মিশা-পূর্ণিমার ‘ধর্ষণ’ নিয়ে সমালোচনার ঝড়!

অভিনেত্রী পূর্ণিমা ও অভিনেতা মিশা সওদাগরের ধর্ষণ প্রসঙ্গে ‘হাস্য-রসাত্মক’ আলোচনা নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।ফেইসবুকে ধর্ষণের আলোচনার ভিডিও প্রকাশের পর অনেক ে একে ‘কুৎসিত’ বলেছেন। ধর্ষণের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়ে ‘নিরাবেগ ও রসাত্মক’ আলোচনার সমালোচনা করেছেন অনেকে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ১৭ মার্চ আরটিভিতে প্রচারিত ‘এবং পূর্ণিমা’ টকশোর। দিলারা হানিফ পূর্ণিমার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন খলনায়ক মিশা সওদাগর।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে পূর্ণিমা হাসতে হাসতে সহ অভিনেতা মিশাকে প্রশ্ন করেন, তিনি চলচ্চিত্রে কতবার ধর্ষণ করেছেন? কোন নায়িকার সঙ্গে ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

তাদের আলোচনা দেখে ফেইসবুকে অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণ দৃশ্য যে যৌন সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য আরোপ করা হয়, দুই অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথায় তারই যথার্থতা মেলে।

দেশে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা ধর্ষণের পেছনে গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্রের ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান বলেন, “যখন ধর্ষণ হাস্যরসাত্মকভাবে উপস্থাপিত হবে গণমাধ্যমে, তখন অবশ্যই তা মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে, যারা ধর্ষক তারা আরও অনুপ্রাণিত হবে। একে তো আমরা বিচার পাচ্ছি না, বিচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে এভাবে রসাত্মকভাবে কথা বলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।”

এই আইনজীবী বলেন, “এটা এক ধরনের পর্নোগ্রাফি, শুধু ছবিতে যা দেখি তা পর্নোগ্রাফি নয়… ধর্ষণ নিয়ে ভালগার কথা বলাও পর্নোগ্রাফি। ধর্ষণের মতো সিরিয়াস বিষয়ে তারকাদের এরকম কথাবার্তা খুবই কুৎসিত ও অমার্জিত, তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বলেন, “এ ধরনের প্রশ্ন করা উচিৎ হয়নি, ধর্ষণ একটি স্পর্শকাতর বিষয় ও অপরাধ, এটি কোনো ফানের বিষয় নয়। প্রশ্নকর্তা (পূর্ণিমা) নিজে একজন নারী এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়ে এরকম বিষয় নিয়ে হাসিতামাশা করতে পারেন না, তার অপরাধ হয়েছে। অনুষ্ঠানটা প্রচার করে অনৈতিক কাজ করেছে চ্যানেলটি। এটি এমনই একটি অপরাধ, যার কোনো ক্ষমা নেই।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন ফেইসবুকে লিখেছেন, “ফর্মুলা ফিল্মগুলোতে ধর্ষণ যতবার উপস্থিত হয়, তা গল্পের প্রয়োজনে নয়, ধর্ষণ উপযোগী করে চিত্রনাট্য রচিত হয়। তার সঙ্গে থাকে যৌন নিপীড়নের রোমান্টিককরণ। সিনেমা জগতের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দায়িত্ব এই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যৌন অপরাধের স্বাভাবিকীকরণকে প্রশ্ন করা। এ অবস্থার পরিবর্তনে কাজ করা। এ নিয়ে হাসাহাসি করা নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি টিভি আলাপে পূর্ণিমা ও মিশা সওদাগর যেভাবে আলাপ করেছেন, তা ‘ধর্ষণ’ ফমুর্লা ফিল্মে যে একটি বিনোদন উপকরণমাত্র, সেই অসহ্য সত্যকেই পুনঃদৃঢ় করেছে।”

আলোচনা অনুষ্ঠান ধরে সমালোচনার মুখে ক্ষমা চাইছেন অভিনেত্রী পূর্ণিমা। পূর্ণিমা বলেন, ““আমি যদি কোনো ভুল বা অন্যায় করে থাকি বা কারও মনে আঘাত করে থাকি এই বিষয়টা তুলে এনে, আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি কাউকে আঘাত করার জন্য, কাউকে নিচু করার জন্য বা বিষয়টি নিয়ে হাস্যকর কোনো কিছু করার জন্য কাজটা করিনি।”

নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় চলচ্চিত্র জগতে পা রাখা পূর্ণিমা বলেন, “আমি যখনই এধরনের (ধর্ষণের) সংবাদ দেখি তখন আমার চোখ দিয়ে পানি আসে। আমি নিজেও একজন নারী। আমার সন্তান আছে। আমিও বাকিদের কথা চিন্তা করি। এরপর থেকে আমি সাবধানেই কথা বলব,” বলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেত্রী।

পূর্ণিমার সঙ্গে খানিকটা সহমত পোষণ করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশাও।

তিনি বলেন, “প্রশ্নকর্তাকে এমন কোনো প্রশ্ন করা উচিৎ নয়, যেটা আমাদের সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলে। প্রডিউসার কিংবা স্ক্রিপ্ট রাইটারকে অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিৎ যাতে সমাজে খারাপ প্রভাব না ফেলে। কারণ আমাদেরকে মানুষ বেশি ফলো করে। সাধারণ মানুষ করলে এটা হত না… আমি মনে করি, সমাজে যাতে কোনো খারাপ প্রভাব না আসে সে ব্যাপারে প্রশ্নকর্তা ও প্রডিউসারদের সতর্ক হওয়া উচিৎ।”

অনুষ্ঠানটির প্রযোজক সোহেল রানা বিদ্যুৎ বলেন, “আমি স্বীকার করি অকপটে, আমাকে আরেকটু সংযত হওয়া উচিৎ ছিল কিংবা দৃশ্যটুকু কেটে বাদ দিতে পারতাম। সেই জায়গা থেকে আমার একটু ভুল হয়ে গেছে হয়তো বা। দর্শকদের উস্কে দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। আমাদের কাজ দর্শকদের বিনোদন দেওয়া… পরবর্তীতে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে অবশ্যই আমি সতর্ক থাকব।” সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম