কর্ণফুলী আনোয়ারা দুই উপজেলায় তৃণমূলে ছাত্রলীগের ভাবনা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ । ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় আগামী কমিটিকে ঘিরে তৃণমূল ও জেলার সর্বত্রই এখন সরব। কেননা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অতি নিকটবর্তী উপজেলা হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আন্দোলন সংগ্রামে খুবই গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতে হয় দুই উপজেলার ছাত্রনেতাদের।

কেমন হবে আগামী নেতৃত্ব? কারা আসছেন কর্ণফুলী আনোয়ারায়? আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে কি নতুন নেতৃত্ব? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আলোচনার আসর যেন জমে উঠেছে দুই উপজেলার ছাত্রলীগের তৃণমূলে। ছাত্রসংগঠনের সম্ভাবনাময় শাখা কর্ণফুলী আনোয়ারা। আগামী নেতৃত্বকে সামনে রেখে সেই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেমন হতে পারে তা নিয়ে অনেকে মতা প্রকাশ করেছেন আমাদের প্রতিবেদকের কাছে। জানিয়েছেন তাদের আবেগ অনূভুতি, ছাত্রলীগের আসন্ন নতুন কমিটি নিয়ে তৃণমূল এর ভাবনা।

যা সরাসরি তুলে ধরা হলো -জুলধা ইউনিয়ন শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল হক চৌধুরী বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের এমন নেতৃত্ব চাই, যাঁরা দলের দুঃসময় আসলে দেশবিরোধী চক্রের সামনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার সৎ সাহস রাখবে এবং এমন কেহ আসবে যারা অতীতে ও বিভিন্ন সময়ে মাঠে প্রমাণ করতে পেরেছে নিজেদের।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে সময়ের প্রয়োজনে গড়ে উঠা মুক্তিযুদ্ধের অগ্রভাগে থেকে অংশগ্রহণ করা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের কর্ণফুলী আনোয়ারায় দুটি শাখা আগামী আগষ্ট কিংবা চলমান মাসেই ঘোষনা হতে পারে। এ নতুন কমিটিতে কারা আসছেন? তাদেরকে ঘিরে সমগ্র উপজেলায় বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লষেণ শুরু হয়েছে।

থাকারই কথা, বাঙ্গালি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন এবং রক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৪৮ সালে গড়ে উঠা এ সংগঠনের অবদান সম্পর্কে সর্বমহল জ্ঞাত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী মানুষগুলো এ সংগঠনের আগামী নেতৃত্ব নিয়ে আশাবাদী হবেন এটা খুবই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কেননা বাংলাদেশ ছাত্রলীগই একটি সংগঠন যা সারা বাংলাদেশের সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব করে। সেজন্যেই সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরাও এ সংগঠনের আগামী নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

‌কথাগুলো বলার কিছু কারণও জানান কিছু ছাত্রনেতারা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মত বৃহৎ এ সংগঠনের ধারক ও শুভকাংখীদের সংখ্যা সকলে ধারনা করতে পারে। একাধিক ছাত্রনেতার দাবি, উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত ছাত্রলীগের প্রতিটি পরিক্ষিত কর্মীই নিজের সর্বোচ্চ উজাড় করে দিতে চায় দলের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে।

দুই উপজেলার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দাবি, জনগণ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে চায় যার মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসা। প্রতিটি কর্মীর অধিকার ও মতামত এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সারাদেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে তৃণমূলের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়াটা সময়ের দাবী বলে জানান তাঁরা।

আনোয়ারার এক ছাত্রনেতা জানান, ছাত্রলীগ শুধু নির্দিষ্ট অ লেই নয়, সারাদেশের প্রতিটি উপজেলা ও প্রান্তেই ভাল কাজের মধ্য দিয়েই তার সুনামের বিস্তার ঘটিয়েছে। বিশ্ব মানবতা যেখানে লুন্ঠিত হয় সেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় এর নেতৃত্বে টানা ৩০০ দিনের মতো অধিক সময় ফ্রি-চিকিৎসা সেবা । এমনকি ওষুধ বিতরণ করে বিশ্ব মিডিয়ায় তাক লাগিয়েছেন বলে তথ্য দেন তিনি।

তথ্যসুত্রে জানা যায়, আগামী কমিটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কর্মীদের চাওয়া বেশি কিছু না, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে নেয়া এটাই তাদের মৌলিক চাওয়া। দুর্দিনে যারা মাঠে সক্রিয় ছিল এমনই কাউকে দেখতে চায় তৃণমূল। যার একমাত্র প্রত্যাশিত ঠিকানা, ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দুই পতাকাবাহী কান্ডারী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাঃ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বদানকারী দুই প্রতিভা সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু তাহের নিশ্চয় সে দিকটি বেছে নেবে বলে আশা করেন সকলে।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে কর্ণফুলী আনোয়ারা উপজেলা শাখায় শীর্ষে যারা আসবেন তাদের মধ্যে নিন্মোক্ত উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকা দরকার বলে মনে করেন। যেমন-

১.সাধারন ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে যারা কখনো আপোষ করবেনা এবং নিজেরা হবেন ক্লিন ইমেজের সর্বজনগ্রাহ্য।
২. ছাত্রলীগে এমন শিক্ষিত নেতৃত্ব চাই ,যেন তাদের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামাতের সাথে লড়াই করে মাঠে বিজয়ী হতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
৩. আগামীতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য দেশরতœ শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃন রাখতে যারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারবে।
৪. উপজেলা থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিটি নেতা-কর্মীকে আগলে রাখবে এবং সাধারন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে যাবে।
৫. যাঁদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পতাকা পতপত করে উড়াতে সাধারন ছাত্ররা প্রচন্ড গর্ব করবে। হাসতে হাসতে ত্যাগ করতেও কুণ্ঠাবোধ করবেনা।
৬. শত ভাল কাজের মধ্যেও অনেক সময় কর্মীদের ভূল হয়ে যায়, ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে যারা উদ্ধার করবে। শাসন করে শোধরানোর পথ দেখিয়ে দিবে।
৭. সাধারন শিক্ষার্থীদের কাছে যাদের ইমেজ ভাল এবং সুবিধাবি ত ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাড়ানোর মানসিকতা যাদের মধ্যে বিদ্যমান তারাই ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।
৮. দেশ ও মানুষের সেবা, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনা ও সংগঠনকে শক্তিশালী করা ছাড়া যাঁদের মধ্যে কোন ধরনের লোভ লালসা থাকবে না।
৯. কোন প্রকার বিতর্ক ছাড়াই সহকর্মীদের সাথে নিয়ে দাপিয়ে বেড়াবে চট্টগ্রাম সহ উপজেলার রাজপথ। সারা বাংলাদেশের সাধারন জনগণের কাছে শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক বাড়িয়ে দিতে পারবে।
১০. যাঁদের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে শেখ হাসিনার লক্ষ লক্ষ ভক্ত, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাবে। এবং ভবিষ্যতেও শেখ হাসিনার জন্য কাজ করতে ওয়াদাবদ্ধ থাকবে।
‌১১. অনুপ্রবেশকারী নয়, যাঁরা হুংকারে পালিয়ে যাবে, দলের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টায় লিপ্ত হবে এমন কাউকে নয়। যাদের পরিবারে ভিন্ন রাজনীতির মতাদর্শে একাধিক ব্যক্তির বসবাস।

জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি-জামাতকে মোকাবেলা করার মধ্য দিয়ে নিজেকে ছাত্রলীগের একজন গর্বিত ও পরিক্ষীত কর্মী হিসেবে যারা প্রমাণ করতে পেরেছে এমন কাউকে শীর্ষে চায় তৃণমূল।

যদিও বিশ্বাস করে কর্মীদের আশার বাতিঘর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক দুই উপজেলার কর্মীদের অনুভূতি বুঝবেন।
উপজেলার সাধারন ছাত্ররা বলেছেন, যারা আগামী কমিটিকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত ভূমিকার দ্বারস্ত হয়েছেন তারা দলের সম্মানে আঘাত করে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিব্রত করেছেন।

সবাই মিলে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দিন বলেন, যারা নিয়মিত ছাত্র বয়স ২৯এর মধ্যে, যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন এবং যাদের পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে তেমনি নেতৃত্ব আমরা বাচাই করব। অবশ্যই অবিবাহিত অধুমপায়ী।