কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা ফারিয়ার

ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের কিশোরী ক্লাব “বনফুল” এর কিশোরী সদস্য ফারিয়া আক্তার (১৬)। এবছর অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এসএসসি তে ‘এ’ গ্রেড ফলাফল নিয়ে স্থানীয় ধনিয়া আব্দুল মান্নান দাখিল মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছে। পিতা হারা ফারিয়া সপ্তম শ্রেনীতে পড়াশোনা অবস্থায় তার বাবা মারা যায়।

তার পর অনেক কষ্ট করে আত্মীয় স্বজনের সহায়তায় নিয়ে মা বিবি হাজেরা ফারিয়াদের পড়াশোনা খরচ চালাচ্ছে। বর্তমানে ফারিয়া বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাষ্ট এর আইইসিএম প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’ নিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে কাপড় চোপড় সেলাই করা অর্থ দিয়ে পড়াশোনারা খরচ চালাচ্ছে।

যা সহায়তা করছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। সেলাই করার অর্থ দিয়ে ফারিয়া এখন কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিচ্ছে। ফারিয়ার স্বপ্ন বড় হয়ে সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। ফারিয়া জানায়, আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন আমাদের ৩ বোনকে রেখে বাবা মারা যায়। মা অনেক কষ্ট করে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা সহায়তা নিয়ে আমাদের সংসার চালাচ্ছে।

তার উপর আমাদের ৩টি বোনরে পড়াশোনার খরচ চালানো অনেক কষ্ট সাদ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এমনকি আমার বড় বোন মিম অনার্সে ভর্তি হলেও টাকার অভাবে বই কিনতে পারেনি । শুধু তাই নয় আমাদের বই পর্যন্ত কিনতে পারি নাই। অন্যর কাছ থেকে পুরাতন বই ধার করে এনে আমারা পড়াশোনা চালাচ্ছি।

ফারিয়া আরো জানায়, আমি ২০১৭ কোস্ট ট্রাস্ট এর ওয়ার্ড প্রমোটর নাজমা আপার মাধ্যমে কিশোরী ক্লাব বনফুল ক্লাবের সদস্য হই। সেখান থেকে আমাকে দারিদ্রতা ও বাল্য বিয়ের ঝুকিঁ ক্যাটাগরিতে ১৫ হাজার টাকার শিশু সুরক্ষা বৃত্তি পাই। সেই বৃত্তির টাকা দিয়েই আমি সেলাই মেশিন কিনি। স্থানীয় ভাবে প্রশিক্ষন নিয়ে এখন স্থানীয় মানুষের জামা-কাপড় সেলাই করে মাসে পাচঁশত টাকা থেকে-এক-হাজার টাকা আয় করি। শুধু তাই নয় বাড়তি অয়ের জন্য হাসঁ-মুরগী কিনে পালন করছি।

এখন সেই অর্থ দিয়ে আমার এবং আমার বোনদের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। বর্তমানে লাভের টাকা দিয়ে আমি স্থানীয় ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য কেন্দ্রে কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিচ্ছি। ভবিষৎতে আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আমি আমার পরিবারের অভাব অনটন দূর করতে চাই।
আমি দেখিয়ে দিতে চাই মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলে মানুষ যে কোন অসাদ্যকে সাধন করতে পারে।

ফারিয়া তার স্বপ্ন পূরনে পথে পাশে থাকার জন্য ইউনিসেফ ও কোস্ট ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান। ফারিয়ার মা বিবি হাজেরা বেগম বলেন, ওদের বাবা মারা যাওয়ার পড়ে আমাদের সংসারে যেন অন্ধকার নেমে আসে। অনেক কষ্ট করে আমার ৩ মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। এর মধ্যে মেঝে মেয়ে ফারিয়ায় পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য কোস্ট ট্রাস্ট ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এর জন্য কোস্ট ট্রাস্টকে ধন্যবাদ।

আমি চাই আমার ৩ টি মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। এর জন্য আমি কষ্ট করে যাচ্ছি। কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের ওয়ার্ড প্রমোটর ফাতেমা বেগম জানান, আমরা ফারিয়ার মতো একজন মেধাবী মেয়ের পাশে দাড়াঁতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সে আমাদের ক্লাবের রোল মডেল । ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ফারিয়া ভূমিকা রাখছে। এখন কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে অন্যদের কে কম্পিউটার প্রশিক্ষন নেয়ার জন্য আগ্রহী করে তুলছে।

কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: মিজানুর রহমান জানায়, ভোলা, লালমোহন, চরফ্যাশনের প্রান্তিক ও অবহেলিত, বিদ্যালয় হতে ঝড়ে পড়া, এতিম, অশ্রিত, বিশেষ গুন সম্পন্ন প্রতিবন্ধী এবং শিশু বিবাহের ঝুঁকিতে থাকা এমন ৪০৮জন কিশোরীর মাঝে এক কালীন ১৫ হাজার টাকা ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’ প্রদান করা হয়।

এই টাকা পেয়ে স্ব-স্ব কিশোরী এখন স্বাবলম্বী। তারা তাদের নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের খরচও চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেকাংশেই শিশু বিবাহ কমিয়ে আনার পাশাপাশি পরিবারের স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে। বিশেষ করে আমাদের বৃত্তি পেয়ে অনেক পরিবার এখন স্বাবলম্বি হচ্ছে। আর শিশুরাও এখন অনেক কিছু করতে পারছে।

যেমন ফারিয়া কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে অন্যন্য শিশুদের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভবিষ্যৎ আমরা আরো বৃত্তি দেয়ার চেষ্টা করবো। এর ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়াও শিশু বিবাহর সংখ্যাও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।