চট্টগ্রামে বিএমডিসি’র তদন্ত দলকে পাত্তা দেয়নি তিন চিকিৎসক

জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল আড়াই বছরের শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নির্দেশনা মানেন নি। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের ম্যাক্স হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও, সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপস্থিত ছিলেন না রাইফার মৃত্যুতে অভিযুক্তরা।

মঙ্গলবার( ২৪ জুলাই) সকাল ১০টায় ম্যাক্স হাসপাতালে যান বিএমডিসির তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন ও অপর তিন সদস্য। তদন্ত টিম হাসপাতালে চার ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্রদেবকে উপস্থিত থাকতে বললেও তারা উপস্থিত হননি। তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) পরিচালক প্রফেসর এম এ বসির বলেন, শিশু কন্যা রাইফার পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করবো। এদিকে, শিশু কন্যা রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)’র গঠিত তদন্ত কমিটিকে বির্তকের উর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার আহবান জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।

সিইউজের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস মঙ্গলবার প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এই আহবান জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বেসরকারী হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাংবাদিক ও বিএফইউজের নির্বাহী কমিটির সদস্য রুবেল খানের আড়াই বছরের শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি রাইফার মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের অদক্ষতা, অবহেলাকে দায়ি করেন। একই ভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটি রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি ত্রুটি চিহিৃত করে।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ী চিকিৎসক এবং অভিযুক্ত ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগনকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ধারাবাহিক আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিএমডিসি অধ্যাপক মো: রুহুল আমিনকে চেয়ারম্যান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে যেখানে সাংবাদিকদের অভিযোগ রয়েছে সেখানে অভিযোগকারী রাইফার পরিবার এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকদের একসাথে ডেকে বক্তব্য গ্রহণ কখনই কাম্য হতে পারে না। এছাড়া ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফার পরিবারের নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত রয়েছে। কিন্তু এরপরও তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ রাইফার পরিবারের সদস্যদের ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।

এতে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকরা তদন্ত কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এ অবস্থায় সিইউজে বিএমডিসি’র গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করেছে।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন মনে করে তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ সকল বির্তকের উর্ধ্বে উঠে মানবিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। নিজেদের পেশার প্রতি মোহগ্রস্থ না হয়ে নিরপেক্ষ ভাবে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও রাইফার পরিবার তদন্ত কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।