ঠাকুরগাঁওয়ে পাট চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কৃষক

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও জেলা পীরগঞ্জ উপজেলায় পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এক সময়ের সোনালি আঁশ খ্যাত পাট এখন বিলুপ্তির পথে। কৃষিজমি অকৃষিতে পরিণত হওয়া, স্বল্প সময়ে অধিক ফসল ফলানোর প্রবণতা, পাট পচনের পানি সংকটসহ বিভিন্ন কারণে পাট চাষে কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বেশি ও পাট ছড়ানো পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

১ বিঘা জমিতে গড়ে ৭ থেকে ৮ মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ক্ষেত্রে বাজারমূল্যে হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক লোকসান দিয়ে পাট চাষ করতে চাচ্ছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, ষাটের দশকে বিভিন্ন এলাকায় পাটক্রয় কেন্দ্র ছিল, আবার বড় বড় জুট মিলের চাহিদা পূরণ করে কৃষকরা পাট চাষ করে বেশ লাভবান হতেন।

অপরদিকে ক্রয় কেন্দ্রগুলো পাট সংগ্রহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করত। ফলে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকায় কৃষকরাও ব্যাপক হারে পাট চাষে ঝুঁকে পড়তেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে লক্ষমাত্রা অর্জন করা হয়েছে ১হাজার ১৫ হেক্টর।

তার মধ্যে তোশা পাট ৮০০ হেক্টর ও দেশি পাট ১৫০ হেক্টর। গত বছর তুলনায় এবার নিচে নেমে আসায় গত বছরের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এভাবে দিন দিন পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। এদিকে অল্পসংখ্যক কৃষক যারা পাট চাষ করছেন, জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে এলেও তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ও এলাকার বেশির ভাগ খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা চিন্তিতদ হয়ে পড়েছেন।

পানি না থাকায় তারা পাট পচানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এতে পাটের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে কৃষকরা জানান। পালিগাঁও ও জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মোন্নাফ জানান, বর্তমানে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এক বিঘা জমির পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে যে কয়েকজন দিনমজুর লাগে তাতে আগের খরচ মিলিয়ে মণ প্রতি পাটের দাম পড়ে ১ হাজার টাকার বেশি।

আবার পাট পচনের খাল-বিলগুলোতে পানি নেই, কোনো কোনো খালে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাট জাগ দেয়া যায় না। প্রতি বছর মণপ্রতি পাটের বাজারমূল্যে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেশি এবং বাজারমূল্য কম হওয়ায় আমরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।

চন্দোরিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছর ধরে ১বিঘা জমিতে পাট চাষ করে পাট জাগ দেয়া পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাই এখন কলা চাষ করি। এতে পরিশ্রম কম লাভ বেশি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবীদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার মোটামোটি পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে ও সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হলে পাট পচানো সহজ হয়ে লক্ষমাত্রা অর্জন হবে।