গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিস এখন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য: ঘুষ ছাড়া মেলেনা কোন কাজ

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে বিআরটিএ অফিসের দুর্নীতি চরম আকার ধারন করেছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ ছাড়া মটরযান রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় না এ অফিসে। জেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারি শতাধিক আনফিট গাড়িকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়ে থাকে।

গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সে করতে আসা সাধারন মানুষের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কেউ মোটা অংকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নানান হয়রানির শিকার হতে হয় তাকে এমন অভিযোগ রয়েছে ওই অফিসের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সে করতে আসা সাধারন মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রতিদিন।

ওই সকল সাধারন মানুষের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে বিআরটিএ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ফলে দিন দিন সাধারন মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলছে গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে।

গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে সরেজমিন অনুসন্ধানকালে মটরযান রেজিস্ট্রেশন করতে আসা একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেকটি মটরযান রেজিস্ট্রেশনের সময় সরকারি ফিস ছাড়াও অতিরিক্ত দুই থেকে পাচ হাজার টাকা এবং ক্ষেত্র বিশেষ আরো বেশী টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সকল কর্মচারী ওই অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত।

তারা সিন্ডিকেট করে লাখ লাখ টাকা অবাধে ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অফিসের বাইরের গাড়ীর শো-রুমের লোকজনও এ বানিজ্যের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। জেলার মুকসুদপুরের ব্যাবসায়ী সোহেল রানা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস আগে তিনি তার একটি মটর সাইকেলের রেজিস্ট্রিশনের জন্য গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে যান।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া হলেও বিভিন্ন অযুহাতে রেজিস্ট্রেশন দিতে তালবাহানা করা হয়। পরে তিনি বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক সুবীর কুমার সাহার ব্যক্তিগত লোক (দালাল) হিসেবে পরিচিত শহরের একটি মটর সাইকেল শো রুমের ম্যানেজার তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে চার হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি তার মটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে সমর্থ হন।

মটর সাইকেল শো-রুমের ম্যানেজার তরিকুল ইসলামের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি গোাপলগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালকের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে এ কাজ গুলো করে আসছি। এতে আমি কিছু পারসেন্টটেজ পাই।
লার্নার ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলেও সরকার নির্ধারিত টাকার বাইরেও বিআরটিএ অফিসের লোকজনকে টাকা দিতে হয়।

চাহিদা অনুযায়ি টাকা না দিলে লাইসেন্স পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করছেন বে-সরকারী ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি মিজানুর রহমান। গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, মটরযান চালকদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন বাবদ প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা সরকারী ভাবে বরাদ্দ দেয়া হলেও কোন প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন করা হয় না।

ভুয়া বিল ভাউচার করে সহকারী পরিচালক সুবীর কুমার সাহা তা আত্মসাৎ করেন। এনিয়ে অফিসার ও কর্মচারীদের মধ্যে চলছে টানাপোড়েন।
শহরের নবীনবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সুলায়মান মিয়া বলেন, গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিস জেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারি শতাধিক আনফিট গাড়িকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করার কারনে গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে এবং সেই সাথে সাধারন মানুষের জীবন হানি ঘটছে।

এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) সুবীর কুমার সাহা তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার অফিসের মধ্যে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে এ সব অপপ্রচার করছে। আমি এখান থেকে বদলি হওয়ার জোর চেষ্টা করছি।