মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে গিয়ে যেতে হল জেলে

মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতেই সহপাঠী বান্ধবীর অ্যাডমিট জেরক্স করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল সে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পরীক্ষকদের হাতে ধরা পড়ল ভুয়ো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রী।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছেন জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ি ব্লকের মাধ্যমিক পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বোর্ড প্রতিনিধিরা। ইতিমধ্যেই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন ধূপগুড়ি ব্লক মাধ্যমিক পরীক্ষার অফিসার ইনচার্জ তথা প্রাথমিকের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক তাপস দাস।
শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ি ব্লকের বিদ্যাশ্রম দিব্যজ্যোতি বিদ্যানিকেতন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ খয়েরবাড়ি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়েছে বিদ্যাশ্রম স্কুলে। স্কুল সূত্রে খবর, নিজেরই এক সহপাঠীর অ্যাডমিট কার্ড জেরক্স করে পরীক্ষায় বসেছিল অভিযুক্ত ছাত্রী। কোনও ভাবে নিজের ওই সহপাঠীর অ্যাডমিট কার্ড জেরক্স করে সেটিকে প্রত্যয়িত করিয়ে নেয় সে। যে ছাত্রীটির অ্যাডমিট কার্ড সে জেরক্স করিয়েছিল, তার সিটও ওই স্কুলেই পড়েছিল। ফলে একই অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে মাধ্যমিকের প্রথম তিনটি পরীক্ষা দেয় দুই ছাত্রী। ভূগোল পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহের সময়ই পরীক্ষকদের সন্দেহ হয়। শুক্রবার ইতিহাস পরীক্ষা দেওয়ার সময় বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হয়ে ছাত্রীকে আটক করেন। পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

কিন্তু কেন এভাবে পরীক্ষায় বসল ওই ছাত্রী? অভিযুক্তের স্কুল সূত্রে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার বয়সই হয়নি তার। ক্লাস নাইনে পড়াকালীন তার মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনও হয়নি। কিন্তু স্কুল তাকে দশম শ্রেণিতে তুলে দেয়। মেয়েটি দশম শ্রেণিতে নিয়মিত ক্লাসও করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় তৃনমূল নেতা তথা বিদ্যাশ্রম স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি দীনেশ মজুমদার বলেন, ‘‘মেয়েটির বয়স হয়নি। নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনও হয়নি। তাহলে কী করে সে দশম শ্রেণিতে উঠল?’’ এই ঘটনায় স্কুলের চূড়ান্ত গাফিলতি রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

দীনেশবাবু আরও জানিয়েছেন, মেয়েটির মা দিনমজুরি করে সংসারের হাল টানেন। পড়াশোনা মন দিয়ে না করার জন্য প্রায়শই মেয়েকে বকাবকি করতেন তিনি। তাই মেয়েটি সম্ভবত আতঙ্কিত হয়ে অন্যের অ্যাডমিট কার্ড জেরক্স করে পরীক্ষায় বসে যায়। দক্ষিণ খয়েরবাড়ি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরাজ হাজরা এই বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি।

ধূপগুড়ি ব্লকের মাধ্যমিকের দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ তাপস দাস ও সেন্টার সেক্রেটারি অশোক মজুমদার বলেন, ঘটনার পর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের নির্দেশ মতোই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এদিকে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ কর্মীরা বিকেলের পর বিদ্যাশ্রম স্কুলে গিয়ে ভুয়ো পরীক্ষার্থী বলে অভিযুক্ত ছাত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।