তরিকুলের অবস্থার উন্নতি, সুস্থ হতে লাগবে তিন মাস

রাবি প্রতিনিধি: চলমান কোটাসংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটাচলাও করতে পারবেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শনিবার বিকেলে নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষকের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। শিক্ষকরা হলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আ-আল মামুনসহ, শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন, শাতিল সিরাজ, কাজী মামুন হায়দার, আব্দুল্লাহীল বাকী, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বখতিয়ার আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফোকলোর বিভাগের ড. মো. আমিরুল ইসলাম, ফোকলোর বিভাগের সুস্মিতা চক্রবর্তী, নাট্যকলা বিভাগের কাজী শুসমিন আফসানা, ড. হাবিব জাকারিয়া, বাংলা বিভাগের ড. সৌভিক রেজা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা।

এর আগে ৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তারসহ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানান নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এই ১৩ শিক্ষক। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকরা জানান, গত ৯ জুলাই তরিকুলের পায়ে অস্ত্রপচার করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা ভালোর দিকে। তিনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছেন।

বিছানা থেকে উঠে বসতে পারছেন এবং একটু হলেও হাঁটু ভাঁজ করতে পারছেন। প্রতিদিনই ড্রেসিং করা হচ্ছে, পায়ের ফোলা কমে আসছে। পিঠের নিচের দিকে এখনো হাতুড়ির আঘাতজনিত কারণে রক্ত জমাট বেধে আছে, পিঠের বিভিন্ন স্থানে লাঠির আঘাতে কালশিটে পড়েছে, মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ২ জুলাই প্রধান ফটকের পাশে পতাকা মিছিলের জন্য জমায়েত হলে ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। আহত তরিকুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসক জানান, তরিকুলের ডান পা ভেঙে গেছে। মাথায় ৯টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

পুলিশি হেফাজতে তিন দিন চিকিৎসা চলার পর ৫ জুলাই তরিকুলকে রামেক থেকে চিকিৎসা অসম্পন্ন রেখেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে তার বন্ধুরা নগরীর বেসরকারি রয়্যাল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে। তবে তরিকুলকে জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগ করে তার পরিবার। তরিকুল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সুন্দরখোল উত্তরপাড়া গ্রামে খোরশেদ আলমের ছেলে।

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং রাবি সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকরা জানান, গুরুতর আহত একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসাবঞ্চিত করার এই ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। এই পরিস্থিতিতে তরিকুলের সহপাঠিরা নিরুপায় হয়ে তাকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।

সেখানকার চিকিৎসকরা তরিকুলের পায়ে অস্ত্রপচার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানায়। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একেবারে নীরব ভূমিকা পালন করে। এমনকি তারা তরিকুলের ন্যূনতম খোঁজখবর নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করেনি।

৬ জুলাই রয়্যাল হাসপাতালে গিয়ে তরিকুলের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষকরা। হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের পরামর্শে ৮ জুলাই তরিকুলকে ঢাকায় পাঠানো ব্যবস্থা করেন তারা। বিকেল তিনটায় তরিকুল ঢাকায় পৌঁছালে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৯ জুলাই তার পায়ে অস্ত্রপচার করা হয়।