ঝিনাইদহে পরকীয়া প্রেম ফেঁসে যাচ্ছেন শিক্ষিকা তানিয়া

রামিম হাসান,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপার ট্রাক ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম লিপটনকে (২৬) ইটভাটায় পুড়িয়ে হত্যা করা হতে পারে। গত ৪ঠা জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৬ মাস পর আদালতের নির্দেশে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। লিপটন শৈলকুপা শহরের হাবিবপুর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।

ঝিনাইদহ পিবিআইর এসআই গাবুর আলী সরদার একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালতে তার মতামত উপস্থাপন করেছেন। মতামতে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার আসামি শৈলকুপা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার তানিয়া শৈলকুপার কাজীপাড়ার মৃত আশরাফুল আলমের স্বামী পরিত্যক্তা। তার সঙ্গে নিখোঁজ লিপটনের পরকীয়া প্রেম ছিল।

সেই সূত্র ধরে লিপটন তানিয়ার বাড়িতে যাতায়াত করতো। নিখোঁজ হওয়ার পর তানিয়া তার ইটভাটার সরদার নজরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার বিষয়টি পিবিআই রহস্যজনক চোখে দেখছে। কারণ ইটভাটার সরদার নজরুলের সঙ্গে কোনোদিন তানিয়া কথা বলেননি।

ঘটনার দিন ৪ঠা জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে তানিয়া ফোন করে সরদারকে বলেন, কোনো লোক যাতে বাইরে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে। পরদিন লোকমুখে ভাটা সরদার জানতে পারে লিপটন নিখোঁজ হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় লিপটনকে ইটভাটায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে।

পিবিআইর তদন্তে বলা হয়েছে, তানিয়ার বিরুদ্ধে লিপটন অপহরণের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়া গেলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থাদৃষ্টে বিবাদী শারমিন আক্তার তানিয়াসহ অন্য অপারাধীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তাই জিআর মামলা রুজু করে তানিয়াসহ অন্যদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার বলে আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে পিবিআই মতামত প্রদান করেছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ঠা জানুয়ারি তানিয়া বাসায় ডেকে পাঠায় লিপটনকে। বন্ধু বাবুর মোটরসাইকেলে করে লিপটনকে রাতের বেলা তানিয়ার বাসায় পৌঁছে দেয়। পথিমধ্যে তানিয়া আবারো লিপটনকে ফোন করে বাসায় একা আসতে বলে। লিপটন বাসায় যাওয়া ও নিখোঁজ হওয়ার পর তানিয়ার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি কথা বলেছে।

বাদী আবদুল খালেকের আশঙ্কা লিপটনের দুটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৮৪৫৭ ও ঝিনাইদহ-ট-১১-১২৯৪) আত্মসাৎ করার জন্য তানিয়া তাকে ইটভাটার জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কারণ লিপটন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার দুটি ট্রাকের ভাড়া আদায় করছেন তানিয়া। ট্রাক দুটি এখনো পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে লিপটনের পিতা অভিযোগ করেন।

এদিকে নিটল মটরস থেকে লিপটনের বাড়িতে কিস্তির টাকা চেয়ে চিঠি আসছে প্রতি মাসে। এ বিষয়টিও নজর এড়ায়নি পিবিআই তদন্ত দলের। শারমিন আক্তার তানিয়া ট্রাক দুটি কেনার দাবি করলেও তদন্ত দলের কাছে তিনি কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি। নিখোঁজ লিপটনের মামা আরিফুজ্জামান শিপলু জানান, লিপটনের ঢাকায় অনেক ব্যবসা ছিল। সে স্টুডিও, কম্পিউটার ও কসমেটিকের ব্যবসা ছেড়ে শৈলকুপায় ট্রাকের ব্যবসা করতো। তানিয়া দুর্বৃত্ত দিয়ে লিপটনকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন আরিফুজ্জামান শিপলু।

বিষয়টি নিয়ে তানিয়া আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রিয়াজুল ইসলাম লিপটনের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল না, বরং সে ট্রাক ড্রাইভার ছিল। আমার একটি ট্রাক মেরামত করা নিয়ে লিপটনের সঙ্গে প্রায় কথা হতো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি মহিলা হয়ে কি করে একজন পুরুষ মানুষকে হত্যা করতে পারি?