জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর শিক্ষকতা করার পর অবশেষে চাকুরী খোয়াচ্ছেন হেলাল উদ্দিন

রামিম হাসান, ঝিনাইদহ থেকেঃ জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে সরকারী বেতন-ভাতা সহ দীর্ঘ ৮ বছর শিক্ষক হিসাবে চাকুরি করার পর অবশেষে চাকুরী হারাচ্ছেন হেলাল উদ্দিন নামের এক শিক্ষক। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) হিসেবে কর্মরত। আর এই সনদ সংগ্রহে প্রধান শিক্ষক কে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন এছাড়া মিনিষ্ট্রি অডিটেও পার পেয়ে যান জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণকারী শিক্ষক হেলাল উদ্দিন। তবে সাম্প্রতি বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের তদন্তে নিবন্ধন সনদ জাল প্রমানিত হওয়ায় তাকে অব্যহতি ও মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিকদের প্রশ্নে এনিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে জেলা শিক্ষা অফিসার বলছেন তাকে অব্যহতি ও মামলা দায়ের সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কেন নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ তা জানতে শোকজ করা হবে এবং আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা শিক্ষকের অব্যহতি নিশ্চিত করা সহ মামলা দায়ের হবে।

জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রামের গোলাম বারী বিশ্বাসের পুত্র হেলাল উদ্দিন ২০০৭ সালে চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হন। তারপর থেকে দীর্ঘ ৮বছর পর সম্প্রতি তার নিবন্ধন সনদ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। অনেকে এটাকে জাল সনদ বলে সন্দেহ করেন। তদন্তও দাবি করেন এলাকাবাসী কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি প্রথম থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ ওঠে।
এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে স্কুলটিতে গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক হেলাল উদ্দিন স্কুল ছেড়ে পালিয়ে যান তবে পরে ওই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলে তিনি দাবি করছেন ম্যানেজিং কমিটি তাকে সময় দিলে পরবর্তীতে ২০১২ সালে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু পরবর্তী নিবন্ধনে চাকুরী করা নিয়োগবিধি বর্হিভ’ত কি না সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি। আর জাল নিবন্ধন সনদ পাইয়ে দিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন কে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন বলে অভিযুক্ত শিক্ষক হেলাল উদ্দিন দাবি করছেন। আর মিনিস্ট্রি অডিটেও তিনি পার পেতে সক্ষম হন।

চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের নিবন্ধন সনদ জালের ব্যাপারে সাম্প্রতি বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পেয়ে বে-সরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে জানতে পারেন তার নিবন্ধন সনদ জাল ছিল, নিবন্ধন পরীক্ষায় না পাশ করেই নিবন্ধন পাশের জাল সনদ তৈরী করে স্কুলে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়ে যান । বিষয়টির তদন্তের পরবর্তীতে ঢাকা এনটিআরসিএ’র সহকারী পরিচালক মোঃ মোস্তাক আহমেদ স্বাক্ষরিত বেশিনিক/প্রমূপ্র/সনদ যাচাই/৭৪৪(অংশ-৩)/২০১৭/৪০৩ নং স্বারকে জানানো হয় শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের সনদটি জাল। আর এই জাল সনদ ব্যবহার করার অপরাধে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সহ তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেয়া হয়। গত ২৮ জুলাই ঢাকার এই চিঠি পাঠানো হয় ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসে। এরপর ২০ আগষ্ট ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস শিক্ষক হেলাল উদ্দিন কে অব্যহতি দেয়া সহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু তার পর থেকে এই জালিয়াতির বিষয়ে পদক্ষেপে কোন অগ্রগতি নেই। ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে চলেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এসব জাল-জালিয়াতির ঘটনার জন্য পাল্টাপাল্টি দায় চাপাতে শুরু করেছে ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক আর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা শিক্ষকের কোন অপরাধ নেই, প্রধান শিক্ষকই দায়ী এসবের জন্য এমন দাবি করছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই। তিনি বলেন অভিযুক্ত শিক্ষকের কোন দোষ নেই, যা কিছু দুই নাম্বারী, তিন নাম্বারী, চার নাম্বারী সবই করেছেন প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন কোন দায় না নিয়ে দুশছেন ম্যানেজিং কমিটিকে। তিনি বলেন কোন ধরনের জালিয়াতির মধ্যে তিনি ছিলেন না, বরং সাম্প্রতিক জেলা শিক্ষা অফিসের চিঠিও আসার কথা জানেন তবে তাকে অন্যায়ভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় কিছু করতে পারেননি।

এসব ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার সুশান্ত কুমার দেব জানিয়েছেন বে-সরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছেন তার নিবন্ধন সনদটি জাল, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়। আর এই জাল সনদ ব্যবহার করার অপরাধে ওই শিক্ষকে অব্যহতি সহ তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানান। জেলা শিক্ষা অফিসার আরো জানান, গত ২৮ জুলাই এই চিঠি ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসে আসার পর ২০ আগষ্ট অব্যহতি সহ ও প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কে চিঠি দেয়া হয়। তবে এই আদেশ কেন এখনো কার্যকর করা হয়নি তার জন্য স্কুল কে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হচ্ছে। একই সাথে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে অব্যহতি কার্যকর সহ মামলা করা হবে বলেও জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।