ভূমি কর্মকর্তা শরিফের হাত থেকে রেহাই পাননি রুটি ও ডিম বিক্রেতাসহ কয়েক জন

শাহ্ আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ হতদরিদ্র রুটি বিক্রেতা জেরিনা। প্রায় ২০ বছর যাবত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর খাসেরহাট বাজারে রুটি বিক্রি করে সংসার চালান। নারী হয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় তাকে। বাজারে রাস্তার পাশে ছোট্ট প্লাস্টিকের একচালা একটি খোলা দোকান হচ্ছে তার একমাত্র অবলম্ব।

আর এরকম একজন হতদরিদ্র রুটি বিক্রেতা নারীর কাছে চাঁদাবাজি করতে ছাড়েননি বিনোদপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম (শরিফ)। ৯৯ বছরের জন্য দোকানঘর বন্দোবস্ত করে দিবে এ মর্মে তার কাছে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে এ কর্মকর্তা। পরিবারকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে লোন করে শরিফকে টাকা দেন রুটি বিক্রেতা জেরিনা বেগম।

টাকা নেওয়ার বিষয়টি কাউকে বললে সারাজীবনের জন্য রুটি বিক্রি করা বন্ধ করে দেবে কর্মকর্তা শরিফ। এমনই অভিযোগ উঠে আসে অনেক দোকানদার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে। পাশেই রয়েছে পাতু নামের আরেকজন হতদরিদ্রের রুটির দোকান। তার কাছেও দোকানঘর বন্দোবস্ত করার জন্য নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা।

রক্ষা পাইনি চা বিক্রেতা সেন্টু। তাকেও গুনতে হয়েছে জেরিনা, পাতুর মত ৫ হাজার টাকা। ডিম বিক্রেতা বকুলের কাছে নিয়েছে ১০ হাজার এবং দড়ি বিক্রেতা আরেক জনের কাছ থেকে নিয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এরকম প্রায় অর্ধশত দোকানদারের কাছ থেকে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে লুফে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

খাসেরহাট বাজারের ছোট্ট দোকানঘর নিয়ে বসে থাকা মতিউর রহমান নামের এক পান সিগারেট বিক্রেতা জানান, দোকানঘর বন্দোবস্ত করার জন্য বাজারের অনেক দোকানদার উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব দেন ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে। আর এ সুযোগে প্রত্যেক দোকানদারের কাছ থেকে ১০ হাজার, ২০ হাজার ও ৩০ হাজার পর্যন্ত ঘুষ নেন ভূমি কর্মকর্তা শরিফ।

বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে, ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সহকারী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম (শরিফ)। এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বরমান হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য- গত ৯ ও ১০ আগস্ট জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ায় ভিডিওচিত্র দিয়ে বিনোদপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রকাশ্যেই চলছে ঘুষ বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়। তবে উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসক শরিফের বিরুদ্ধে কোন প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শরিফের খুঁটির জোর বেশি থাকায় প্রশাসনও হার মানছে তার কাছে এমনটিই মন্তব্য করছে এলাকাবাসী।