মেসি সেঞ্চুরিতে কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনা

চেলসির বিপক্ষে ম্যাচের এক পর্যায়ে টেন নেটওয়ার্কের ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘মেসির খেলা দেখাটাও সৌভাগ্য। পৃথিবীর সেরা ফুটবলার সে। অন্যান্য অনেকে অনেক গোল করলেও মেসির মতো এরকম চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলে গোল করতে কেউ পারেনি।’ আসলে মেসি অনন্য। মেসির তুলনা শুধু মেসি নিজেই।

মেসির জোড়া লক্ষ্যভেদে ৩-০ গোলের জয়ে ৪-১ অগ্রগামিতায় কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল বার্সেলোনা।

চেলসির বিপক্ষে দুই গোল করে চ্যাম্পিয়নস লিগে গোলের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করছেন মেসি। ক্রিস্তিয়ানোর রোনালদোর পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপিয়ান এই প্রতিযোগিতায় গোলের ‘সেঞ্চুরি’ পূরণ করেছেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় লক্ষ্যভেদে চ্যাম্পিয়নস লিগের ১০০তম গোলের দেখা পান মেসি।

চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে চেলসির মাঠ থেকে ১-১ গোলের ড্র করে এসেছিল বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের মাঠে ১ গোল দিয়ে আসায় ঘরের মাঠের ফিরতি লেগে গোলশূন্য ড্র করলেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যেত কাতালানরা। বার্সেলোনার মতো দল কী আর ড্রয়ের অপেক্ষায় বসে থাকে। এরনেস্তো ভালভারদে তাই আক্রমণাত্মক দলই সাজিয়েছিলেন ফিরতি লেগে। উসমান দেম্বেলেকে একাদশে রেখে আক্রমণভাগ করেছিলেন আরও ধারালো। তবে মেসির দিনে ধার কতটা চকচক করে, সেটা ফুটবল বিশ্ব দেখলো আরেকবার। নিজে করলেন দুই গোল, সঙ্গে দেম্বেলেকে দিয়ে করিয়েছেন অন্যটি। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে বার্সার আর কী লাগে!

তৃতীয় ছেলে পৃথিবীতে আসায় মাগালার বিপক্ষে লা লিগার আগের ম্যাচে ছিলেন না তিনি। চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচ দিয়ে মাঠে নেমে গোলের যেন তর সইছিল না আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের। ন্যু ক্যাম্পের দর্শকরা নড়েচড়ে বসার আগেই লক্ষ্যভেদ তার। পেশাদারি ক্যারিয়ারে নিজের দ্রুততম গোলের রেকর্ড গড়লেন মেসি। চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে ২ মিনিট ৮ সেকেন্ডে লক্ষ্যভেদ করেছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী।

ডান প্রান্ত থেকে উসমান দেম্বেলে বল দিয়েছিলেন মেসি। ফরাসি ফরোয়ার্ড ফিরতি বল ঠিকমতো দিতে না পারলেও চেলসির এক খেলোয়াড়ের ভুলে চলে আসে তা লুই সুয়ারেসের কাছে। উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের চমৎকার পাস ধরে ডান পায়ের আড়াআড়ি শটে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে।

ম্যাচের শুরুতেই গোল করে ন্যু ক্যাম্পে উৎসব ছড়ানো মেসি ২০তম মিনিটে নাম লেখান অ্যাসিস্টের খাতায়। চমৎকার ফুটবল প্রদর্শনীতে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে দেম্বেলেকে দিয়ে করালেন বার্সেলোনার জার্সিতে প্রথম গোল। সেস্ক ফাব্রেগাসের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে সফরকারীদের দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে মেসি পাস দিলেন ডান প্রান্তে এগিয়ে আসা দেম্বেলেকে। ফরাসি উইঙ্গার একটু সময় নিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। কোর্তোয়া চেষ্টা করলেও বুলেট গতির শট ঠেকানোর সম্ভব হয়নি। ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বার্সেলোনায় এসে আসল মঞ্চেই নিজেকে মেলে ধরলেন এই ফরোয়ার্ড।

তবে নু ক্যাম্পে রাতটা ছিল আসলে মেসির। তাই ৬৩ মিনিটে আবার স্কোরশিটে নাম তোলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। এবারের গোলটি ছিল আরও দেখার মতো। সুয়ারেসের পাস ধরে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে ঢুকে পড়েন চেলসির বক্সে। এরপর বাঁ পায়ের শটে আবারও কোর্তোয়ার দুই পাসের ফাঁক দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে। মেসির এই গোলে বার্সেলোনা ৩-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় চেলসির শেষ আশাটাও শেষ হয়ে যায়। বিপরীতে বার্সেলোনার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা। রেফারির শেষ বাঁশিতে যা পূর্ণতা পায়। গোল ডটকম