‘বাম দিকটা উঁচু হলো কেন? বলার সঙ্গে সঙ্গেই বিমান ক্রাশ’

গতকাল সোমবার প্রথমবারের মতো নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি শাহরীন আহমেদ। আগামী শুক্রবার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু বন্ধুটি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিবিসি নেপালি সার্ভিসের কাছে বিমান দুর্ঘটনার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বেঁচে যাওয়া এই স্কুল শিক্ষক। ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে আমরা ঢাকা থেকে টেক অফ করি। আড়াইটার দিকে কাঠমান্ডু পৌঁছে পাইলট প্রথমে ল্যান্ড করার চেষ্টা করলেও পারেনি। ঘুরে এসে যখন দ্বিতীয়বার ল্যান্ড করার চেষ্টা করে, বাম দিকটা উঁচু হয়ে যায়। তখনই আমি বলে উঠলাম, বাম দিকটা উঁচু হলো কেন? বলার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রাশ। সবাই তখন ভয়ে চিৎকার করছিল আর উচ্চস্বরে দোয়া পড়ছিল’, জানান শাহরীন।

শাহরীন বলেন, একটি দুর্ঘটনা যে ঘটতে যাচ্ছে -সে রকম সতর্কবার্তাও পাইলট, কেবিন ক্রু বা অন্য কেউই দেয়নি। তারা নিজেরাও কিছু বুঝতে পারেননি। আগুন লাগার পর আনুমানিক প্রায় বিশ মিনিট পর সাহায্য আসে। সে পর্যন্ত আমি আর আরেকজন বিমানের ভেতরেই বসে ছিলাম। প্রচণ্ড ভয় লাগছিল আর ‘হেল্প, হেল্প’ বলে চিৎকার করছিলাম। যেহেতু আগুন লাগার পর অনেকে দমবন্ধ হয়েই মারা যায়।

উদ্ধারকারীরা আগুন নেভানোর পর বিমানের একটি অংশ খুলে যায়। বাইরে আসার সময় শাহরীন দেখতে পান, আরেকজন কাছেই বিমানের ফ্লোরে পড়ে আছে আর তার হাত ঝুলছে।

দুর্ঘটনার পরও চেতনা ছিল শাহরীন আহমেদের। তার বর্ণনায়, লোকজন আমাকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। তখন আমি বলি, আমি হাঁটতে পারবো। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত হেঁটেও যাই। কিন্তু তারপর পায়ে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। আসতে আসতে শুধু আগুন দেখতে পাই।

কাঠমান্ডুর মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহরীনের শরীরের অনেক জায়গাই আগুনে পুড়ে গেছে। হাসপাতালের বিছানায় বন্ধুর শোকটাই তার সাথী হয়ে রয়ে গেল।