বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে গালি, সাকিবের কড়া জবাব

নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে টাইগারদের কাঁদালেন দিনেশ কার্তিক। তার দুর্দান্ত এক ইনিংসে ভর করে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভার।

নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কাকে বিদায় করে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ, সেই গাত্রদাহ থেকে কি না পুরোটা ম্যাচজুড়ে শ্রীলঙ্কানরা গলা ফাটালেন রোহিত শর্মাদের হয়ে। ম্যাচ শেষে বাউন্ডারির পাশে পানির বোতল পড়ে থাকতে দেখে বোঝা গেল, কাদের উদ্দেশ্যে ছোড়া হয়েছে এগুলো!

সাকিব আল হাসান যখন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কথা বলতে শুরু করলেন, গ্যালারি থেকে ছুটে এল দুয়োধ্বনি। প্রেমাদাসায় তখন কান পাতাই দায়! বাংলাদেশ অধিনায়ক যখন সংবাদ সম্মেলনে আসছিলেন তখনো তাঁকে শুনতে হলো দুয়ো। শ্রীলঙ্কানদের এমন আচরণে কতটা অবাক সাকিব? সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য বেশি কিছু বলতে চাইলেন না, ‘এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। ওরা ওদের কাজ করবে। এসব নিয়ে চিন্তা করি না, বেশি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

তবে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে সাকিব জানালেন, তাঁর কাছে এটি নতুন নয়। বাংলাদেশ যতবার খেলতে এসেছে শ্রীলঙ্কায়, প্রতিবারই প্রচুর গালি হজম করতে হয়েছে খেলোয়াড়দের। মাঠে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি উত্ত্যক্ত করতেন, এমন দুজনের নাম বললেন, যেটি শুনে রীতিমতো চমকেই উঠতে হলো। তারা হলেন কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে! ‘আগে ওরা দিত, এখন আমরা সেটা ফিরিয়ে দিই’-সাকিব মনে করিয়ে দিলেন দিন বদলের কথাটাও।

মাঠের খেলায় স্লেজিং বা কথার লড়াই হতে পারে। কিন্তু এবার মাঠের বাইরে যা হলো, সেটি যেন ছাড়িয়ে গেছে আগের সবকিছুই। হঠাৎ শ্রীলঙ্কানদের কাছে ‘শত্রু’ হয়ে গেছে বাংলাদেশ! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের পর বাংলাদেশে সাকিব-নুরুলরা যেমন ‘বীর’ হয়েছেন, শ্রীলঙ্কায় ঠিক বিপরীত। ১৬ মার্চের ম্যাচে বাংলাদেশ তো খেলেই হারিয়েছে। আর যে ঘটনা ঘটেছে, সবই আম্পায়ারের ভুলে। তবুও কেন সাকিবদের ওপর শ্রীলঙ্কানদের এত ক্ষোভ? সহজ উত্তর-আবেগ! যাঁর বিয়ে তাঁকে হটিয়ে অতিথিদের অধিকারে মঞ্চ-যুক্তির চেয়ে শ্রীলঙ্কানদের কাছে তাই আবেগ বড় হয়েছে!

উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলটি ওয়ান বাউন্স সিগন্যাল দেন আম্পায়ার। দ্বিতীয় বলটি প্রথম বলের চেয়ে আরও উপর দিয়ে চলে যায়। কিন্তু আম্পায়ার বলটি নো বল দেননি। এ নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আম্পায়ারের কাছে নো বলের আবেদন জানান। এ নিয়ে আম্পায়ার ও শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কথা কাটাকাটি হয়। তারপরও আম্পায়ার বলটিকে ‘নো বল’ দেননি।

এ বিষয়ে ম্যাচ শেষে কথা বলেছেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘দারুণ একটি জয়। আমরা লেগ আম্পায়ারের দেয়া নো বল সিগন্যাল দেখেছিলাম। এ কারণেই আমরা নো বল নিয়ে অভিযোগ করছিলাম। আমরা এটি সুন্দরভাবে শেষ করতে পারতাম। আমরা এ বিষয়টি আর লম্বা করতে চাই না। আমি ভালো ব্যাট করেছি। ইনিংসটি আরও লম্বা করতে পারলে লাগত। কিন্তু আমরা জিতেছি। এ কারণে সব ভুলে গিয়েছি। তারপরও বড় কথা হচ্ছে আমরা জিতেছি।’

মাঠের তর্ক:

মাহমুদউল্লাহ (লেগ আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগেকে): স্যার, এটা কেন নো বল নয়? পরপর দুটি বাউন্সার দিল! পরেরটার উচ্চতা আরও বেশি ছিল…।

(দুই আম্পায়ার কথা বলছেন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে। গ্যাটোরেড হাতে ব্যাটসম্যানদের কাছে এলেন একাদশের বাইরে থাকা নুরুল হাসান। এ সময় থিসারা পেরেরা সিংহলিজ ভাষায় কিছু বললেন আম্পায়ারদের।)

থিসারা (মাহমুদউল্লাহকে): আম্পায়ারদের সঙ্গে এত কথা বলার কী আছে?

নুরুল: তোমার এত লাগছে কেন?

থিসারা: তুই এখানে … (গালি) করতে এসেছিস কেন?

নুরুল (থিসারার দিকে আঙুল তুলে): আমি এসেছি তোমার কী? তুমি তোমার কাজ করো, আমার ব্যাপারে নাক গলানোর দরকার নেই।

(আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপে নুরুল বেরিয়ে আসেন মাঠ থেকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছুটে যান রিজার্ভ আম্পায়ারের কাছে)

সাকিব: কেন এটা নো বল দেওয়া হলো না, স্যার? কেন নিয়ম ভাঙা হলো?

(আম্পায়ারের কাছে সদুত্তর না পেয়ে সাকিব দুই ব্যাটসম্যানকে ইঙ্গিত করলেন বেরিয়ে আসতে। মাহমুদউল্লাহ-রুবেল হোসেন প্রায় সীমানার কাছে চলেও এলেন।)

ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ: এখন আসিস না। এলে ডিসকোয়ালিফাইড হতে হবে। বড় শাস্তি হয়ে যাবে। যা হওয়ার হয়েছে, তোরা (দুই ব্যাটসম্যানকে) ফিরে যা, ম্যাচ শেষ করে আয়।

মাহমুদউল্লাহ-রুবেল ফিরে গেলেন। এরপর? টান টান উত্তেজনা, ক্লাইমেক্স, অ্যান্টিক্লাইমেক্স শেষে থ্রিলিং সিনেমাটার সমাপ্তি একটা দলীয় নৃত্য দিয়ে—নাচ, নাগিন নাচ!