রামিম হাসান,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: বাজার দর না থাকা ও ফলন ভালো না হওয়ায় ঝিনাইদহে কমেছে আখের আবাদ। এক বছরের ব্যবধানে জেলায় অর্ধেকেরও কম জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোবারকগঞ্জ সুগার মিলটি।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মিল জোন ও নন মিল জোনে আখের আবাদ হয়েছে মাত্র ৫৫৫ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ৬৩০ হেক্টর কম (গত বছর ১১৮৫ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ করা হয়)। এছাড়া পাঁচ বছর ধরেই জেলাজুড়ে আখের আবাদ নিম্নগামী। একসময় জেলার ছয় উপজেলায় কৃষকরা যে পরিমাণ আখের আবাদ করতেন, বর্তমানে সেটা আর নেই।
কালীগঞ্জ উপজেলার বড়পুকুরিয়া গ্রামের আব্দুল হাই বলেন, গত বছর আমি আড়াই বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছিলাম। এ বছর আখের আবাদ বন্ধ করে অন্য ফসল আবাদ করছি। তিনি বলেন, অতীতে আখ চাষই ছিল লাভজনক কৃষি ফসল। কিন্তু আখ চাষে বর্তমানে আগের মতো আর লাভ হচ্ছে না। সব ফসলের উচ্চফলনশীল জাত বের হলেও আজ পর্যন্ত আখের কোনো উচ্চফলনশীল জাত বের হয়নি।
এছাড়া মিলগেট ছাড়া অন্যান্য সেন্টারে আখ ওজনে কম করা, দীর্ঘমেয়াদি চাষ, পুঁজি পেতে চরম হয়রানি, আখের মূল্যবৃদ্ধি না করা, ঋণের মাধ্যমে কৃষকদের দেয়া সার ওজনে কম হওয়া ও সর্বোপরি কৃষকদের সঙ্গে চিনিকলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণেই এলাকার চাষীরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বলিদাপাড়া গ্রামের আখচাষি বাবুল হোসেন জানান, গত বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছিলেন। এ বছর এক বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। সারা বছর আখ আবাদ করার পর মিলে আখ দিলে ঠিকমতো টাকা পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়েই আবাদের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেছি। বাবরা গ্রামের কৃষক সেন্টু কুমার বলেন, এ এলাকার কৃষক আখের আবাদ বন্ধ করে দিয়েছে।
কারণ সঠিক সময়ে যদি ভালো দাম না পাওয়া যায়, তবে আখ চাষ করে লাভ কী। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিএম আব্দুর রউফ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আখের আবাদ কম হয়েছে। আখ চাষে সরকারের একটি প্রকল্প ছিল, তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ আবাদ ফিরিয়ে আনতে হলে কৃষকদের প্রণোদনাসহ আখের দাম বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন তিনি।