি হন। ঐ স্কুল থেকে তিনি ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং তারপর ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডি.জে. কলেজে ভর্তি হন।

পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমানের সৃষ্ট দল আওয়ামী লীগের হাল ধরে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এবং জিয়াউর রহমান সৃষ্ট দল বিএনপির হাল ধরে

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব মানবতার জননী শেখ হাসিনা ১৯৫৬ সালে টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। অপরদিকে খালেদা জিয়ার স্কুলজীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে। এরপর দিনাজপুর গার্লস স্কুলে ভর্তি হন।

উল্লেখ্য যে শেখ হাসিনার স্বামী ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী। পদার্থ ও বহুলপঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রবন্ধ লেখক তিনি। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান। শিক্ষা জীবনে তিনি লন্ডনের ডারহাম বিশ্বিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

এখানেই বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মধ্যে একটা বড় পার্থক্য দেখা যায়। এবারে আসা যাক এই দুই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম অর্থাৎ শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার সন্তানদের দিকে। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭৫ সালে তার নানা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা হওয়ার পর মায়ের সাথে জার্মানী-লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ফলে তাঁর শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ভারতে। নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ হতে স্নাতক করার পর যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এ্যট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।

অপরদিকে খালেদা জিয়া দুই ছেলে সন্তান তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকো। তারেক ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ হতে মাধ্যমিক ও নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন, তিনি স্নাতক শ্রেনীর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নিয়ে বস্ত্রশিল্প ও নৌ-যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করেন। আর আরাফাত রহমান কোকো শিক্ষাজীবনের শুরুতে কিছুদিন ঢাকার বিএফ কলেজে পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন।