বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৫ উইকেটে জয়লাভ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী এক অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানান।

তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিজয়ের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের মহাকাব্যিক ইনিংসে রেকর্ড গড়ে শ্রীলংকাকে হারালো বাংলাদেশ। ৩৫ বলে ৭২, ৫ চার, ৪টি ছক্কায় মুশফিকুর রহিমের কাব্যিক ইনিংস দলকে জয়ের বন্দরে পৌছে দিয়েছে। তাইতো খ্যাপাটে উদযাপন করলেন মুশফিক। মুশফিকের উদযাপন মানে বীরত্বেরও গল্প।

শ্রীলংকার ছুড়ে দেয়া ২১৫ রানের টার্গেট ২ বল হাতে রেখেই স্পর্শ করে টাইগাররা। একই সঙ্গে সংখিপ্ত ভার্সনে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ।

কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগায় শ্রীলংকার দুই ওপেনার দানুস্কা গুনাথিলাকা ও কুশল মেন্ডিজ। বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে মাত্র ২৭ বল মোকাবেলায় উদ্বোধণী জুটিতে ৫৬ রান পেয়ে যায় শ্রীলংকা। ২৬ রানে থাকা গুনাথিলাকার উইকেট উপড়ে ফেলে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।

শুরুতে দ্রুত রান তোলার কাজটা পরবর্তীতে অব্যাহত রাখেন মেন্ডিজ ও কুশল পেরেরা। মাত্র ১০ দশমিক ২ ওভারেই শতরান পেয়ে যায় শ্রীলংকা। দলকে তিন অংকে পৌঁছে দিয়ে রানের পেছনে ছুটেছেন মেন্ডিস ও পেরেরা। সেই সাথে দু’জনই স্বাদ নেন হাফ-সেঞ্চুরির। ২৬ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মেন্ডিজ।

ছয় বোলারকে ব্যবহার করেও মেন্ডিস-পেরেরা জুটি ভাঙ্গতে পারছিলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়েই দলের সপ্তম বোলার হিসেবে ১৪তম ওভারে আক্রমনে আসেন টাইগার দলপতি। নিজের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই মেন্ডিজকে থামান মাহমুদুল্লাহ। ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৩০ বলে ৫৭ রান করেন মেন্ডিজ। পেরেরার সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৩ বলে ৮৫ রান যোগ করেন মেন্ডিজ।

এরপর উইকেটে আসেন দাসুন শানাকা। এক বল পর আবারো বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারি মাহমুদুল্লাহ’র। তাই মেন্ডিজের মত একই জায়গা দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে একই ফিল্ডার সাব্বির রহমানের তালুবন্দি হন শানাকা। তাই শুন্য হাতে ফিরে যেতে হয় শানাকাকে।

চার বলের ব্যবধানে শ্রীলংকার ২ উইকেট তুলে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে বাংলাদেশ। তাই চতুর্থ সাফল্যের জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। তৃতীয় দফায় পেসার তাসকিন আহমেদকে আক্রমনে এনেই সাফল্য তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ। তাসকিনের বলে সাব্বিরকে ক্যাচ দিয়ে নামের পাশে ২ রান রেখে ফিরেন অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল।

১৪১ থেকে ১৫০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাবার শংকায় পড়ে শ্রীলংকা। কিন্তু লংকানদের চাপে পড়তে দেননি পেরেরা ও উপুল থারাঙ্গা। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের উপড় আরো চড়াও হয়েছেন তারা। মাত্র ২৬ বল মোকাবেলা করে ৫৫ স্কোর বোর্ডে জড়ো করেন পেরেরা ও থারাঙ্গা।

ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে পেরেরা-থারাঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন করেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর। টি-২০ ক্যারিয়ারের নবম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৪৮ বলে ৭৪ রান করেন পেরেরা। তার ইনিংসে ৮টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। শেষ ওভারে আরও একটি উইকেট শিকার করেছেন ফিজ। থিসারা পেরেরাকে শুন্য হাতে ফেরান তিনি। তবে ১৫ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন থারাঙ্গা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১৪ রান পায় শ্রীলংকা। টি-২০তে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই শ্রীলংকার সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। নিজেদের টি-২০ ইতিহাসে চতুর্থ। বাংলাদেশের পক্ষে মুস্তাফিজ নেন ৩ উইকেট ।

১৬৫ রানের বেশি টার্গেট তাড়া করে টি-২০তে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। সেখানে এ ম্যাচে জিততে ২১৫ রানের টার্গেট পায় টাইগাররা। সেই লক্ষ্যে আকাশ-ছোয়ার মত সূচনা করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ম্যাচে তিন নম্বরে নেমে ৩৪ রান করেছিলেন লিটন। এবার প্রমোশন পেয়ে শুরুতেই তামিমের সঙ্গী লিটন। কেন তাকে শুরুতে পাঠানো হলো, তা প্রমান করেন লিটন। কম যাননি তামিমও। প্রথম ৫ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর ৬৫। ঐসময় লিটনের রান ১৬ বলে ৩৬, তামিমের ১৪ বলে ২৬।

পাওয়া-প্লের পঞ্চম বলে থামতে হয় লিটনকে। ১৯ বলে ৪৩ রান করেন তিনি। ২টি চার ও ৫টি ছক্কা দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান তিনি। লিটনের সাথে শুরুতে ৭৪ রান দেয়ার পর সৌম্য সরকারকে নিয়ে দলের স্কোর ১০০তে নিয়ে যান তামিম। হাফ-সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখতে থাকা তামিম থেমেছেন ব্যক্তিগত ৪৭ রানে। ২৯ বল মোকাবেলায় ৬টি চার ও ১টি ছক্কা হাকান তিনি।

৯ দশকিক ৩ ওভারে স্কোর বোর্ডে ১০০ রান রেখে তামিম যখন বিদায় নেন, তখন দলের দায়িত্ব নেন সৌম্য ও মুশফিকুর রহিম। আস্কিং রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন তারা। দু’জনের ২৯ বলে ৫১ রানের সুবাদে ম্যাচ জয়ের লড়াইয়ে শক্তপোক্তভাবেই টিকে থাকে বাংলাদেশ। ২২ বলে ২৪ রান করে থামেন সৌম্য।

তবে ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন মুশফিক। ২৪তম বলেই টি-২০ ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মুশি। শেষ ৩ ওভারে ২৭ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু ১৮তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ ২০ রানে ও ১৯তম ওভারে সাব্বির রহমান শুন্য হাতে বিদায় নেন। ফলে ম্যাচ নিয়ে মহাবিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এমন অবস্থায় নিজেদের সেরাটা দিয়ে জয়ের জন্য ৬ বলে ৯ রানের সমীকরনে নামিয়ে আনেন মুশফিক। প্রথম ৪ ডেলিভারি থেকে ১টি বাউন্ডারিতে বাংলাদেশকে অবিস্মরনীয় জয় এনে দেন মুশফিকুর। ৩৫ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৭২ রান করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মুশফিক।

ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।