মর্মান্তিক, তিনদিন ধরে মৃত মায়ের আঙ্গুল চুষছে শিশু

তিনদিন আগে মারা যাওয়া মায়ের আঙুল চুষছিল দেড় বছরের ক্ষুধার্ত শিশুটি। এ অবস্থায় তালাবদ্ধ ঘরের দরোজা ভেঙে প্রতিবেশীরা অবুঝ শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে হতভাগি ওই মায়ের তিন দিনের পচাঁ গলা লাশটি নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য।

হৃদয়স্পর্শী এ ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কোতালেরবাগ বৌবাজার এলাকার একচালা টিনের একটি ঘরে। সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেলে তিনদিন না খেয়েও বেঁচে থাকা শিশুটি ও তার মায়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন জানান, কোতালেরবাগ এলাকার আছিল্লা সর্দারের ছেলে আল-আমিনের সাথে বিয়ে হয় গার্মেন্ট কর্মী রীমা আক্তারের। তাদের ঘরে দেড় বছরের শিশু সন্তান নাহিদ।

প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া নাছিমা আক্তার বাসায় ফিরে আল-আমিনের ঘরে তার দেড় বছরের শিশুপুত্র নাহিদের কান্নার শব্দ শুনতে পায়। বেশ কিছুক্ষণ কান্নার শব্দ শুনে টিনের একচালা ঘরের কাছে গিয়ে দেখতে পায় বাইর থেকে ঘরের দরজায় তালা দেওয়া। এরপর টিনের ফুটো দিয়ে তাকিয়ে দেখে আল-আমিনের স্ত্রী রিমা খাটের উপর দু’হাত ছড়িয়ে নিথর হয়ে পড়ে আছে। শিশুটি বুকের কাছে বসে রিমার হাতের আঙ্গুল চুষছে। আবার কাঁদছে।

তিনি আরো জানান, ওইসময় ঘর থেকে মারাত্মক পঁচা দুর্গন্ধ পেয়ে আশপাশের লোকজনদের ডেকে নিয়ে তালা ভেঙ্গে স্থানীয়রা শিশুটিকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই বাড়ি থেকে রিমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , আল-আমিন এর আগে এক গার্মেন্ট কর্মীকে বিয়ে করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এতে ওই মেয়ে কয়েক মাস সংসার করে পালিয়ে যায়। তার নাম জানাতে পারেনি কেউ। পরে প্রায় আড়াই বছর আগে গার্মেন্ট কর্মী রিমাকে বিয়ে করে আল-আমিন। বিয়ের পর থেকে রিমাকেও কারণে-অকারণে মারধর করত। কয়েক মাস আগে রিমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয় আল-আমিন।

এরপর এক সপ্তাহ আগে আল-আমিন এক আত্মীয়র বাসা থেকে রিমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সর্বশেষ সোমবার সকালে বাড়ির আশপাশের লোকজন রিমাকে ঘরের সামনে বসে থাকতে দেখেছেন। এলাকাবাসী জানায়, আল-আমিন ও তার বড় ভাই বাবু এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সম্প্রতি বাবুকে মাদকসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, নিহত রিমার স্বামী আল-আমিনসহ তাদের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। সবাই আত্মগোপনে। আল-আমিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। রিমার পরিবারকে সংবাদ পাঠানো হয়েছে।