ঠাকুরগাঁওয়ে সেভেন ডে ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের জীবন গেল

মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও শহরের সেভেন ডে নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের (জাহাঙ্গীর আলম) ভুলে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিহত প্রসূতি মায়ের স্বজনরা এমন অভিযোগ করেন। নিহত নাছিমা আক্তার (২৫) শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকার রুবেল ইসলামের স্ত্রী।

নিহতের মা রহিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ইং রবিবার সকালে আমার মেয়ে নাছিমা আক্তারকে শহরের সেভেন ডে নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। এরপর চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম আমার মেয়ের সিজারিয়ান অপারেশন করেন। ভুল অপারেশনের কারণে মেয়ের পা অচল হয়ে যায় এবং পেট ফুলতে থাকে।

এরপর ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরের দিকে হঠাৎ হাসপাতালের কয়েকজন এসে আমায় বলে যে, তাকে ৩ তলায় নিয়ে যেতে হবে বড় ডাক্তার দেখবে। এই বলে তারা ৩ তলায় আমার মেয়েকে নিয়ে যায় আর আমি ওর জন্য নফল নামায পড়তে থাকি। এভাবে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা যাওয়ার পর একজন এসে আমার ব্যাগ ধরে টানে। আমি জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন যে, ব্যাগ নিয়ে রেডি হন আপনার মেয়েকে দিনাজপুর নিয়ে যেতে হবে।

উনারা তড়িঘড়ি করে আমার মেয়েকে এ্যাম্বুল্যান্সে উঠায়। আমি বুড়ি মানুষ কিছুই বুঝিনা। তাই তাদেরকে বললাম আমার বাড়ীতে কাউকে জানাই ওরা কেউ আসুক তারপর আমার মেয়েকে নিয়ে যান কিন্তু তারা আমার কোন কথা শুনেনি। তারা আমাকে সহ আমার মেয়েকে নিয়ে দিনাজপুরের পথে রওনা হয়।

পথের মধ্যে সন্দেহ হলে আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি যে, আমার মেয়ে কি বেঁচে আছে! আমার মেয়ে কি বেঁচে আছে! তারা বলে আপনার মেয়ে ঠিক আছে। পরে ড্রাইভার ও ক্লিনিকের লোকজনের আচরণ এবং মোবাইলে তাদের কথোপকথনে আমার সন্দেহ হলে আমি আবার জিজ্ঞাসা করলে তারা তাদের মোবাইলে কথা বলার এক পর্যায়ে জানান আপনার মেয়ে আর নেই। আমরা এখন লাশ নিয়ে ফিরে যাই।

তাদের আচরণ, মোবাইলে লুকোচুরি কথা বার্তায় আমি নিশ্চিত আমার মেয়ে ক্লিনিকেই মারা গেছে। নইলে ওরা আমার মেয়েকে এ্যাম্বুল্যান্সে উঠানোর আগে আমাকে ঠিকমত দেখতে দেয়নি, ধামাচাপা দিতেই দিনাজপুর যাওয়ার নাটক সাজায়। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এদিকে চিকিৎসকের ভুলে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হওয়ায় পরিবারের স্বজনরা হাসপাতাল ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানায়। এসময় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা: প্রভাষ কুমার রায়, চিকিৎসক শাহরিয়ার এর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

আধুনিক সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা: প্রভাষ কুমার রায় বলেন, নবজাতক শিশুর অবস্থা ভালো রয়েছে। প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্তে প্রমাণিত হলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে প্রসূতি মায়ের অপারেশনের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইলে অসংখ্যবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, এর আগেও ২০১৪ সালে শহরের সুশ্রী ক্লিনিকে এক প্রসূতি মায়ের গর্ভপাত ঘটানোর সময় তার মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।