কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেকে কারখানার বর্জ্য চলাচলের সড়কে

জে.জাহেদ চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইতিহাস বিখ্যাত কর্ণফুলী নদী ছোটবড় শতাধিক উপজেলার কলকারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে। সম্প্রতি শুধু নদী নয়, সড়ক ও দূষিত হচ্ছে। এমনটি চিত্র ছবিতেই শুধু নয়। সরেজমিনেও প্রায় দেখা যায় কর্ণফুলী উপজেলার মোড়ে মোড়ে। কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক এলাকায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ কোম্পানীর সয়াবিন তৈল কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে চলাচলের সড়কে। এমনকি এ কারখানার ভেতরে অবস্থিত টিন, সিমেন্ট, ভেজিটেবল অয়েল তৈরীতে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানিতে সয়লাব হচ্ছে মইজ্জ্যাটের সড়ক হতে শিকলবাহা কালারপোল সড়কের অলিগলি।

কোন ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপন ছাড়াই চলছে র্কণফুী এলাকায় এরকম নানা কলকারখানা। ডাইং এর ক্যামিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য নিস্কাশনের কোন ড্রেন নির্মানের জায়গা না থাকায়, মইজ্জ্যাটেক মূল সড়কের উপর দিয়ে এ সকল বর্জ্য মিশ্রিত পানি নিস্কাশিত হচ্ছে। যেন দেখার কেহ নেই।
ফলে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানির উপর দিয়েই এ পথে যাতায়াত করে হাজারো শ্রমিকসহ স্থানীয় মসজিদের মুসল্লী এবং পথচারী। পথ চলতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ভোগ ও কাপড় নষ্টের শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষদের।

একই এলাকায় আশপাশের শিল্পা লের মিল-কারখানাতে পরিবেশ রক্ষার জন্যে ইটিপি প্লান্ট স্থাপন চোখে পড়েনি। পরিবেশ অধিদপ্তর ও সরকার তাগিদ দিলেও হয়তো কর্তৃপক্ষ সেদিকে কোন তোয়াক্কায় করছে না। যার ফলে জনবহূল পরিবেশে কলকারখানা গড়ে ওঠায় দিন দিন আশে পাশে বসবাস করা মানুষের জনজীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে। কেননা এসব কলকারখানার বিকট শব্দ, অপসারিত নানা রাসায়নিক পর্দাথ বাতাসে মিশে যাওয়ায় আশেপাশের শিশুদের প্রায় নানা চর্মরোগ ও শ্বাস কষ্টে ভোগতে দেখা যায়।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়ে মালিক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বহুদিন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে তাগাদা দিতে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ে বলে নীরব অনেকটা এমনটাও অভিযোগ। ফলে সহজে কেহ এসব বড় বড় কোম্পানীর বিরুদ্ধে কথা বলতে নারাজ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মউজ্জ্যারটেক মূলসড়কের উভয়পাশে একাধিক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এ সকল কারখানার ক্যামিক্যাল ও বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি সড়ক হয়ে বিভিন্ন খাল বেয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে।

এলাকাবাসী জানান, এ পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর এর ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ইটিপি প্লান্ট স্থাপন ও অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষের অনিয়মের কারনে তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কখনো দেখেননি। এসব বড় বড় কোম্পানী বা কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য খুঁিটর জোরে পরিবেশ অধিদপ্তরের এ ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কায় করছে না। মানছেনা সরকারী কোন নিয়ম নীতি। সাধারন মানুষের চলাচলের ক্ষতি হলে তাদের কিছু যায় আসেনা। কেননা মালিক কতৃপক্ষরা দেশের বড় বড় ভিআইপি আর সিআইপি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা ফজল করিম অভিযোগ করে বলেন, প্রকাশ্যে কলকারখানার বর্জ্য মূল সড়কের উপর সয়লাব হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যদিও এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কলকারখানার ম্যানেজার এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেহ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অনেকে মনে করেন এসব কারখানায় বর্জ্য পরিশোধনের জন্যে ইটিপি বসানো দরকার। মূল সড়কের উপরে সয়লাব হওয়া বর্জ্য মিশ্রিত পানি খালে নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এমন ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনদূর্ভোগের শিকার হচ্ছে পথচারীরা। যানবাহন গুলো রাস্তার উপরে জমে থাকা বর্জ্য মিশ্রিত নোংরা পানি ছিটিয়ে নষ্ট করছে পথচারীদের পরিধেয় পোষাক।

প্রতিদিন এই রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে যা প্রচন্ড দূর্গন্ধ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত এই দূর্গন্ধ পথচারীদের শরীরে প্রবেশ করছে এবং অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করছে। স্থানীয় এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, “বর্জ্য অপসারণের নীতিমালা অনুসরণ না করে এস.আলম কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করে যাচ্ছে। যা পরিবেশ আইনের পরিপন্থী কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এসব কারখানার প্রতি অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নিতে দেখিনি”।