কুতুবদিয়াতে ‘গডফাদার’ মুকুল আবারো বেপরোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা পরিচয় আর নানা বিশেষণ তার নামের আগে পিছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬২১টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছিলো তার বাড়ি থেকে। হাতে নাতে গ্রেফতার এবং ওসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ছিলো ১৩টি ওয়ান শুটার গান ও ৬টি এসবিবিএল।
গ্রেফতারের পর জেলখানার চৌদ্দ শিকের ভেতরে ছিল কিছুদিন। ফলে নিস্ক্রিয় ছিল তার হাতে গড়া একাধিক বাহিনীও। দলীয় কোন কর্মকান্ডে নেই তার। রাজনীতির মাঠেও নেই কেননা বহিষ্কৃত। তারপরেও নিজেকে দাবি করে শ্রমিক নেতা আর ভূয়া মানাবাধিকার কর্মী।

নাম তার মনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুকুল। বাড়ি তার কক্সবাজারের বিছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পরান সিকদার পাড়া। ঝুঁলিতে তার অস্ত্র আইনে জির আর ৫৪/১৭ইং তারিখ ২২/৬/১৭ইং,সিআর ১৩৬/১৭ তারিখ ২২/৪/১৭ইং,জিআর ১৫/১৭ তারিখ ৬/২/১৭ইং। জানা যায়, বেশ কিছুদিন আগে জেল হতে জামিনে বের হয়ে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে নানা অপরাধে। জেলার অনেক মিডিয়ায় তৎকালিন তাকে দৈনিক পত্রিকায় ‘গডফাদার’ হিসেবেই উপাধি দিয়েছিল। কিন্তু সেই গডফাদার মুকুল আবারো পর্দার আড়াল কিংবা নানা কলা কৌশলে তার বাহিনী নিয়ে কলকাঠি নাড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যারা মূলত আরো পর্দার আড়াল থেকে অবৈধ রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে তাদের সাথে মূলত মুকুলের রয়েছে বেশ গভীর সখ্যতা। আর সেই সখ্যতার রেশ টেনেই তিনি আবারো বেশ পুর্বের তকমায় আসীন হতে মরিয়া। নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়, মানুষকে জিম্মি করে ব্ল্যাক মেইল করে আয় রোজগারের অপরাধী রিমোট কন্টোল। ইতিমধ্যে যার মুখোশ ধরা পড়েছে সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জিম্মি করে কাজ আদায় কিংবা তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে নামে বেনামে অভিযোগ দেয়া। এমনকি নানা ভাড়াটে মেয়ে ও অসহায় লোক দিয়ে মিথ্যা মামলা করা। পরে টাকা নিয়ে মিমাংসা করা যার বিচিত্র পেশা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বিএনপির নেতা সাজে এই মুকুল। আবার বর্তমান সরকারের আমলে বির্তকিত বহিষ্কৃত নেতা। সুত্র জানায়, মনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুকুল রাজনীতির ছত্রছায়ায় তার অনুগামীও নানা বাহিনীর কিছু সন্ত্রাসীদের দিয়ে চিংড়িঘের দখল ছাড়াও সাগরে জলদস্যুদের লালন-পালন করেন। বর্তমানে আবারো এলাকায় ‘মুকুল বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী জড়ো করেছে। এমনকি কুতুবদিয়া উপকূলে কৃষকের জমি ও দোকানপাট দখল এবং সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি সহ লুটপাট চালিয়ে তিনি বহু ধনসম্পদের মালিক বনেছেন।

কুতুবদিয়ায় থানাসহ বিভিন্ন আদালতে মুকুলের বিরুদ্ধে জমি দখল, অস্ত্রসহ পৃথক ৭টি মামলা রয়েছে। কিছু মামলায় জামিনে রয়েছেন বলে জানা যায়। তবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সহ নানা অভিযোগের কারণে তিনি ‘বন খেকো’ আর সন্ত্রাসী ‘গডফাদার’ মুকুল হিসেবেই আখ্যায়িত হন।
সূত্রমতে জানা যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি বিভিন্ন মাদক ব্যবসা ও অবৈধ অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে গোয়েন্দাদের খাতায় তার নাম লিস্টেট রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার একটি সংঘবদ্ধচক্র ও পেশাদার চোলাই মদ উৎপাদনকারী মহিলাদের সাথে যার সিন্ডিকেট। এমনকি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও এখন আবারো জেলেরা আতংকিত।

নাম প্রকাশ না করা কুতুবদিয়া বড়ঘোপের এক শিক্ষক কাশেম জানান, “মুকুল একটা টাউট সন্ত্রাসী, যার কোন নির্দিষ্ট বৈধ আয় রোজগার নেই। নিজেকে আবার নাম স্বর্বস্ব মানবাধিকার কর্মী হিসেবে দাবি করে হাসির খোরাক পরিণত হন”। আজম কলোনী গ্রামের দুজন লবণ চাষি অভিযোগ করেন, “মনোয়ারুল আলম চৌধুরী মুকুল একাধিক জলদস্যু বাহিনী দিয়ে সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে লুটপাট চালিয়ে কোটিপতি বনে যান”। বর্তমানে প্রশাসনের লোক হতে নিজেকে নিরাপদে রাখতে কক্সবাজারের লালদীঘির হোটেল পালংকিতে বেশির ভাগ সময় অবস্থান করেন বলে জানা যায়। তবে প্রশাসন তীক্ষœ নজর রেখেছে তার উপর।

নাম প্রকাশ না করা সরকারী এক কর্মকর্তা জানান, এ যাবত কালে কুতুবদিয়াতে যে সকল ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রট, ওসি, বন বিভাগের কর্মকর্তা সহ সরকারি কর্মচারীরা তার কথা না শুনলে ঐ সমস্ত অফিসারের বিরুদ্ধে উপরি মহলে দরখাস্ত দেয়া, খারাপ লোক দিয়ে মামলা করানো ছিলো যার অন্যতম পেশা। কুতুবদিয়া থানার ওসি মোঃ দিদারুল ফেরদৌস বলেন, ১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬২১টি গুলিসহ মনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ মুকুলকে র‌্যাব থানায় সোপর্দ করেছিলো জেনেছি। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে এছাড়াও কুতুবদিয়া থানায় দুটি মামলাসহ বিভিন্ন স্থানে সাতটি মামলা রয়েছে।