ভাঙ্গাচোরা স্কুল ঘরে ঝুকি নিয়ে পাঠদান, আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা

গোপাল চন্দ্র দে, ভোলা: স্কুল ঘর আছে। নেই দরোজা জানালা। বিভিন্ন স্থান দিয়ে ভেঙ্গে পড়েছে ঘরের বেড়া। মাথার ওপর একাধিক ছিদ্রযুক্ত টিনের চালা। তাও রয়েছে ঝূঁকিপূর্ণ। এমনকি অতি জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষ। হালকা বাতাস হলেই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকে যে কোন সময়। এমনই নানা সমস্যা নিয়ে ক্লাস করছে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যেখানে সরকার তৃর্ণমূল পর্যায়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপ করছে।

সেখানে এই বিদ্যালয়টির এমন জরার্জীণ অবস্থার ফলে অভিভাবক ও শিক্ষকরা রয়েছেন আতঙ্কের মধ্যে।শিশুদের নিরাপদে ভেড়ে উঠার জন্য স্কুলটি সংস্কার করার জরুরী বলে জানিয়েছেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। আর জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার বলছে স্কুলের ভবন নির্মানের জন্য ইতিমধ্যে পিডিবি-৪ তালিকা পাঠানো হয়েছে। অচিরেই বিল্ডিং নির্মান করা হবে। ভোলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রতন্ত এলাকায় নির্মিত শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরা টিনসেড ঘরে চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ২৩২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত গড়ে তুলতে মাত্র চারটি শ্রেনী কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাকি তিনটি শ্রেনীকক্ষ কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে সব শ্রেনীর পাঠ কার্যক্রম চালানো হয়। শ্রেনী কক্ষ গুলো টিনের চালায় ফুটো,বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে, দরোজা-জানালা ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতর পানি চলে আসে বৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থীদের বইখাতা ভিজে যায়। ফলে ছুটির ঘন্টাবাজে প্রায় সময়।নেই পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা।

কখনও জোয়ারের পানি এসে শ্রেনী কক্ষ ডুবে যায়। এমন পরিস্থিতে কোমলমতি শিশুরা এক রকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাসে বসতে বাধ্য হচ্ছে। স্কুলের ৫ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, আকাশ, ফারুক, মুক্তা, ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী জুয়েল শরীফুল ইসলাম, রাবেয়া তামান্না সহ আরো অনেক শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের স্কুলে দালান না থাকায় বৃষ্টি আসলে আমরা ঠিকমতো ক্লাশ করতে পারিনা। বই খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় জোয়ার এর পানি এসে আমাদের শ্রেনী কক্ষে পানি উঠে। ফলে আমরা ঠিক মতো স্কুলে ক্লাশ করতে পারিনা। শ্রেনী কক্ষের নেই কোন পরিবেশ, সবসময় স্যাত স্যাতে থাকে। ফলে পাশ্ববর্তী মাদ্রাসায় আমাদের ক্লাশ করতে হয়। এমনকি মাঠে পানি জমে থাকায় স্কুল মাঠে নিয়মিত পিটি ও খেলাধুলা করতে পারিনা।এমনকি শ্রেনী কক্ষে কারেন্ট না থাকা গরমেও ক্লাশ করতে পারিনা।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো: কবির হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত স্কুলটি উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আমাদের স্কুল মাঠে এক জনসভায় এসেছিল। তখন তিনি বলেছিল আমাদের একটা ভবন করে দিবে। কিন্তুু এখন পর্যন্ত আমাদের ভবন হয়নি। তাই মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবী আমাদের সমস্যার কথা চিন্তা করে ভবন নিমার্ন করে দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। স্কুলের আরেকজন সহকারী শিক্ষক নাছিমা আক্তার,স্কুল ভবন না থাকায় ঝুকিঁ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি। স্কুলটি ভবন হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান সহজ হবে।

এছাড়াও কোন প্রাকৃতিক দুযোর্গ হলে স্কুলটি যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে।স্কুলের পরিবেশ নাজুক থাকায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ভবন না থাকায় নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।ফলে প্রায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আর ভবনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আবেদন করেছেন বলে জানিছেন শিক্ষকরা। আর প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর ডিআরএম স্পেশালিস্ট মো: আব্দুর রহিম কাজল জানায়, প্লান ইন্টারন্যাশনাল সহায়তায় একীভূত দুযোর্গ ঝুকিঁ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় আপদ, বিপদাপন্নতাও সক্ষমতা যাচাইকরন প্রকল্পের সার্ভের এর মাধ্যমে আমরা এই স্কুলটিকে ঝুকিঁ পূর্ন হিসাবে চিহ্নিত করেছি। এর মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম এই স্কুলের শিশুদের জন্য মোটেও নিরাপত্তা নেই। তাই শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ভবনসহ নানা অবকাঠামো নির্মান করা জরুরী।

কারন শিক্ষাকে বলা হয় জাতীর মেরুদন্ড। তাই সু-শিক্ষিত জাতী গড়ে তুলতে এই শিশুদের পড়াশোনার পরিবেশ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, বিদ্যালয়টি নতুনভাবে জাতীয়করণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ৩৩ শতাংশ জমির উপর স্কুলটি নিমার্ন করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে ২ শিফটে বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হয়।