২ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে পরীক্ষায় আফগান বধূ

পরীক্ষা চলাকালীন কাঁদতে থাকে দু’মাসের শিশু সন্তান। তাই বলে তো আর পরীক্ষার হল ছেড়ে বেরিয়ে আসা যায় না। তাই বাচ্চাকে কোলে নিয়েই সমাজ বিজ্ঞানের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিলেন আফগান গৃহবধূ। এজন্য পরীক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট চেয়ার ছেড়ে হলের মেঝেতেই বসতে হল তাঁকে। বাবু হয়ে বসে শিশু সন্তানকে রাখলেন কোলে। মেঝেতে রাখলেন পরীক্ষার খাতা। লিখতে লিখতেই চলল বাচ্চাকে শান্ত করার কাজ। পরীক্ষার হলে গার্ডের দায়িত্বে ছিলেন ওই ইউনিভার্সিটির লেকচারার ইয়াইয়া ইরফান। এই ঘটনাদৃশ্য তাঁকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে যায়। যেমনই ভাবা, তেমনই কাজ। নিজের স্মার্টফোনে সন্তান-সহ পরীক্ষার্থীর ছবি তুলে নেন তিনি। ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করতেই ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর মূল পোস্টটি ডিলিট করে দেন ওই লেকচারার। ততক্ষণে হাজার শেয়ার ছাড়িয়ে গিয়েছে পোস্টটি।

জানা গিয়েছে, পরীক্ষার্থী আফগান মহিলার নাম জাহান তাব (২৫)। তাঁর স্বামী পেশায় কৃষক। তিন সন্তানের মা জাহান চান স্বামীকে সহায়তা করতে। আফগানিস্তানের দায়কুন্ডি প্রদেশে তাঁদের বাড়ি। সেখান থেকে ছ’ঘণ্টার দূরত্বেই রয়েছে নিল্লি শহর। ওই শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নাসির খসরু হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর পাঠের সিদ্ধান্ত নেন জাহান তাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হতে গেলে তাঁকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে হবে। সেই মতো সংসার সামলে প্রস্তুতিও নেন ওই গৃহবধূ। ছ’ঘণ্টা গাড়িতে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যান পরীক্ষার হলে। তবে পরীক্ষা শুরু হতেই ঘটে বিপত্তি। দুমাসের শিশু সন্তান আচমকাই কাঁদতে শুরু করে। অন্য কোনও উপায় দেখতে না পেয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়েই পের পরীক্ষায় মন দেন জাহান তাব। ঘটনা হয়তো ওই হলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু লেকচারার ইয়াইয়া ইরফানের পোস্ট তাঁকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করে দিল। এক লহমায় নেটিজেনরা দেখতে পেল বাচ্চাকে সামলে মেঝেতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন জাহান তাব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠল প্রশংসার ঝড়। কেউ প্রতিকূলতাকে তুড়ি মেরে এগিয়ে যাওয়া আফগান মহিলাকে ‘লেজেন্ড’ বলে আখ্যায়িত করলেন। কেউ বা বললেন, ‘জাহান তাব একজন অনুপ্রেরণার নাম।’ ‘আফগান মহিলারা অপ্রতিরোধ্য।’ শুধু নেটিজেনরাই নয়, জাহান তাবের সতীর্থরাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেছেন জাহান তাব। তবে সংস্থার টিউশন ফি-র পরিমাণ দেখে তিনি বুঝেছেন, এখানে পড়াশোনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপরেই ‘আফগান ইউথ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের এক ব্রিটিশ সংস্থা দায়িত্ব নিয়ে জাহান তাবের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাড়ের কাজে নেমেছে। এজন্য সোশ্যাল সাইটেই লঞ্চ হয়েছে গো ফান্ড মি। হাজার আফগান মহিলা যারা প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়ে লড়ে যাচ্ছেন, তাদের রোল মডেল আখ্যা দেওয়া হয়েছে জাহান তাবকে।