ভোলার নদীতে এখন ইলিশ যেন দুস্প্রপ্য এক মাছের নাম নদীতে গিয়ে তেলের খরচও তুলতে পারছে না জেলেরা

ভোলা প্রতিনিধি: ভরা মৌসুমেও মেঘনা-তেতুলিয়ায় ভোলার জেলেরা পাচ্ছে না রুপালি ইলিশের দেখা। যেন ভোলার নদীতে ইলিশ এক দুস্প্রপ্য মাছের নাম। দিন-রাত নদীতে থেকে যে ইলিশ পাচ্ছে তাতে তাদের জ্বালানি খরচও উঠছেনা। জেলেদের দাবি ইলিশের প্রজনন মৌসূম এবং বেড়ে ওঠার সময় প্রশাসনিক নজরদারির দুর্বলতার কারণে ইলিশের রেনু ধ্বংস হওয়ায় মৌসূম শুরু হলেও ইলিশের দেখা মিলছেনা। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশ মৌসুমের পরিবর্তন হওয়ায় এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে আগামী আগষ্টের দিকে পাওয়া যাবে বলে আশা করছে তারা।

বিগত দিনে জুন-জুলাই কিংবা জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে নদীতে নামলে জেলেরা সাধারণত কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশ পেতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তেমন ইলিশ আর পাচ্ছে না নদীতে তারা। এবছরও একই সময়ে ভোলার জেলেরা আশায় বুক বেঁধে ইলিশ ধরতে নদীতে নেমে ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। নদীতে গিয়ে কখেনো আবার জেলেদের জালে ভাগ্যের জোরে মিলছে ২’একটা ইলিশের দেখা, তবে ২ একটা ইলিশ বিক্রি করে কী আর তেল ও সংসারের খরচ উঠে ?

জেলে পরিবারগুলোর একমাত্র আয়ের উৎস নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার। নদীতে ইলিশ না থাকায় মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত ১ লাখ ৩২ হাজার ২ শত ৬০ জন জেলেসহ ৩ লাখেরও বেশী জেলে দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ না পেয়ে পরিবার সমেত অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বর্তমানে জাল তৈরি কিংবা নৌকাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে ঋন করতে হচ্ছে জেলেদের। পাশাপাশি ধার দেনা এবং ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে চরম দুর্ভোগে তারা।

তুলাতুলি বশির মাঝি জানান,নদীতে নেমে এখন কোনো দিনই একটা দুইটা মাছের বেশি পাইনা। কিন্তু সতাই করে তো পরিবার চালাতে হবে। এই দেড় দুই মাসে আমার থেকে মুদি দোকানদার ও তেলের দোকানদার ১৫-২০ হাজারটাকা পাওনা হয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

হারুন মাঝি জানান, ঈদের পরদিন থেকেই সে নদীতে যাচ্ছে জাল বাইতে আজ পর্যন্ত তার জালে ধরে পড়েছে মাত্র ৬টি ইলিশ। যা তিনি মাত্র ১২’শ টাকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু এইকয়দিনে বাজারে তার পাওনার পরিমান দাড়িয়েছে ১০ হাজার টাকায়। খোরশেদ মাঝি জানান, বড় বড় নেতাদের ছায়ায় কিছু লোক নদীতে বাধাঁ,মশারি জাল দিয়ে ছোট ছোট মাছের বাচ্চা ধংশ করে দিচ্ছে।

নাছির মাঝি এলাকার রফিক মাঝি বলেন, মূলত নদীতে মাছ পাওয়া যায় শীতের সময়। কিন্তু তখন ও নদীতে অভিযান থাকে আমরা মাছ ধরতে পারি না। ১২ মাসই নদীতে অভিযান থাকলে এমন ভাবে আমরা চলবে কী করে। সাংসারই বা চালাবো কী করে।

ইলিশা ঘাটের মাছ ব্যাবাসয়ী আলম মিঝি জনান,এ মৌসুমে শুধু জেলদেরে অবস্থা খারাপ তাই নয়। মাছ ব্যবসায়ীরা ও রয়েছে ক্ষতির মুখে। এ মৌসুমে এ যাবৎ ২লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করতে পরি নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে মনে হচ্ছে মাছের প্রজনন সময় পরিবর্তণ হচ্ছে। তাই অভিযানের সময় ও পরিবর্তণ করা উচিত।

জেলেদের মতে, জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে প্রশাসনের নজরদারির অভাবসহ প্রভাবশালীরা অবৈধ জাল দিয়ে ইলিশ রেনু ধ্বংস করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জেলা মৎস্য বিভাগের মতে, সাম্প্রতিককালে ইলিশের মৌসূমে পরিবর্তন এসেছে। জুলাইতে ইলিশ পাওয়ার কথা থাকলেও এখন আগষ্ট ছাড়া ইলিশের দেখা মিলবে না।

ভোলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, বিগত বছরগুলো দিকে যদি আমরা তাকাই তবে দেখি যে জুন এবং জুলাই মাসে নদীতে ইলিশের পরিমান খুবই কম থাকে। বিগত বছরগুলোর থেকে এবছর ইলিশের পরিমান নদীতে একটু বেশী। জেলেরা যেহেতু পরিসংখ্যান মনে রাখে না সেহেতু তাদের এসব বিষয় মনে থাকে না।

তাদের যে অভিযোগ বড় বড় প্রভাবশালী মহল ছোট থাকা আবস্থায় মাছ ধরে ফেলে এসকল বিষয়ে জেলা প্রশাসন,উপজেলা প্রশাসন মৎস্য অধিদপ্তর অভিযান অব্যাহত রেখেছি এবং অবৈধ জালগুলোকে ধংশ করেছি। আগষ্টের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে প্রচুর পরিমানে জেলেরা ইলিশ মাছ পাবে।