বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে আলোর পথে ৬০ কিশোরী

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সাহস দেখিয়ে প্রথমবারের মতো নিজের বাল্যবিবাহ নিজে ঠেকিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছিল দুওসুও উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী তসলিমা আক্তার। এ নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদ গত ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাল নবম শ্রেণির ছাত্রী তসলিমা শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।

সে থেকেই নিজ বাল্যবিবাহ ঠেকানোর যাত্রা হয়েছিল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কিশোরীদের। এক এক করে গত এক বছরে ৬০ জন কিশোরী তার নিজ বাল্যবিবাহ নিজে ঠেকিয়েছে। প্রথম প্রতিরোধকারী স্কুলছাত্রী তসলিমা আক্তার জানান, তাকে না জানিয়ে তার বাবা আবুল কাশেম বিয়ে ঠিক করে ছিল। বিষয়টি জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আ. মান্নানের সহযোগিতা নেয়।

পরে ইউএনও স্কুলে উপস্থিত হয়ে বাল্যবিবাহ পন্ড করেন এবং ছাত্রীর বাবা-মায়ের নিকট মেয়ের উচ্চশিক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি নেন। একইভাবে শাহানাজ পারভীন, সুমি, নিপাসহ উপজেলার ৬০ জন কিশোরী প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাহায্য নিয়ে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড.টি এম মাহবুবর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এ উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্টুডেন্ট ডাটাবেজ প্রকল্প চালু হওয়ার পর বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এলাকায় সামাজিক বিপ্লব শুরু হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে গড়ে ওঠেছে ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ মঞ্চ’। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে উঠান বৈঠক ও জারি গানের মাধ্যমে। গত ১৮ জুলাই স্টুডেন্ট ডাটাবেজ প্রকল্পটির শুভ উদ্বোধন করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এসএসসি পাস করার আগে ৫৫ ভাগ ছাত্রী ঝরে পড়ত।

কারণ বাল্যবিবাহ ও দারিদ্র্য। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া বিষয়টি নজরে আসে বালিয়াডাঙ্গী নির্বাহী কর্মকর্তার। ২০১৫ সালের জুনে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক কর্মসূচি। পরে তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও স্কুলে ঝরে পড়া রোধকল্পে একটি উদ্ভাবনী ধারণা পাঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তিনি আরো জানান, ইউএনওর দেওয়া ধারণা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী দফতরের এটুআই প্রকল্প পরিচালক।

শুরু হয় বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, যৌতুক, নারী নির্যাতন ও মাদক প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ। এ ছাড়াও কাজী ও নিকাহ রেজিস্ট্রার, ইমাম, পুরোহিত, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-অভিভাবক ও গ্রাম পুলিশকেও এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সহায়তা।

জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. মান্নান বলেন, উপজেলার ৬২টি স্কুল-মাদরাসার ১৭ হাজার শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ডাটাবেজের আওতায় আনা হয়েছে বাল্যবিবাহ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ড্রপআউট প্রতিরোধে। এ ডাটাবেজে বাদ পড়েনি শিক্ষক, কাজী ও নিকাহ রেজিস্ট্রার, ইমাম, পুরোহিতরাও।