সততার পুরষ্কার পেলেন তিন মাস পর

ঘটনা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের। প্রতিদিনের মতোই ৬৮ বছরের সরলা নাম্বুদিরি বাড়ি ফেরার জন্য অটো ধরেছিলেন।

চেম্বুরের এই বাসিন্দার নিজেরই একটি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে শহরে, নাম ‘অরুণোদয় ইংলিশ স্কুল’। সেখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। বাড়ি থেকে সরলা নাম্বুদিরি নিজের গাড়িতে এসে, ওই পার্কিং থেকে অটো ধরে স্কুলে পৌঁছন। হাঁটাচলায় অসুবিধার কারণেই তিনি এমন ভাবে যাতায়াত করেন রোজ।

ব্যতিক্রম ছিল না ২১ ডিসেম্বরও। কিন্তু, সেদিন অটোটি তাঁকে গাড়ির কাছে নামিয়ে চলে যাওয়ায় পরে সরলাদেবীর খেয়াল পড়ে যে তাঁর ব্যাগটি রয়ে গিয়েছে অটোতেই। স্কুল পড়ুয়াদের ফি বাবদ ব্যাগে ছিল ৮০ হাজার নগদ টাকা। সরলাদেবীর ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, আধার, প্যান, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বাড়ির চাবি, লকারের চাবি, দুটি সেলফোন ও গাড়ির কাগজপত্র— সবই ছিল ওই ব্যাগে।

স্বাভাবিকভাবেই, সরলা খুবই অসুবিধায় পড়েন। স্কুলে ফিরে গিয়ে পিওনকে বলেন ওই অটো চালকের খোঁজ করতে। পাশের একটি পানের দোকান থেকে জানা যায় যে, অটো চালকের নাম অমিত গুপ্ত। কিন্তু তাঁকে কীভাবে খুঁজে পাবেন? উপায়ান্তর না দেখে পুলিশের কাছে যাবে বলে যখন ভাবছেন, তখনই তিনি দেখেন যে অমিত ফিরে এসেছেন। সরলার হাতে হারিয়ে যাওয়া টাকা ও অন্যান্য জিনিস ফিরিয়ে দেন তিনি।

সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই মুহূর্তে সব কিছু ফেরত পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন সরলা নাম্বুদিরি। কিন্তু, পরে খেয়াল পড়ে যে অটো চালক অমিত গুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করার মতো কোনও তথ্যই তাঁর কাছে নেই।

দীর্ঘ তিন মাস ধরে অমিত গুপ্তকে খুঁজে চলেন সরলা নাম্বুদিরি। শেষে, এই সপ্তাহের শুরুতে তাঁর খোঁজ পান সরলাদেবী এবং স্কুলে আমন্ত্রণ জানান তাঁকে। কথা বলে জানতে পারেন যে, অমিতের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। দুই সন্তানকে তিনি স্কুলেও পাঠাতে পারেন না অর্থের অভাবে।

এতো গরীব হওয়া সত্ত্বেও অমিত গুপ্ত যে তাঁর সমস্ত টাকা ফেরত দিয়েছিলেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন সরলা নাম্বুদিরি। অমিতকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করেন। পাশাপাশি, তাঁর দুই সন্তানের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করে দেন, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

সংবাদমাধ্যমকে সরলাদেবী জানান যে, তিনি নিজে একজন শিক্ষিকা হয়ে এই কাজ তাঁর দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করেন।