তালতলীতে ডিলারের প্রতারনায় দু“জেলার সহশ্রাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ, পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পর বিএডিসির লাইসেন্স বাতিল

বরগুনা প্রতিনিধি: উপকূলীয় জেলা বরগুার তালতলীতে ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বীজ ধানের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে ভেজাল ও স্থানীয় বীজ সরবরাহ করে বরগুনা ও পটুয়াখালী দুই জেলার প্রায় সহশ্রাধিক কৃষকের সর্বনাশ করার ঘটনায় অভিযুক্ত ডিলার মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক আবু বাহিনীর প্রধান আবু মিয়ার বিএডিসির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের ক্ষতিপুরন আদায় করতে মামলার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বলে কৃষি অফিস ও বিশ্বস্থ সুত্রে জানাগেছে।

বিএডিসির উপ পরিচালক (পটুয়াখালী) মোঃ আসাদুজ্জামান এক চিঠিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের এখবর নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে প্রতারক আবু মিয়া ও তার ভাই জয়নাল এবং ভায়ের ছেলে কাইয়ুম পলাতক রয়েছে। উপ-পরিচালকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে বিএডিসির প্যাকেটজাত ধানের বীজের প্যাকেটে জাত পরিবর্তন করা, কাটা ছেড়া করে মেয়াদ উত্তীর্ণ, অন্যজাতের স্থানীয় বীজধান প্যাকেটে ভরে কৃষকের সর্বনাশ করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ চিহ্নিত করা হয়েছে।

কৃষকের অভিযোগ, বিএডিসির সরবরাহ করা বীজ ধানের তীব্র সঙ্কটকে পুঁজি করে আবু বাহিনীর একটি প্রতারকচক্র পূর্ব পরিকল্পীত ভাবে বোরো মৌসুমের ব্রি ২৮ জাতের ধানের বীজের প্যাকেটে ব্রি ৪৯ জাত লিখে বাজারে ছেড়ে দেয়। যাহা ছিল ২০১৬ সালের পুরনো বীজ ধান। এ বীজ ধানের তৈরি বীজতলার চারা রোপন করার ১৫ দিনের মধ্যে কাইচ থোড়সহ ধানের শীষ বের হতে থাকে। এনিয়ে স্থানীয় ঋন গ্রস্থ কৃষদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। বরগুনার তালতলী উপজেলার শারিকখালী, কড়ইবাড়িয়া, পঁচাকোড়ালিয়া, বড়বগী, সোনাকাটা, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন ও পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী, ধুলাসার ও কুয়াকাটা পৌর সভার প্রায় সহশ্রাধিক কৃষক এ ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, তালতলীর বিভিন্ন বাজারের বীজধান বিক্রেতা তালতলীর কচুপাত্রা বাজারের মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স এর মালিক আবু মিয়ার কাছ থেকে ওই বীজধান কিনে বিক্রি করে। প্রতারিত কৃষকরা ২৫ আগস্ট থেকে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকে। এনিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবুর বিরুদ্ধে এলাকায় এধরনের অভিযোগের শেষ নেই। আবু বাহিনী শিরোনামে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর সহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে ইতি পূর্বে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

শুধু ভয়ে আবু বাহিনীর প্রধান আবু ও তার লোকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোক মুখ খুলতে সাহস পায়না। তালতলীর স্থানীয় কচুপাত্রা বাজারে এভাবে একটি নকল বীজ কারখানার খবর সে সময় বীজ বহনকারী টমটম,অটো চালক ও কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের কাছ থেকে সর্ব প্রথম প্রকাশ পায়। ঘটনাটি তখন লোকমুখে ব্যাপক জানাজানি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ বিষয়টি সে সময় আমলে নেয়নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ক্ষতির শিকার কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরেজমিনে জানাগেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার ৪নং শারিকখালী ইউনিয়নের কচুপাত্রা গ্রামের মৃতু সেকান্দার আলী হাং এর ছোট ছেলে আবু বাহিনীর প্রধান আবু মিয়া ওরফে আবু তার বাড়ির পূর্ব পাশে এবছর প্রায় ৬.০০ একর জমিতে বোর মৌসুমের ব্রি-২৩ ধান চাষ করেন। তৎসময়ে বাজরের ধানের মূল্য কম থাকায় উক্ত ধান শুকিয়ে আবুল, জয়নাল, কাইয়ুম পরিকল্পিত ভাবে রেখে দেয় পরবর্তীতে কাজে লাগানের জন্য। অনু সন্ধানে আরো জানাযায় অভিযুক্ত আবু ২০১৬ সালে কচুপাত্রা আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন তালুকদার কমপ্লেক্ এর পূর্ব পাশে প্রায় ৮.০০ একর জমিতে বোরো মৌসুমের ব্রি-২৩ ধান চাষ করেন তখনও বাজার মূল্য এতই কম ছিল যে তখন তা বাজারে বিক্রি না করে শুকিয়ে গুদামজাত করে রেখেছিল।

সু-চতুর আবু মিয়া চলতি আমন মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীদের সহযোগীতায় ও বিএডিসির অসাধু কর্মচারীদের যোগসাযোসে আবুল বীজের ছিলমারা খালি প্যাকেট সংগ্রহ করে কচুপাত্রা বাজারে তার দোকানের উপর তলায়, পিছনে ও কখনো কখনো সুযোগ বুঝে তার নিজ বাড়িতে বসে প্যাকেটের গায়ে ধানের জাতের নাম ওভার রাইটিং করে ব্রি ২৮ কেটে ব্রি ২৩ ধান লিখে, প্যাকিং এর তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৬ কে ওভার রাইটিং করে ২ অক্টোবর ২০১৮ করা হয়েছে। এভাবে স্থানীয় ডিলার আবুল এবং খুচরা বীজ বিক্রেতারা কৃষকদের বিএডিসির সঠিক বীজ না দিয়ে আবু তার ক্ষেতে ফলালো পুরানো বোর মৌসুমের স্থানীয় নিম্নমানের বীজ বিতরন করেন।

আমন চাষের মৌসুমে আবু এর ক্ষেতে ফলানো বীজকে বিএডিসির সীল দিয়ে ব্রি ২৩ ধান বলে চড়া মূল্যে বিক্রয় করে কৃষকদের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয় কৃষকরা বলেন অগ্রহায়ন মাসে এ বীজের ফসল আসার কথা। কিন্তুু আমাদেরকে আমন মৌসুমের বীজ না দিয়ে তার নিজের ক্ষেতে ফলানো পুরানো বোর মৌসুমের বীজ দেয়। যা বীজতলা তৈরী থেকে শুরু করে ৯০ দিনে ফসল আসে। আমন মৌসুমে এ বীজ বপনের উপযোগী নয়।

এ বীজ রোপন করার মাত্র এক থেকে দের সপ্তাহর মধ্যে ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে ধান বের হতে শুরু করে। এতে আগামী আমন মৌসুমে বরগুনা ও পার্শবর্তী পটুয়াখালী জেলা সহ তালতলী উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার একর জমিতে আমন ফসল না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকরা তাদের ক্ষতি পোশনোর জন্য সরকারের সার্ভিক সহযোগীতাসহ সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের কাছে এর সঠিক বিচারের দাবী জানান।