ভারতের মোষ্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি পাকিস্তানের রাজনীতিতে!

ভারতে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি এবার পাকিস্তান ভোটে প্রার্থী। হাঁ, এটাই সত্যি হতে চলেছে৷ পাকিস্তানে ভোটে দাঁড়াতে চলেছে লস্কর ই তৈবার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ মহম্মদ সাইদ৷ ইসলামাবাদ হাইকোর্ট হাফিজ সাইদের নতুন রাজনৈতিক দল মিলি মুসলিম লিগকে স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের মর্যাদা দিতে নির্দেশ দিয়েছে পাক নির্বাচন কমিশনকে।৷

২৬/‌১১ মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী হাফিজ সাইদ৷ এছাড়াও ভারতে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে যুক্ত এই জঙ্গি৷ বারবার তার বিরুদ্ধে প্রমাণপত্র পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত৷ তবে, কাজের কাজ কিছুই হয় নি৷ এবার স্বয়ং হাফিজ সাইদই জুলাই মাসে পাক ভোটে দাঁড়াচ্ছে৷ জিতে গেলে হয়ত এবার তার বিরুদ্ধে প্রমাণপত্র তার হাতেই তুলে দিতে হবে ভারতকে৷

বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী৷ হাফিজ সাইদ৷ এবার রাজনীতির আসরে নামতে চলেছে। জামাত–উদ–দাওয়াহের (‌জুদ)‌ প্রধান হাফিজ আগেই জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানো হবে তাঁকে। পাকিস্তান বিধানসভার আসন পাওয়ার জন্যই হাফিজ নির্বাচনে লড়বে বলে জানিয়েছে।

লাহোর হাইকোর্টের নির্দেশে হাফিজ সাইদ গৃহবন্দী থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপুঞ্জ হাফিজকে জঙ্গি ঘোষণা করার পরেও পাকিস্তানে খুব স্বাধীনভাবেই ঘুরে বেড়ায় হাফিজ। সংবাদমাধ্যমকে হাফিজ জানিয়েছে, মিলি মুসলিম লিগের (‌এমএমএল)‌ হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াবে সে তবে কোন এলাকা থেকে দাঁড়াবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে চায়নি জুদের প্রধান।

গত বছরের আগস্টেই জামাত–উদ–দাওয়াহ বা জুদ রাজনীতিতে প্রবেশ করে। তাদেরই নতুন দল মিলি মুসলিম লিগ বা এমএমএল, যার সভাপতি সইফুল্লা খালিদ। এমএমএল দলের সভাপতি জানান, মিলি মুসলিম লিগ পাকিস্তানকে সত্যিকারের ইসলাম দেশে পরিণত করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। তাঁদের দল অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও এই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

অন্যদিকে, জুদের প্রধান হাফিজ সাইদকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর থেকেই হাফিজকে বাড়িতেই গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। পাকিস্তান সরকার সেরকম কোনও প্রমাণ হাফিজের বিরুদ্ধে জোগাড় করতে না পারায় তাঁকে লাহোর হাইকোর্ট গৃহবন্দী থেকে মুক্তি দেয়।

লস্কর ই তৈবা এই জামাত–উদ–দাওয়াহ বা জুদ এর আর্মি শাখা৷ গোটা ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের সমস্ত দেশ যাদের ভয়ানক জঙ্গি গোষ্ঠী বলেই জানে৷ ২৬/১১ মুম্বাই হামলার প্রধান চক্রী হিসাবে বরাবর তাকে সামনে এনেছে ভারত৷ ভারত বরাবরই বিশ্বের দরবারে অভিযোগ করে এসেছে যে এতবড় একজন জঙ্গিকে পাকিস্তান আশ্রয় দিয়েছে এবং লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করছে৷

পাক ইলেকশন কমিশনের একটি নির্দেশে হাফিজ সাইদের দল মিলি মুসলিম লিগকে জুলাইয়ে পাক ভোটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে৷ পাক ইলেকশন কমিশন হাফিজের দলকে রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বীকৃতিই দেয় নি। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে মামলা করে হাফিজ সইদের দল৷ ইসলামাবাদ আদালত, পাক ইলেকশনের কমিশনের নির্দেশ খারিজ করে দেয়। ফলে এবার হাফিজের দলের আর রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বীকৃতি পেতে কোন অসুবিধা রইল না। পাক ভোটে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও কোন বাধা থাকবে না বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

ভোটে দাঁড়ালে পাক ভোটে জেতার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে হাফিজ সাইদের৷ লস্কর-ই-তৈবা এবং জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সাইদ ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল চক্রী হিসেবে অভিযুক্ত। ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই হাফিজের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ চেয়ে চাপ দিচ্ছে পাকিস্তানকে। আমেরিকা তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছে ১ কোটি ডলার। রাষ্ট্রপুঞ্জ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়েছে তাঁকে।

আমেরিকা পাকিস্তানকে দেওয়া তাদের আর্থিক সাহায্যও আটকে দিয়েছে৷ এই হাফিজ সাইদ যে দিন থেকে ঘোষণা করেছেন যে মিল্লি মুসলিম লিগ (এমএমএল) নামে একটি রাজনৈতিক দল খুলছেন তিনি, সে দিন থেকেই পাল্টা পদক্ষেপের কথা ভাবতে বাধ্য হয় পাক প্রশাসন।

পাক নির্বাচন কমিশন যাতে এমএমএল-কে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়, তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় হয় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক। ইলেকশন কমিশনের তরফ থেকে নিষিদ্ধ করা হয় হাফিজের দলকে৷ লড়াই গড়ায় আদালত পর্যন্ত। পাক সরকার জানায়, লস্করের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমএমএল-এর। এ ধরনের সংগঠন রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পেলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে কট্টরবাদ এবং হিংসা বাড়বে বলেও সরকারের তরফে জানানো হয়।

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট পাক ইলেকশন কমিশনের এই নির্দেশে সবুজ সংকেত না দেওয়ায় মিলি মুসলিম লিগকে আর রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি দেওয়া থেকে আটকাতে পারবে না কমিশন৷ ইতিমধ্যেই, হাফিজ সাইদ এমএমএল-এর ব্যানার নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন। প্রচার শুরুও করে দিয়েছেন তিনি৷

সবকিছু ঠিকঠাক চললে জুলাইয়ে ভোটে জিতে পাক সাংসদের সদস্যও হয়ে যাবেন তিনি৷ হয়তো বা মন্ত্রীও৷ তখন ভারত তার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণপত্র কার হাতে তুলে দেবে সেটা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন৷ সন্ত্রাসবাদীর প্রমাণপত্র ভবিষ্যতে কি এই সন্ত্রাসবাদীর হাতেই তুলে দিতে হবে ভারতে? সম্ভাবনা কিন্তু সেই দিকেই এগোচ্ছে৷ সেটা যদি হয় তাহলে তার চেয়ে বড় হাস্যকর ব্যপার আর হতে পারে না৷