নকল স্বর্ণ নিয়ে নারী সদস্যের একটি চক্র কর্ণফুলীতে সক্রিয়

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্ণফুলীতে অভিনব পদ্ধতিতে স্বয়ং স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সাথেও প্রতারণা করে পার পেয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। নকল স্বর্ণ প্রতারকের দলটি বর্তমানে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে খবর পাওয়া যায়। এরা খোয়াজনগর, সৈন্যরটেক, চরলক্ষ্যা, বোর্ডবাজার থানার সামনে থেকেও একাধিকবার নকল স্বর্ণ দেখিয়ে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কেহ গ্রেফতার হয়েছে এমন খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রতারক চক্রের টার্গেট উপজেলার বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরীর গার্মেন্টস নারী শ্রমিক ও অসহায় নিম্ন শ্রেণীর মানুষজন। যারা কলকারখানায় কর্মজীবি। মাসের শেষ পুঁজিতে যারা বেতনের কিছু অংশ জমিয়ে মূল্যবান কোন সহায় সম্পদ কিনতে চায়। মুলত বেশির ভাগেই এদের কাছে ফাঁদ ফাতে নকল স্বর্ণ প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

‘বিপদে আছি, এক টুকরা সোনা আছিল, সেটা বিক্রি করতে চাই..!‘আমার ছেলে মেডিকেলে টাহার খুব দরকার” এমন মর্মাহত অসহায় কথার ফুলঝুরি দিয়ে হাজির হয় একটি প্রতারক চক্রের মহিলা সদস্যরা। এমন আকুতিতে কৌশলে দোকানদার ও মানুষের কাছে কিছু স্বর্ণ বিক্রি করতে চায় তারা। এভাবেই মুলত চক্রের কাজ নকল স্বর্ণ বিক্রির কৌশল। আর নগদ টাকা হাতিয়ে পলায়ন করা।

গত ২৩ জুলাই এমন একটি ঘটনা ঘটে স্বয়ং কর্ণফুলীর থানার সামনের স্বর্ণের দোকানে। মহিলা এক ভরি ওজনের আসল র্স্বণ প্রথমে বন্ধক দেয় দোকানদারের কাছে। একমাস পর সুদ দিতে আসে কৌশলে। এক ফাঁকে বাহনা করে পুর্বে বন্ধককৃত স্বর্ণ দেখার। দোকানদারও বিশ্বাস করে হাতে তুলে দেয়। অভিনব কৌশলে দোকানদারের অজান্তে হুবহু এক ভরি ওজনের আরেকটি নকল স্বর্ণ পাল্টে দেয়।

এমনকি ২০১৮ সালের ১৮ই জানুয়ারী রাত ৮টায় উপজেলার খোয়াজনগরের ডায়মন্ড জুয়েলার্স এ ঘটে আরেকটি ঘটনা। নকল স্বর্ণ বন্ধক দিতে এসে ধরা পড়ে। যদিও দোকানদার বেশ দক্ষ ছিলো বিধায় ফাঁদে ফেলতে পারেনি। পরে চাপের মুখে মহিলা সব স্বীকার করে। এমনকি কান ধরে একশ বার উঠবস করিয়ে দোকানের মালিক মহিলাটিকে ছেড়ে দেয়। সৈন্যেরটেক স্বর্ণমিতা জুয়েলার্সেও ঘটে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা।

অভিযোগসুত্রে জানা যায়, এভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার প্রতিটি বাজারে নকল স্বর্ণ দেখিয়ে জনবহুল বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণা করে আসছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। যদিও এখনো পর্যন্ত তাদের মুল চক্রটি ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। উপজেলার চরপাথরঘাটা, খোয়াজনগর, কলেজবাজার, জুলধা, শিকলবাহা, শান্তিরহাট, ইছানগর, ব্রিজঘাট, স্টেশন ইত্যাদি জায়গায় চক্রটি সক্রিয়।

বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে প্রতারণা করে আসছে। এরা এইসব পয়েন্টে সাধারণ ও নিরীহ যাত্রীদের সাথে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা করে। তারা নকল স্বর্ণের বার দেখিয়ে আসল স্বর্ণের বারের কথা বলে সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। আনোয়ারার একটি চক্র,স্বর্ণের বার বিক্রয়ের কথা বলে চরপাথরঘাটার এক ব্যবসায়ীকে ফতুর করেছে বলেও জানা যায়। অনেক সময় প্রতারিত ব্যক্তি বাসায় গিয়ে দেখতে পায় স্বর্ণের বারটি সোনালী রংয়ের হুবহু পিতলের তৈরি। ভোক্তভোগীরা পুলিশের ভয়ে কাউকে বলতেও পারেনা আবার সইতেও পারেনা বলে নীরব থাকে বলে জানা যায়।

আজিমপাড়া সৈন্যেরটেক স্বর্ণমিতা জুয়েলার্স এর মালিক ও কর্ণফুলী জুয়েলারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুপম জানান, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে নারীদের সঙ্গে স্বর্ণের চেইন, রিং, বার বিক্রি নিয়ে প্রতারণাসহ নকল সোনা বিক্রিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন নজরধারী না থাকায় প্রতারকদের মূলোৎপাটন সম্ভব হচ্ছেনা বলে দাবি করেন তিনি।