চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে বাল্যবিয়ের হিড়িক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে চলছে বাল্যবিয়ের হিড়িক। প্রায় প্রতিদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাল্যবিয়ে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার যখন বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তখন প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে জনপ্রতিনিধিগণ রাতের আঁধারে স্থানীয় মৌলভীদের দিয়ে বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন। এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় ইমামদের তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তি দিলে এলাকায় বাল্যবিয়ের হার অনেকাংশে কমে যাবে।

জানা যায়, গত ১৮ আগষ্ট গভীর রাতে ৯নং ওয়ার্ডের গিধনিপাড়া গ্রামের জোহাক আলীর ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে বুড়ি’র (১৩) বাল্যবিয়ে হয় ৫নং ওয়ার্ডের গোঠাপাড়া গ্রামের আবু বাক্কার ঝাটু (২০) এর সাথে। ৩১ আগষ্ট রাতে ছোট গোঠাপাড়া গ্রামের মোঃ রেজাউলের নাবালিকা মেয়ে (১৪)’র বাল্য বিয়ে হয় ৫ নং ওয়ার্ডের সোনাপট্টি গ্রামের মৃত মনিরুলের ছেলে রাজমিস্ত্রি কাশেম আলী’র সাথে। ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে এই বাল্য বিয়েটি হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

১১ সেপ্টেম্বর রাতে ৯ নং ওয়ার্ডের গিধনিপাড়া গ্রামের মোঃ জাহাঙ্গীরের কন্যা ও চরবাগডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মোসাঃ ফাতেমা খাতুনের বাল্য বিয়ে হয় ৬ নং ওয়ার্ডের ঝ্যাড়া মন্ডলের টোলা গ্রামের মোঃ- মজিবুর রহমানের বিদেশ ফেরত ছেলে মোঃ কাদিরের (২৪) সাথে। ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ২ নং ওয়ার্ডের গোয়ালডুবি গ্রামের মোঃ সোহরাবের নাবালিকা মেয়ে চরবাগডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী লিমা (১৩)’র বাল্য বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী শাজাহানপুর ইউনিয়নের রাবনপাড়া গ্রামের এক ছেলের (২০) সাথে।

লিমার বাল্য বিয়েতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করার অভিযোগ ২ নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বিয়ের রাতে ২ নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুলের সাথে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিমাকে বর পক্ষ দেখতে এসে বিয়ের আয়োজন করলে তিনি গিয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। পরে জানা যায়, তার নির্দেশেই লিমার বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।

এবিষয়ে চরবাগডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ এলাকায় বাল্য বিয়ে হচ্ছে, এটা সঠিক। আমার বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১০০ জন ছাত্রী ভর্তি হলে এসএসসি পরিক্ষা দেয় মাত্র ৩০-৩৫ জন। ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীদের বাল্য বিয়ের হার সবচেয়ে বেশী। এবিষয়ে এলাকার কাজী মাওলানা মোজাম্মেল হক বাল্য বিয়ে হিড়িকের কথা স্বীকার করে বলেন, গভীর রাতে এসকল বাল্য বিয়ে হয়, বিধায় আমরা জানতে পারিনা। বাল্য বিয়ে সংগঠিত হওয়ার সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নাই।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য কামরুজ্জামান টুটুল বলেন, অনেক চেষ্টা করেও বাল্য বিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না। আমি জানতে পারলে তাক্ষণিত স্বশরীরে গিয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিই। তারপরও আমাদের না জানিয়ে গভীর রাতে অভিভাবকগণ নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।