কর্ণফুলীতে রহস্যময় দুই আলিশান বাড়ি, নজরে রেখেছে গোয়েন্দারা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রাম। বিএফডিসির ঠিক বিপরীতে ডায়মন্ড সড়কের বাঁ পাশের গ্রামীণ সড়ক দিয়ে একটু ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে দুটি আলিশান বাড়ি। প্রায় ১০ থেকে ১৫ গন্ডা জমির উপর বাড়ি দুটির বাউন্ডারি।

দেখতে সুবিশাল রাজপ্রাসাদের মতোই। ভেতরে সব ফিটিংস বিদেশী। বাড়ির ছাদে রয়েছে ভিন্ন পরিবেশের বৈঠক ঘরও। বাড়ি দু’টি রাজপ্রাসাদের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে ইছানগর গ্রামে। নীল রংয়ের পাঁচতলা বাড়িটি হেলাল নামে এক ব্যক্তির।

গোল্ডেন কালারের চারতলা বাড়িটি হাজেরা মঞ্জিল নামে পরিচিত। যার মালিক টেকনাফের মোহাম্মদ হোসেনের বলেও প্রচলিত। মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলে দুজনেই মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে পাড়ি দিয়েছেন বলে খবর রটেছে। আদৌও সত্যিই কিনা কেহ জানেনা।

এদিকে দৃষ্টিনন্দন এ বাড়ি দু’টিতে কারা বসবাস করে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনা স্থানীয় জনগণও। বাড়ির দরজায় রয়েছে দু’টি বড় স্টিল গেইট। তথ্যমতে কেয়ারটেকার হিসেবে তাহের ও আমিন নামে দুজন লোকের নাম পাওয়া যায়।

শহর থেকে একটু দূরে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় ইছানগর গ্রামে। গ্রামের মেঠোঁপথে কাদা ধূলাবালি মাড়িয়ে এমন দু’টি বিলাসবহুল বাড়ি। এখানে মিলবে তা কারো কল্পনাকেও হার মানায়। লোকচক্ষুর অন্তরালে গড়ে তোলা বিলাসবহুল এ বাড়ির প্রকৃত মালিক কারা? তাদের বৈধ ব্যবসা কি? তা ও জানাতে পারেননি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য নিজেরাও ভালো করে চিনেনা জানেনা। বিশেষ সুত্রে জানা যায়, রহস্য ঘেরা এ বাড়ি দু’টির প্রকৃত মালিকের হদিস ও তাদের আয়ের উৎস সর্ম্পকে জানতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা বাহিনী ও দুদক। সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীও নজর রেখেছে এই দুটি বাড়ির দিকে। কেননা কর্ণফুলীতে জঙ্গিবাদের ইতিহাস মতে সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যায়না।

চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বাসিন্দারা সঠিক তথ্য দিতে না পারলেও অনেকে বলেছেন, বাড়ি দুটির মালিক টেকনাফ থেকে আগত। ওরা কিছুদিন আগে ইছানগরের মীর্জা বাড়ির হাফেজ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি ক্রয় করে। পরে দ্রুতই নির্মাণ করে দু’টি বহুতল ভবন ।

অভিযোগ ওঠেছে, রহস্যময় এ দুটি প্রাসাদের যারা মালিক, তাঁরা টেকনাফের ভয়ঙ্কর মাদক ব্যবসায়ী। যারা টেকনাফ পুলিশের খাতায় ওয়ান্টেট ক্রিমিনাল। টেকনাফের এই কথিত ভবন মালিকেরা কর্ণফুলীতে আসার পর থেকেই এখানে মাদকের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে স্থানীয়দের মাঝে অভিযোগ ওঠেছে।

আহম্মেদ নামক এক লোক জানান, ওখানে পাঁচতলা বাড়ির মালিক হেলাল নামে কেউ একজন। যিনি স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বড় ডোনার করেছেন ইছানগরেই। তবে তাকে কেউ দেখেনি বলেও দাবী অনেকের।

মজার বিষয় হলো, এ বাড়ীর মালিকরা কেউ এখানে থাকেন না। তবে মাস পরে কিছু সময়ের জন্য কেউ কেউ রাতে আসে, আবার কেউ গভীর রাতে চলে যায়। এমনটি তথ্য পাওয়া যায়। নিজেদের রয়েছে কালো রংয়ের বিলাসবহুল গাড়ি।

যাতে ফিট করা বেলজিয়াম আয়না। ভেতর হতে সব দেখা যায় কিন্তু বাইরে হতে কিছু দেখা যায়না। যদিও সারাদেশে রহস্যজনক কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই আছেন ইয়াবা গডফাদারেরা! যাদের হাত ধরে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মরণ নেশা ইয়াবা ।

এই ইয়াবা নামের আলাদিনের চেরাগের ছোঁয়ায় এরা এখন কোটিপতি। রূপকথার গল্প নয়, সত্যি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোটিপতি বনে যাওয়ার গল্প রূপকথাকেও হার মানাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ভাগ্য ফেরানোর নানা গল্প আমরা শুনি থাকি। এদের কেউ ছিলেন দিনমজুর, নয়তো জেলে, নয়তো সামান্য মুদি দোকানি।

জানা যায়, একটি বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী বিলাসবহুল এ বাসাবাড়ি দুটির তথ্য নিচ্ছে। কেননা কর্ণফুলী খোয়াজনগরে বোমাসহ জঙ্গি আটকের পর সকল ভাড়াটিয়াদের ও বাড়ির মালিকদের তথ্য প্রেরণের নির্দেশ থাকলেও,এখনো বাড়ি দুটির মালিক ও ভাড়াটিয়ার কোন তথ্য থানায় যায়নি বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহের জানান, “আসলে আমরাও শুনেছি ইয়াবা ব্যবসা করে, ওরা টেকনাফ হতে এখানে এসে বাড়ি করেছে। কিভাবে কি করে তেমন কিছু আর জানিনা ।

জানা যায়, নানা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এখন বিলাস বহুল বাসা বাড়ি দুটির দিকে। যদিও এলাকাবাসী জানান, সাদা পোশাকে কারা জানি মাসিক মাসোহারাও নিতে যায় ওই বাড়ি হতে।

১৩ বছর যাবত ঐ এলাকায় বসবাস করা এক রিক্সা চালক আবদুল্লাহ জানান, দুটি বাড়ির মালিকেই টেকনাফের। ওরা মামা ভাগ্নে সম্পর্কে শুনেছি। আরো জানা যায়, হেলাল সুকৌশলে নগরীর রাহাত্তারপুল এক কিঃ মিঃ এলাকায় আরেকটি বাড়িতে বসবাস করে। মাঝে মধ্যে শহর হতে রাতে আসা যাওয়া করে।

দুটি বাড়ির কেয়ারটেকার ও দায়িত্বে থাকা বাড়ির মালিকদ্বয়ের আপন ভাই পরিচয়ধারী তাহের ও আমিনের সাথে কথা হয় আমাদের প্রতিবেদকের। তাদের কাছে বাড়ির মালিকের ফোন নাম্বার জানতে চাইলে দুজনেই জানান, ইমোতে কথা বলে তাদের সাথে বাড়ির মালিক এবং তাদের কাছে কোন নাম্বার নেই। শত চেষ্টা করেও বাড়ির দু মালিকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কর্ণফুলী এলাকার এক ব্যবসায়ী শাহ্ আলম বলেন, বাড়ি দুটি দেখে অবাক হয়েছি। এই টাকার উৎস কোথায় তা খতিয়ে দেখা দরকার সরকারের। কেননা এমন গ্রাম এলাকায় টেকনাফের কারা এই আলিশান বাড়ি তৈরি করেছে। তাদের ব্যবসার উৎস নিয়েও এলাকার মানুষ এখন সন্দিহান বলে জানান তিনি।

থানায় বাড়ির মালিকের কোন তথ্য রয়েছে কিনা জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ওসি সৈয়দুল মোস্তফা জানান, দেখতে হবে এ বাড়ির তথ্য জমা রয়েছে কিনা। আমরা ও নানা অভিযোগ পেয়েছি। কর্ণফুলী থানা পুলিশ সব সময় সতর্ক রয়েছে।