নানা পরিচয়ে ফরহাদের অভিনব প্রতারণার কৌশল, সর্বশান্ত ব্যবসায়ীরা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নানান পরিচয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় কৌশলে একাধিক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে বেড়াচ্ছেন ফরহাদ উদ্দীন চৌধুরী। কখনো ডিম ব্যবসায়ী, কখনো প্রবাসী,কখনো স্বর্ণ ব্যবসায়ী, কখনো ব্যাংক লোন কর্মকর্তা, কখনো উন্নয়ন পরিষদের নেতা, কখনো বড় গ্রুপ অব কোম্পানি চেয়ারম্যানের বড় ভাই।

অভিনব এক অঙ্গে বহু রুপ । আবার কখনো বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও পরিবেশক সেঁজে দিনের পর দিন প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা, এমনকি দোকানদার হতে স্বর্ণ, মোটন সাইকেল, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ফার্নিচারসহ লাখ লাখ টাকার পণ্যও।

শুধু তাই নয়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরি দেয়া, মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা দেওয়া, সাধারণ ব্যবসায়ীদের দ্বিগুণ টাকার লোভ দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ জালিয়াতির আরও চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সিএমপি পুলিশ কমিশনার, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি), রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী থানায় রয়েছে একাধিক অভিযোগের ফিরিস্তি। কিছু কিছ জায়গায় মামলা অভিযোগ হলেও বারংবার আইনের চোখকে ফাকিঁ দিয়ে এখনো প্রতারণা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরহাদ উদ্দীন চৌধুরী পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের তালেব আলীর বড় পুত্র। একজন ক্ষুদ্র ডিম ব্যবসায়ী। অথচ সাধারণ মানুষ সহ তার প্রতারণার শিকার চট্টগ্রামের শতাধিক ব্যবসায়ী,ডিলার ও পরিবেশক। সামান্য ডিম বিক্রেতা হয়েও নিজেকে দেশের স্বনামখ্যাত কাজী গ্রুপ, থাইফুড,ওয়েলফুডের ডিম সরবরাহকারী ডিলার হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ঢাল বিস্তার করেছে পুরা নগরীর আনাচে কানাচে।

এ কৌশলে শিকার করে যাচ্ছেন একের পর এক নিত্য নতুন ব্যবসায়ীদের। যিনি বর্তমানে পটিয়ার ডেঙ্গাপাড়া খান মোহনা ষ্টেশনে প্রতারণার নতুন কৌশল নিচ্ছে বলে জানা যায়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়ার উপজেলার ১৪নং দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ২৮জন ব্যবসায়ীকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেয় প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা এবং ইপিজেড বন্দর এলাকা হতে ২১ (একুশ) লক্ষ টাকা ,কর্ণফুলী এলাকা হতে ২(দুই) লক্ষ ৩৫ হাজার। এভাবে পটিয়া, আনোয়ারা, চকরিয়া, মীরসরাই উপজেলা হতে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে নগদ অর্থ ও মুল্যবান জিনিসপত্র।

ঘটনার পর ভোক্তভোগীরা তাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ ফেরত চাইলে নিজেকে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার ভাগ্নে ও দেশের এক বড় ব্যবসায়ীর ভাতিজা পরিচয়ে গুম করে ফেলারও হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। অভিনব এই প্রতারকের ফাঁদে পড়ে যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন। তাদের কয়েকজনের নাম আমাদের প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ডিম ব্যবসার কথা বলে দ্বিগুন লাভের লোভ দেখিয়ে কর্ণফুলী উপজেলার হাজী টাওয়ার মিষ্টিমূখের মালিক জাহাঙ্গীর আলম হতে ২ (দুই) লক্ষ টাকা, রাঙ্গুনিয়া খোরশেদ তালুক গ্রামের মোহাম্মদ নুরুল আলমের পুত্র মোহাম্ম সেলিম হতে ৬ (ছয়) লক্ষ টাকা,জালাল ফকির পাড়ার বদিউল আলমের পুত্র মোঃ নজরুল ইসলাম হতে ১ (এক) লক্ষ ৮০হাজার, কাজী পাড়া গ্রামের ইসকান্দরের পুত্র মোঃ আনাস হতে ১ (এক) লক্ষ ১০হাজার,খোরশেদ তালুক পাড়ার রুহুল আমিনের পুত্র মোঃ জামাল হতে ১ (এক) লক্ষ ৮০ হাজার, একই পাড়ার কুতুব উদ্দিনের পুত্র মোঃ সাব্বির হতে ১ (এক) লক্ষ ৫০হাজার, চরপাথরঘাটার সাম্পান চালক শুক্কুর হতে ৩৫হাজার, কাজী পাড়ার আবুল কাশের এর পুত্র মোঃ মাসুদ হতে ২ (দুই) লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এমনকি একই প্রতারক মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা দিবে বলে রাঙ্গুনিয়ার কোদালা স্বর্ণের দোকান মালিক অজিত মহাজনের পুত্র বি ু বনিক হতে ১ (এক) লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৫ টাকা, ঘাটচেক পৌর এলাকার ছাবের সওদাগরের পুত্র মোঃ ইসমাঈল হতে ৭০ হাজার, একই এলাকার মোঃ জামালের পুত্র জাহেদ হতে ৫০ হাজার, আকবর তালুকদার বাড়ির আব্দুল বারেকের পুত্র দিদার হতে ১০ হাজার, তালুক পাড়ার আহম্মেদ হোসনের পুত্র মোঃ সিরাজ হতে ২৫ হাজার, কাজী পাড়ার ফরিদুলের পুত্র আনিছ হতে ৩৫ হাজার টাকা প্রতারণাপুর্বক আতœসাৎ করে।

এমনকি আরো বিচিত্র নানা প্রতারণায় রাজানগর ইউনিয়নের জালাল ফকির পাড়ার শামশুল আলমের পুত্র রহিম বাদশা হতে ৬০ হাজার টাকা, বশাক পাড়ার ফনিন্দ্র মালাকারের পুত্র দ্বীপক মালাকার হতে ১০ হাজার, মোঃ শফুর আলমের পুত্র মোঃ সেকান্দর হতে ১৫শত, তপন নাথের পুত্র সুমন নাথ হতে ২হাজার, গজালিয়া বাড়ির নুরুন্নবীর পুত্র জিসান হতে ১৪ হাজার, হিন্দু পাড়ার ধামাইর পুত্র কুমার দাশ হতে ২৭ হাজার, ওমেন্স ওয়ার্ল্ড দোকান মালিক ইসমাইল হতে ৬ হাজার, চৌধুরী বাড়ির নুরুল ইসলামের পুত্র নুরুন্নবী হতে ১ (এক) লক্ষ ৩৫ হাজার, লাইফ স্টাইল দোকান মালিক সোহেল হতে ১২ হাজার, বশাক পাড়ার হরিলাল দাশের পুত্র পলাশ দাশ হতে ৪ হাজার,কবির আহম্মেদ পুত্র শাহ আলম হতে ২ হাজার,আহম্মেদ মিয়ার পুত্র খোরশেদ হতে ৬ হাজার, মরিয়ম নগর গ্রামের হোসনুর পুত্র নুরুল ইসলাম হতে ১ (এক) লক্ষ টাকা ও একই গ্রামের হাজী জালাল আহম্মদের পুত্র নজীর শাহ্ হতে ৪ হাজার সহ লাখ লাখ নগদ অর্থ হাতিয়ে নিরাপদে সরে পড়ে।

ভিন্ন প্রক্রিয়া ব্যাংক হতে লোন পাইয়ে দেওয়ার বলে রজক সিকদার বাড়ির ফিরোজ আহস্মদের পুত্র মোরশেদ হতে ১ (এক) লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ও তালুক পাড়ার মতলব সওদাগরের পুত্র সোহেল হতে ১৫ হাজার নগদ অর্থ হজম করে সে। প্রতারকের ফোনে একাধিকবার রিং করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ফরহাদ কতৃক প্রতারণার শিকার রাঙ্গুনিয়ার মোহাম্মদ সেলিম বলেন, এই ডিম ব্যবসায়ী প্রতারকের শিকার হয়ে আমি স্বর্বশান্ত হয়ে গেছি। বর্তমানে দেনার দায়ে এলাকা ছাড়া। বেশ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি। এখন একটাই চাওয়া,প্রশাসন যেন ফরহাদ উদ্দীন চৌধুরী এ প্রতারককে ধরা ফেলে।

কর্ণফুলী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলম বলেন- থাইফুডে ডিম সরবরাহকারী বলে পরিচয় দিয়ে যৌথ ব্যবসার প্রস্তাব দিলে রাজি হই। পরে ২০ হাজার ডিম সরবরাহ করবে বলে দুই লাখ টাকা নিয়ে এলাকা থেকে পালিয় যায় ফরহাদ।

এ বিষয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন- শতাধিক ব্যবসায়ীর সাথে ডিম ব্যবসার নামে প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়াও ভিসা দেওয়ার কথা বলে বহুজনের সাথে প্রতারণা করেছে সে। চেষ্টা চলছে আইনের আওতায় আনার এমনটি জানান তিনি।