নরসিংদীতে সদর এবং জেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা- নার্স দিয়ে চলছে চিকিৎসা

নরসিংদী প্রতিনিধি: ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী সঙ্কট, হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দালালদের হয়রানি, অ্যাম্বুলেন্স সঙ্কটসহ নানা সমস্যার কারণে নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারি হাসপাতালে জনসাধারণ কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আর্থিক ক্ষতিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এ জেলার সাধারণ মানুষ।

নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ জেলার সদর হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতাল বহু দিন আগের। এক সময় এ হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এখন থেকে ০৫ বছর আগেও হাসপাতালগুলোর মান ভাল ছিল। কিন্তু বর্তমানে জেলা এবং সদর হাসপাতালের অবস্থা খুবই বেহাল।

নরসিংদী জেলার সদর এবং জেলা হাসপাতালের বেহাল অবস্থার মূল কারণ হচ্ছে ডাক্তারদের রোগীদের প্রতি অবহেলা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাক্তার না থাকা। এ ছাড়া অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার সঙ্কটের কারণে ঠিকমতো অপারেশন হয় না। এ ছাড়া এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা সময়মতো করাতে পারেন না রোগীরা। এই হাসপাতালের চার পাশে রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি বেসরকারি ক্লিনিক। এই হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এগুলো সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না সাধারণ মানুষ।

এ জেলার ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, সকাল ১০টার আগে আউটডোরে ডাক্তারদের দেখা মেলে না। ফলে যেসব রোগী সকালে সেবা নিতে হাসপাতালে আসেন তাদেরকে ডাক্তারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। হাসপাতাল চত্বরে রয়েছে বাহিরাগত দালালেরা। তারা রোগীদের ভিন্ন স্থানে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য কৌশলে নিয়ে যায়।

এছাড়া এই হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া হাসপাতালের অবকাঠামো অনেকগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থাও প্রায় অকেজো।

নরসিংদী জেলার এই হাসপাতালগুলোতে দক্ষ জনবল নিয়োগ না দেয়ায় দীর্ঘ দিন এই সরঞ্জাম ব্যবহার হয়নি। মাত্র কয়েক বছর আগে সরঞ্জামগুলো ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। নরসিংদীর জেলার ৬টি উপজেলার ৭২ টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা নেয়ার জন্য এই হাসপাতাগুলোতে আসেন। রোগীদের বাড়তি চাপের কারণে ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ২০০-২৫০ জন। আসনের প্রায় দ্বিগুণ রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের।

পলাশ উপজেলা থেকে এই জেলা হাসপাতালে আসা সোলেমান (৩০) গনমাধ্যম কর্মী সাইফুল ইসলাম রুদ্রকে জানান, তার মেয়ের গুরুতর হাত কাটা অবস্থায়ও এই জেলা হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পায় নি কারণ ইমার্জেন্সীতে ডাক্তার ছিল না পরে নার্স দিয়েই ডাক্তারের দায়িত্ব পালন করা হয়েছে। এতে করে রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে।

এ বৃহৎ হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার ও নার্স সঙ্কটসহ কর্মচারী সঙ্কটের কারণে বর্তমানে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সঙ্কট প্রকট। এ কারণে হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না। টয়লেট ও বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে এসব টয়লেট ও বাথরুম ব্যবহার করা রোগী ও দর্শনার্থী অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

অপরদিকে নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগ যদি দ্রুত এসব অসুবিধার সমাধান না করে, তাহলে দিন দিন সাধারন মানুষের এবং রোগীদের সরকারী হাসপাতালের প্রতি আস্থা কমে যাবে।