স্ত্রীর সাথে মিমাংশায় যেতে চায় সামি, কি বলছেন স্ত্রী?

স্ত্রী হাসিন জাহানের সঙ্গে মহম্মদ শামির যুদ্ধ কি আরও রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠবে? নাকি বিবাদ মিটে পাওয়া যাবে শান্তির খোঁজ?
রবিবার দু’রকম সম্ভাবনার কথাই উঠে এল। কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে শামির নামে ফের বিষোদ্গার করলেও সন্ধির সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি হাসিন। বরং বলেছেন, ‘‘ও এলে আমি ভেবে দেখতে পারি।’’ মোরাদাবাদে সাংবাদিকদের শামিও জানিয়ে দিলেন, স্ত্রী কথা বলতে রাজি থাকলে তিনি কলকাতায় ফিরতে চান। ‘‘কথা বলে সমস্যাটা মেটানো গেলে তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। সমঝোতা শুধু আমাদের জন্য নয়, মেয়ের ভবিষ্যতের জন্যও খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। যদি মিটমাটের জন্য কলকাতায় ফিরতে হয়, আমি যাব। শুধু কলকাতা কেন, যেখানেই হবে, যাব,’’ বলেছেন শামি।

জাতীয় দলের পেসার রবিবার সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছেন, তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাসিনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে আজ, সোমবার। সেই বৈঠকের ফলাফলের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। ‘‘শুধু কলকাতা নয়, মিটমাটের জন্য যেখানেই যাওয়ার প্রয়োজন, যাব। ও যখন চাইবে, বসে কথা বলতে আমি প্রস্তুত। কালকে পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠক হবে। তাতে আশা করছি ইতিবাচক কিছু বেরবে,’’ বলেছেন শামি। যোগ করেছেন, ‘‘বাচ্চার জন্যই পরিবারে খুশির ছবিটা ফেরা দরকার। মানুষের সামনে আমাদের ফের একসঙ্গে দেখা দিতে হবে। গত তিন-চারদিন ধরে দু’তরফেই কথাবার্তা চলছে। আমি ওকে অনুরোধ করব, চলো দু’জনই সমস্ত কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করি।’’
বিতর্কের জন্য তিনি যে বিধ্বস্ত, স্বীকার করে নিয়েছেন শামি। বলেছেন, ‘‘খাওয়া-দাওয়া, ঘুম— সব কিছুই বন্ধ। প্র্যাক্টিসও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর প্রভাব বাইরের কারও জীবনে পড়বে না। পড়বে আমাদেরই ওপর। প্রভাব পড়বে বাচ্চার জীবনে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বোর্ডকে অনুরোধ করছি, অভিযোগ ঠিক না ভুল, সেটা আইনানুগভাবে খতিয়ে দেখা হোক এবং ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করা হোক।’’

রবিবার দুপুরে গোলাম মহম্মদ শাহ রোডের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে সন্ধির সম্ভাবনা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন হাসিনও। বলেছেন, ‘‘আমি জানি না সমঝোতা কোথায় হবে। আমাদের ঝগড়া অনেক দূর পৌঁছে গিয়েছে। ও সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে।

এখন মিটমাটের রাস্তায় গেলে আমি দোষী হয়ে যাব। সকলে বলবেন, শর্তসাপেক্ষে সমঝোতা করেছি। শামি আমার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করতে পারে।’’ পরক্ষণেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ও যদি সংসার বাঁচাতে চায়, বাচ্চার কথা ভাবে, তাহলে মিটমাটের কথা ভেবে দেখব।’’

যদিও শামির বিরুদ্ধে এদিনও নতুন করে কিছু বোমা ফাটিয়েছেন হাসিন। বলেছেন, ‘‘ভয়ের জন্য আমার সঙ্গে ভাল আচরণ করছিল ও। ২৩ তারিখ যখন ও এখান থেকে চলে যাচ্ছিল, সেদিনই ওর বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে ফোনটা পেয়েছিলাম। শামি যখনই উপলব্ধি করেছিল যে, ফোনটা নেই, আমার সঙ্গে মিষ্টি ব্যবহার করতে শুরু করে। সেই সময়ই হোলির ছবি তোলা হয়েছিল যেখানে আমাদের সুখী দেখিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘মোবাইল ফোনটা আমি পেয়ে না গেলে এতদিনে ও উত্তর প্রদেশ পৌঁছে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে দিত।’’

দেওধর ট্রফি খেলে উত্তর প্রদেশের বাড়িতে ফিরে শামি পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন, কারও প্ররোচনায় এমন করছেন হাসিন। যে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ক্ষিপ্ত হাসিন বলেন, ‘‘যখন উত্তর প্রদেশে ছিলাম, ওর কাকা-কাকিমা, পিসি-পিসেমশাই সকলেই ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল, আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিল। তাহলে এখন কে আমার পাশে দাঁড়াবে? যদি ও মনে করে কেউ ইন্ধন জোগাচ্ছে, তার নামটা বলুক! আমি তো আলিশবা, মঞ্জু, অর্পিতা, মহম্মদ ভাই, কুলদীপ ভাই— এরকম নাম ধরে ধরে বলছি। কে কোথায় থাকে, সেটাও বলছি। ও কেন হাওয়ায় তীর ছুড়ছে। সংবাদমাধ্যমে শামি ঘুরিয়ে কথা বলছে।’’

দুবাইয়ে রাত কাটানোর পূর্ব পরিকল্পনা থেকেই শামি দক্ষিণ আফ্রিকায় দলের কাছে জিনিসপত্র রেখে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন হাসিন। বলেছেন, ‘‘ধর্মশালায় যাওয়ার আগে কলকাতা থেকে ও দিল্লি যায়। দুবাইয়ে থাকবে বলে ও দলের সঙ্গে লাগেজ রেখে চলে এসেছিল। সঙ্গে নিয়ে আসেনি। সেই লাগেজ আনতেই দিল্লি গিয়েছিল। সেখান থেকে ধর্মশালা যায়। সরাসরি যায়নি। ধর্মশালায় পৌঁছনোর পরও শামির সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। সেই দিনই ওর ফোনের প্যাটার্ন লক খুলে সমস্ত কিছু চেক করেছি। ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ও-ই যোগাযোগ বন্ধ করেছে।’’

হাসিনের আইনজীবী জাকির হুসেন সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখতে চান। রবিবার হাসিনের পাশে বসেই সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘‘কে না চায় সমঝোতা করতে বা সংসার বাঁচাতে? ওদের তরফ থেকে সমঝোতার প্রস্তাব এসেছে। যদিও সরাসরি শামির তরফ থেকে কোনও ফোন বা মেসেজ আসেনি। তবু নিরীহ বাচ্চাটার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ও (পড়ুন হাসিন) সমঝোতার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে।’’
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, হাসিনকে মিটমাটের জন্য শামির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা বোঝাচ্ছেন তাঁর আইনজীবীও। তাতে যদি বরফ গলে!